সুপ্রভাত ডেস্ক »
প্রস্তাবিত বাজেটকে কেন বাস্তবসম্মত ও বাস্তবায়নযোগ্য বলেছেন, সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, আমরা মনে করছি এই বাজেট বাস্তবসম্মত। এটা উচ্চাভিলাষী বাজেট না। এটা ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বেশি হলে বলতাম এটা উচ্চাভিলাষী বাজেট। কিন্তু এটা সেই বাজেট না। যে কারণে বলেছি, বাজেট বাস্তবসম্মত।
শনিবার (৮ জুন) বেলা পৌনে তিনটায় রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই আইকন ভবনে অনুষ্ঠিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম এসব কথা বলেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের জনগণের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা পূরণে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য বাজেটের এই আকার বাস্তবসম্মত ও বাস্তবায়নযোগ্য বলে মন্তব্য করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম। তবে তিনি বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য সুশাসন ও যথাযথ তদারকি দরকার। বাজেট বাস্তবায়নে দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও তদারকির মান ক্রমাগতভাবে উন্নয়নের জন্য সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা এবং পরিকল্পনা নিশ্চিত করা জরুরি।
মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমরা সরকারের পক্ষেও না, বিপক্ষেও না। আমরা ব্যবসায়ীরা সরকার ও সাধারণ মানুষের মধ্যকার সেতু। কাজেই এখানে আমরা নিজেদের বক্তব্য বলেছি। যেটা প্রয়োজন, সেটা বলেছি।’
কালো টাকা সাদা করার যে বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন যে, ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে এবার এই ধারাটি বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি দুর্নীতিকে আরও উৎসাহিত করছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,একটা হলো কালো টাকা সাদা করা, আরেকটি হচ্ছে ইনফরমাল অর্থনীতি। কেউ যদি মূল পেশার পাশাপাশি অন্য কোনো ব্যবসা করেন, তিনি যদি সেটা আয় হিসেবে ভুলবশত না দেখান, সেটাকে দেখানোর জন্য এই সুযোগ দেয়া হয়েছে। আমাদের ইনফরমাল মার্কেটটা অনেক বড়। সৎ ব্যবসায়ী কিন্তু ভুলবশত কর দিতে পারেননি, সেটা সংশোধনের জন্যই এটা করা হয়েছে।
কর ফাঁকি বের করতে কর কর্মকর্তাদের পুরস্কার দেয়া হয়। এতে আইনের অপপ্রয়োগ হয়। এটার ব্যাখ্যা দাবি করলে মাহবুবুল আলম বলেন, ‘তাদেরকে ডিভিডেন্ট না দিয়ে, অন্যভাবে পুরস্কার দিতে বলেছি। আর একসময় কর ন্যায়পাল ছিল, সেই প্রস্তাবও আমাদের রয়েছে।’
কী করলে মূল্যস্ফীতি কমানো যাবে- এমন প্রশ্নে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘আমরা বলেছি, সেফটি নেট বাড়াতে হবে। ১ কোটি ২৫ লাখ লোককে ডাল-তেল-চিনি ও বিধবা ভাতা দিচ্ছে। এতে মূল্যস্ফীতি কমে যাওয়ার কথা। আমার মনে হয়, ধীরে ধীরে মূল্যস্ফীতি কমে যাবে।’
বাজেটে আগামী অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা পৌনে ৭ শতাংশ আর মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য সাড়ে ৬ শতাংশ ধরা হয়েছে। এ বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে এনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ হবে বলে আমরা মনে করি। মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতেই হবে। তা না হলে সাধারণ মানুষের কষ্ট ও ভোগান্তি বাড়বে।’
আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এই ঘাটতি মেটাতে সরকারকে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা নিতে হবে। এর মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নিতে হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এই বিষয়ে মাহবুবুল আলম বলেন, সরকারকে সুদের বোঝা টানতে হচ্ছে। ব্যাংকব্যবস্থা থেকে অধিক মাত্রায় সরকারের ঋণ গ্রহণ বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। বাজেট-ঘাটতি মেটাতে স্থানীয় ব্যাংকব্যবস্থার পরিবর্তে যথাসম্ভব কম সুদে ও সতর্কতার সঙ্গে বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়নের জন্য নজর দেওয়া যেতে পারে।
এ সংবাদ সম্মেলনে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি আমিন হেলালী, মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।