সুপ্রভাত ডেস্ক »
জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের করোনা ভ্যাকসিন তৈরি এবং অন্যান্য দেশে রপ্তানি করার সক্ষমতা রয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর সৃজনশীল অর্থনীতিতে পুরস্কার প্রবর্তনের জন্য ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানাতে সোমবার সংসদে আনা একটি প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সাম্প্রতিক যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সফরে তিনি বিশ্বনেতাদের বলেছেন বাংলাদেশ করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করতে চায় এবং বাংলাদেশকে যেনো এটা করতে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, আমি তাদের বলেছি বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরিতে সব বাধা দূর করতে। এটা সারা বিশ্বের মানুষের অধিকার, এটাকে বিশ্বজনীন কল্যাণ হিসেবে ঘোষণা করা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সুযোগ পেলে ভ্যাকসিন তৈরি করবে। কারণ আমাদের সেই সক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া সরকার ইতোমধ্যে এই উদ্দেশ্যে একটি জমিও বরাদ্দ করেছে।
তিনি বলেছেন, আমরা বিশ্বে ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে পারি।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনা মোকাবিলায় সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেয়েছে।
সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে জাতির পিতার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী ঘটনা প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘৭৫-এর পর আমরা কী দেখেছি? ১৯টা ক্যু হয়েছে। হাজার সেনাবাহিনীর অফিসার ও সৈনিক, বিমান বাহিনীর অফিসার ও সৈনিক এবং সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে, কারাগারে ফেলে রাখা হয়েছে, নির্যাতন চালানো হয়েছে। গুলি-অস্ত্র, দুর্নীতি এটাই ছিল (সে সময়ের) জননীতি। এর বাইরে একটা দেশকে যে উন্নত করা যায় সেদিকে কোনও আন্তরিকতাই আমরা দেখিনি। আমি বাংলাদেশে আসার পর কী দেখেছি— বিজ্ঞান পড়েই না মানুষ, বিজ্ঞানের প্রতি কোনও আগ্রহ নেই, গবেষণা তো ছিলই না। কোনও বিশেষ বরাদ্দও ছিল না।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা পিছিয়ে নেই। আমি ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশের জনগণকে। তারা বারবার আমায় ভোট দিয়েছেন। সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। এক দশকের ভেতরে বাংলাদেশের পরিবর্তন সারা বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে। বাংলাদেশের কাউকে বাইরে গিয়ে কথা শুনতে হয় না।
সংসদ নেতা বলেন, ‘যুব সমাজকে উৎসাহিত করার জন্য… ভালো কাজটা চোখে না দেখলে আমাদের কিছু বলার নেই। আমাদের যে সিআরআই আমরা তৈরি করেছি— আওয়ামী লীগের একটা গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সেখান থেকে ইয়াংবাংলা নামে একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়, যুব সমাজকে উৎসাহিত করতে। তাদের স্টার্টআপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। তাদের এটাও বলা হয়, শুধু চাকরির পেছনে ঘুরবে কেন, চাকরি দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে। নিজের ব্যবসা করবে, নিজেরা অন্যকে চাকরি দেবে। এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে আমাদের সরকারের আমলে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকসহ আমাদের কিছু ইয়াং সংসদ সদস্য, সবাই মিলেই কিন্তু ইয়াংবাংলা স্টার্টআপ প্রোগ্রাম নিয়েছে। এই প্রোগ্রামের জন্য আমরা বিশেষ বরাদ্দও রেখেছি। ছেলেমেয়েরা যদি কেউ উদ্যোগ নিতে চায় আমরা তাদের পাশে দাঁড়াবো। অনলাইনে কেনাবেচা, ই-কমার্স, টেন্ডার- এগুলো তো (ইতোমধ্যে) হয়েছে বাংলাদেশে। সামনে আরও সময় আছে, আরও হবে। এক দিনে তো হয় না, ধাপে ধাপে করতে হয়।
বাংলাদেশের প্রস্তাবে গত বছর ডিসেম্বরে ইউনেস্কো নির্বাহী পরিষদের শরৎকালীন ২১০তম অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক এই পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন অঙ্গনে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর আর্থিক সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন করে থাকে ইউনেস্কো।
গত বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) প্যারিসে প্রথমবারের মতো ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ইন দ্য ফিল্ড অব ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’ পুরস্কার দেওয়া হয়। উগান্ডার ‘মোটিভ ক্রিয়েশন’ নামে একটি সংগঠন এই পুরস্কার পেয়েছে। প্যারিসে ইউনেস্কো সদর দফতরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ পুরস্কার তুলে দেন। পুরস্কার দেওয়া হবে প্রতি দুই বছরে একবার, যার আর্থিক মূল্য ৫০ হাজার ডলার।