ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে আজ থেকে শুরু টেস্ট সিরিজ
সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক :
উচ্চতা ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি, ওজন ১৪০ কেজি। রাকিম কর্নওয়ালকে দেখলে সবার আগে নজর কাড়ে তার শারীরিক আকৃতিই। তবে ২২ গজে নামলে তিনি ক্রিকেট স্কিল দিয়েই ভুলিয়ে দিতে বাধ্য করেন অন্য সবকিছু। অফ স্পিনে তিনি দুর্দান্ত, ব্যাট হাতে কার্যকর। আজ বুধবার থেকে শুরু হতে যাওয়া টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকি হতে পারেন এই কর্নওয়াল। খবর বিডিনিউজের।
টেস্টের আগে তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে সেই বার্তা মোটামুটি দিয়ে রেখেছেন কর্নওয়াল। বিসিবি একাদশের বিপক্ষে ম্যাচটির প্রথম ইনিংসে তার শিকার ছিল ৫ উইকেট। নিজের সামর্থ্য তিনি দেখিয়েছেন ছোট্ট টেস্ট ক্যারিয়ারেও। ৩ টেস্ট খেলেই হয়ে উঠেছেন দলের বড় ভরসা।
ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ওজনের ক্রিকেটার তিনি। রেকর্ডে থাকা ওজনের হিসেবে তার আগে সবচেয়ে বেশি ওজন ছিল অস্ট্রেলিয়ার ওয়ারউইক আর্মস্টংয়ের ১৩৯ কেজি। তবে ওজন এত বেশি হলেও বোলিং ফিটনেসে ঘাটতি নেই এতটুকুও। বল করে যেতে পারেন তিনি ক্লান্তিহীন।
অভিষেক টেস্টে ভারতের বিপক্ষে তিনি বোলিং করেছেন ৬৪ ওভার। দ্বিতীয় টেস্টে করেছেন ৪৩.৩ ওভার, তৃতীয় টেস্টে ৪৬ ওভার। গড়ে প্রতি টেস্টে করেছেন ৫১ ওভারের বেশি! প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৬৫ ম্যাচে উইকেট ৩১০টি, গড়ে প্রতি ম্যাচে বোলিং করেছেন ৪০ ওভারের বেশি।
ওভারের পর ওভার এমন বোলিং করতে পারেন তিনি বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই। ছেলেবেলায় তিনি ছিলেন ব্যাটসম্যান। কিছুদিন কিপিংয়ের চেষ্টা করেন। সবশেষে বেশি মনোযোগ দেন স্পিনে। একসময় অবশ্য ক্রিকেট ছেড়ে ইলেকট্রিশিয়ানের কাজও করেছেন। পরে আবার ফেরেন ভালোবাসার আঙিনায়। এগিয়ে যান স্পিনের পথ ধরে।
তার প্রতিভা আর সম্ভাবনার কদর করেই তার জন্য আলাদা পুষ্টিবিদ ও ট্রেনারের ব্যবস্থা করেছে ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যারা বিশেষভাবে দেখভাল করেন তার ফিটনেস, খাওয়া ও পারিপার্শ্বিক অন্য সবকিছুর।
২০১৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যাওয়া ভারতীয় দলের বিপক্ষে একটি প্রস্তুতি ম্যাচে খেলার সুযোগ হয়েছিল কর্নওয়ালের। সেই ম্যাচে বিরাট কোহলিকে বেশ ভুগিয়ে শেষ পর্যন্ত আউট করেন। পাশাপাশি চেতেশ্বর পুজারা, অজিঙ্কা রাহানেদের উইকেটসহ নেন ৫ উইকেট। পরে কোহলি টেস্টের আগে তাকে খবর পাঠিয়ে ডেকে আনেন, নেটে খেলে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য। সেবার কোহলিকে ঘণ্টা পর ঘণ্টা নেটে বোলিং করেন তিনি। ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটে অনেকের ধারণা ছিল, সেবারই টেস্ট অভিষেক হবে তার। তবে নানা কারণে সময় লেগে যায় বেশি।
বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংয়ের ঝলকও তিনি দেখিয়েছেন নানা সময়। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সেঞ্চুরি আছে। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে আছে বিধ্বংসী কিছু ইনিংস, এমনকি ব্যাটিং ওপেনও করেছেন।
তবে বাংলাদেশের জন্য বেশি হুমকি হতে পারে তার বোলিংই। বিশেষ করে, উইকেট যদি স্পিন সহায়ক থাকে। প্রস্তুতি ম্যাচে এমএআজিজ স্টেডিয়ামের মন্থর উইকেটেও দারুণভাবে তীক্ষè টার্ন তিনি আদায় করেছেন। আর উচ্চতা ও হাই আর্ম অ্যাকশনের কারণে বাড়তি বাউন্স তো তিনি সবসময়ই পান।
টেস্ট শুরুর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোচ ফিল সিমন্স বললেন সেই কথাই, ‘যে উইকেটেই খেলুক না কেন, রাকিম (কর্নওয়াল) বাউন্স পাবেই। সে অনেক লম্বা, এজন্যই বাড়তি বাউন্স পায়। আমাদের জন্য এটা অনেক বড় ইতিবাচক দিক।’ প্রস্তুতি ম্যাচের পর অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটও বলেছিলেন কর্নওয়ালের ওপর তার ভরসার কথা।
‘আমি দারুণ মুগ্ধ হয়েছি (কর্নওয়ালের পারফরম্যান্সে)। সে ভালো বল করেছে, ডট বল করে অনেক চাপ সৃষ্টি করেছে। আমি সবসময়ই জানতাম সে দুর্দান্ত এক স্পিনার। এই কন্ডিশনে তাকে দেখে ভালো লাগছে। আমি জানি সে এই টেস্টে ভালো করবে।’
বাংলাদেশ দলের ভাবনায়ও আছেন তিনি। টেস্ট শুরুর আগের দিন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক জানালেন, কর্নওয়ালের জন্য তারা প্রস্তুত। ‘আমরা যথেষ্টই ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করি তাকে ঠিকভাবে সামলাতে পারব।’