নিজস্ব প্রতিবেদক»
নগরের বাকলিয়া এক্সেস রোড এলাকায় চসিক মেয়রের ছবি দিয়ে টাঙানো ব্যানারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
এতে মো. সাজ্জাদ (২৬) নামের এক যুবদল কর্মীর মৃত্যু হয়। আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৮ জন। ঘটনাকে ঘিরে চসিক মেয়র দায়ী করছেন সিএমপি বাকলিয়াকে।
সোমবার মধ্যরাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল আলম আশিক।
তিনি বলেন, মো. সাজ্জাদ (২৬) নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তার বুকে গুলির আঘাত রয়েছে। এছাড়া গুলিবিদ্ধ আরও আটজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেনের ছবি দিয়ে টাঙানো একটি ব্যানার সরানো নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা ঘটে। এর একটি পক্ষ মেয়রের অনুসারী যুবদল নেতা বাদশার নেতৃত্বে ছিল বলে জানা গেছে। আর অপর পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন হুমায়ুন-বোরহান গ্রুপ। নিহত সাজ্জাদ নগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কৃত) এমদাদুল হক বাদশার অনুসারী।
বিএনপির দলীয় সূত্র বলছে, এমদাদুল ও নগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী সিরাজ উল্লাহর অনুসারীদের মধ্যে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। গোলাগুলির ঘটনায় জড়িত হিসেবে নাম আসা সিরাজের অনুসারী বোরহানউদ্দিন নগর ছাত্রদলের সাবেক আপ্যায়ন সম্পাদক। তবে তিনি এখন নিজেকে যুবদলের সংগঠক দাবি করে আসছেন। কিন্তু এখন যুবদলের কমিটি নেই।
জিএম সালাউদ্দিন আসাদ নামের এক ব্যক্তি নিজেকে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘যুবলীগের সন্ত্রাসীরা যুবদলের পরিচয় দিয়ে নানা অপকর্ম করছে। মেয়রের ছবি লাগিয়ে তারা ব্যানার পোস্টার ঝুলিয়েছিল। মেয়রের লোকেরা তা খোলার নির্দেশ দিলে আমাদের ছেলেরা ব্যানার খুলতে যায়। তখন তাদের তুলে নিয়ে মারধর করা হয়। পরে উদ্ধার করতে গেলে ভবনের ছাদ থেকে এলোপাতাড়ি গুলি করা হয়। এতে সাজ্জাদ মারা যায়।’
যুবদল নেতা এমদাদুল বাদশা হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তারা এত অস্ত্র কোথা থেকে পেয়েছে? তাদের অস্ত্র উদ্ধার করা হোক। গুলি করার আগে তারা বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়। তারা বিএনপির কেউ নয়; আগে যুবলীগ করত। ৫ আগস্টের পর যুবদলের নাম ব্যবহার করে নানা অপকর্ম করছে।
নিহত সাজ্জাদের বড় ভাই ইমরান বলেন, ‘রাত ২টার দিকে আমার মায়ের মোবাইলে একজন ফোন করে হাসপাতালে যেতে বলেন। খবর পেয়ে আমরা সেখানে গিয়ে সাজ্জাদকে মৃত দেখতে পাই। আমি রাতে বাসায় ছিলাম না, সাজ্জাদ কখন বের হয়েছে সেটা আমার মা জানেন। আমার মা খুব অসুস্থ। তার সাথে এখন কথা বলার অবস্থা নেই।’
নিহত সাজ্জাদের বাবা মো. আলম বলেন, ‘আমার ছেলেকে বন্ধুরা ফোন করে ডেকে নিয়ে গেছে। কী নিয়ে ঝামেলা হয়েছে জানি না। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।
এদিকে ঘটনার বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ইন্ধনে বাকলিয়া থানা পরিচালিত হচ্ছে মন্তব্য করে পুলিশকে দোষারোপ করেছেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একটি প্রকল্প উদ্বোধন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বাকলিয়া থানার যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের গতিবিধি এবং ওসিসহ যারা কর্মকর্তা আছেন; তাদের ব্যাপারে আমার প্রশ্ন আছে। বাকলিয়া থানার ওসিকে আমি কিন্তু বলেছি, বিশেষ করে বোরহান যে ছেলেটা এবং সোহেলসহ ওই ছেলেগুলোকে গ্রেফতার করার জন্য। এক সপ্তাহ বা ১০ দিন আগে বলেছি। আমার মনে হচ্ছে বাকলিয়া থানার দায়িত্বপ্রাপ্তরা আওয়ামী লীগের কোনো না কোনো ঊর্ধ্বতনের পরামর্শে এই থানা চলছে। তাদেরকে গ্রেফতার করার জন্য আমি পুলিশ কমিশনার সাহেবকেও বলেছি। পুলিশ কমিশনার সাহেব ওসিকে বলেছে; কিন্তু ওসি কেন জানি তাদেরকে গ্রেফতার করছে না।’
শাহাদাত আরও বলেন, ‘আমি বলেছি, যদি আমার দলেরও কেউ তাদেরকে শেল্টার দিয়ে থাকে, দরকার হলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নাও। তাকেও গ্রেফতার কর। এটা কিন্তু ওসিকে আমি বলেছি। এই ছেলেগুলোর ব্যপারে আমি স্পষ্ট বলেছি তাদেরকে গ্রেফতার করতে। একদম আমি তাদের নাম ধরে বলেছি। আজকে আমি মিডিয়ার সামনে বলছি। ১০-১২দিন আগে একটি বাসে আমাদেরই যুবদলের ছেলেদের তারা অ্যাটাক করেছিল। তখন কয়েকজন গ্রেফতারও হয়েছিল।’
মেয়র শাহাদাত বলেন, ‘এই যে সুনির্দিষ্ট যে ছেলেগুলোর কথা এসেছে, আমি বলছি অনতিবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করা উচিত। এবং আমাদেরও যদি কেউ থেকে থাকে তাকেও আইনের আওতায় আনা উচিত।’
‘এখানে সন্ত্রাসীদের কোনো দল নাই। আমি বারবার বলছি, এই শহরটাকে নিরাপদ শহর হিসেবে দেখতে চাই। আমি চাই না, এখানে সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের অভয়ারণ্যে পরিণত হোক যুবলীগ- ছাত্রলীগের যেসব ক্রিমিনাল এখানে আছে; এমনকি দক্ষিণ জেলার কিছু ছেলেও এখানে আছে।’
মেয়রের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে জানতে চাইলে বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, ‘আমাকে কেউ বললো গ্রেফতার করতে, আমি কোন ধরনের প্রমাণ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করার অধিকার রাখিনা। মেয়র মহোদয় যদি বলে থাকেন, এখন আমার কিছু বলার নেই। এই পজিশনে বসে মন্তব্য করতে পারছি না।’
তিনি আরও বলেন,‘ব্যানার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত বলে জানা গেছে। গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। আহত আছেন বেশ কয়েকজন। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। রাতের মধ্যে আপনারা তথ্য পাবেন। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’


















































