সুপ্রভাত ডেস্ক
বাংলাদেশ কিছু অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে এবং এর অগ্রগতিও দৃশ্যমান বলে মনে করছে আন্তর্জতিক মুদ্রা তহবিল – আইএমএফ।
স্বায়ত্তশাসিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির এশিয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশ ওই সময় আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি শুরুর জন্য যোগাযোগ করে এবং আইএমএফও তাতে সাড়া দেয়।
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) রাত ৯টায় যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকে ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শ্রীনিবাসন এসব কথা বলেন। খবর বাংলানিউজ।
শ্রীনিবাসন বলেন, আইএমএফ ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে এবং এর আওতায় বাংলাদেশ কর্মসূচি হাতে নেয়। কর্মসূচির আওতায় তখন বেশ কয়েকটি খাতে সংস্কারকাজ শুরু হয়, যা এখনো চলমান। এরই মধ্যে কিছু অগ্রগতিও দেখা গেছে।
এ সময় তিনি মুদ্রার বিনিময় হার নিয়েও কথা বলেন। বাংলাদেশে তিন ধরনের মুদ্রা বিনিময় হার রয়েছে, এমন প্রশ্ন করা হয় শ্রীনিবাসনকে।
জবাবে আইএমএফের এ শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক এবং একটিই করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। দেশটি গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দামও বাড়িয়েছে। মুদ্রা বিনিময় হার ‘বাজারভিত্তিক এবং একটি’ করার চেষ্টার মানে হচ্ছে টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের একটি দর থাকা। বর্তমানে ১ ডলারের বিপরীতে একাধিক দর রয়েছে।
আইএমএফ গত ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। ইতোমধ্যে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড়ও করেছে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে দেবে ঋণের পুরো অর্থ। সেই হিসাবে বাকি আছে আরও ছয় কিস্তি। আইএমএফের এ ঋণের মধ্যে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণ ৩৩০ কোটি ডলার ও রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ ঋণ ১৪০ কোটি ডলার।
ইসিএফ ও ইএফএফ বাবদ ঋণ নেওয়ার কারণে মোটা দাগে ছয়টি কাজ করতে হবে বাংলাদেশকে। সেগুলো হচ্ছে—কর আদায় বৃদ্ধি, জিডিপির তুলনায় ঋণের পরিমাণ হ্রাস, মুদ্রানীতি কাঠামোর আধুনিকায়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ, ব্যাংক খাতে নজরদারি ও সুশাসন বৃদ্ধি এবং সামাজিক নিরাপত্তা ও অবকাঠামো খাতে ব্যয় বাড়ানো। বাংলাদেশের দেশজ মোট উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নিয়েও ইতিবাচক। গত ১০ এপ্রিল প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকেনমিক আউটলুকে আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আর বাংলাদেশ সরকার প্রবৃদ্ধির নিজস্ব প্রাক্কলন সংশোধন করার পরও মনে করছে বছর শেষে প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে আইএমএফ কেন কম প্রাক্কলন করল, এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রীনিবাসন বলেন, ৫ দশমিক ৫ শতাংশও একেবারে তুচ্ছ নয়। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ শুধু ভারত ও মালদ্বীপের পেছনে রয়েছে। ভারতের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ১ শতাংশের বদলে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশে ফিরে যাবে। আউটলুকে এ কথা বলা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন।