সুপ্রভাত ডেস্ক »
ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব নিয়ে অনুমিত পথই অনুসরণ করল বিসিবি। ২০২৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব পেলেন সাকিব আল হাসান। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান শুক্রবার দুপুরে নিজ বাসভবনে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জানান এই সিদ্ধান্ত। এই মাসেই এশিয়া কাপ দিয়ে শুরু হবে সাকিবের নেতৃত্বের নতুন অধ্যায়। খবর বিডিনিউজের।
তবে তিন সংস্করণেই সাকিব অধিনায়ক থাকবেন কি না বা বিশ্বকাপের পরও তাকে ওয়ানডের নেতৃত্বে দেখা যাবে কি না, এই সিদ্ধান্ত তার সঙ্গে আরও আলোচনা করে পরে নেওয়া হবে বলে জানান বিসিবি সভাপতি। দেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্বে আগে থেকেই আছেন ৩৬ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার।
এশিয়া কাপের বাংলাদেশ স্কোয়াড শনিবার ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানান বিসিবি সভাপতি।
বোর্ড সভাপতির সঙ্গে বৈঠকের পর ৩ অগাস্ট ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব ছেড়ে দেন তামিম ইকবাল। এরপর সম্ভাব্য অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের নামই উচ্চারিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। তবে তামিমের অনুপস্থিতিতে এর মধ্যেই ৫টি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেওয়া লিটন দাসকে নিয়েও ছিল আলোচনা। সম্ভাবনা খানিকটা ছিল মেহেদী হাসান মিরাজেরও। শেষ পর্যন্ত বিশ্ব আসরের মতো বড় মঞ্চে সাকিবের অভিজ্ঞতায়ই ভরসা রাখল বিসিবি।
সাকিবের নেতৃত্বে দেশের মাঠে ২০১১ বিশ্বকাপে খেলেছিল বাংলাদেশ। ওই বছরের অগাস্টে জিম্বাবুয়ে সফরের পর তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে ক্যারিয়ারের দীর্ঘ পথচলায় টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব পেলেও ওয়ানডে দলের নিয়মিত অধিনায়কের দায়িত্ব আর পাননি। ২০১৫ সালে দুটি ও ২০১৭ সালে একটি ওয়ানডে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন বটে, তবে তা ছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে। এই ৩৬ বছর বয়সে এসে আবার পেলেন সেই ভার।
এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশকে ৫০ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব। তাতে জয় ২৩টি, পরাজয় ২৬টি। ফলাফল হয়নি একটিতে।
তামিম দায়িত্ব ছাড়ার দুদিন পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিসিবি সভাপতি সরাসরিই বলেছিলেন, পরবর্তী অধিনায়ক হিসেবে সাকিবই ‘অবধারিত’ পছন্দ। তবে এই অলরাউন্ডার দীর্ঘমেয়াদে নেতৃত্ব নিতে চান কি না বা তিন সংস্করণে নেতৃত্ব দিতে কতটা প্রস্তুত, এসব নিয়ে জটিলতার কথাও বলেছিলেন বিসিবি সভাপতি।
এরপর মঙ্গলবার অধিনায়ক ঠিক করার জন্য জরুরি সভায় বসে বিসিবির পরিচালনা পর্ষদ। সেদিনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সভা শেষে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস জানান, বোর্ড পরিচালকদের পক্ষ থেকে বিসিবি সভাপতিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নতুন অধিনায়ক ঠিক করতে।
শেষ পর্যন্ত বোর্ড প্রধানের কাছ থেকেই জানা গেল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
সামনে এখন এশিয়া কাপ, এরপরই বিশ্বকাপ। এত কম সময়ের মধ্যে আমার কাছে মনে হয়েছে, সবচেয়ে সহজ ও অবধারিত পছন্দ সাকিব আল হাসান। আরেকটা অটো চয়েজ আছে। সেটা হলো, ও না খেললে সহ-অধিনায়ক যে আছে, সে হবে। লিটন দাস।’
‘আরও দু-একটি নাম এসেছে, যেমন মেহেদী হাসান মিরাজ। দীর্ঘ মেয়াদে চিন্তা করলে কে হবে, সেই আলোচনা থেকে। কারণ এখন তো ধরেন মুশফিক করছে না, তামিমও ছেড়ে দিল, সাকিবও যদি কখনও ছেড়ে দেয় তখন কী হবে…। ওরকম দীর্ঘ মেয়াদে যখন চিন্তা করব, তখন আরও নাম আসবে। এরকম নাম আসতেই পারে, সমস্যা নেই।’
তবে সাকিবকে তিন সংস্করণেই অধিনায়ক করা বা দীর্ঘমেয়াদে দায়িত্বে রাখা নিয়ে এখনও কিছু সংশয়ের কথা জানান বিসিবি সভাপতি।
‘ওর (সাকিব) সঙ্গে সেরকম আলোচনায় হয়নি। ও দেশে এলে, তারপর বলতে পারব। দীর্ঘ মেয়াদে ওপর পরিকল্পনাটাও জানতে হবে। কারণ একসঙ্গে তিনটা ওর ওপর বোঝা হয়ে যাবে। কারণ যে পরিমাণ খেলা আমাদের, কাজেই ওর সঙ্গে কথা বলে নিতে হবে। ওর সঙ্গে কথা না বলে কিছু বলাটা এখন কঠিন।’
একে তো ও দেশের বাইরে, তার ওপর একটা দলের হয়ে খেলছে। ওখানে ওরও কিছু কমিটমেন্ট আছে, ব্যস্ততা আছে। সেজন্য ওকে বেশি ডিস্টার্ব করতে চাইনি। আজকেও আবার ওর খেলা। তবে মোটামুটিভাবে যেটা আমরা ঠিক করেছি, বিশ্বকাপ পর্যন্ত যে খেলা আছে, এই সময়টায় অবশ্যই সাকিব আল হাসান অধিনায়ক। ওর সঙ্গে কথা বলে ঠিক করব যে, এটা কী দীর্ঘ মেয়াদি নাকি তিনটাই থাকবে নাকি দুটি থাকবে নাকি একটি, এগুলো ও দেশে এলে কথা বলে ঠিক করব।’
সাকিব এখন লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে খেলছেন গল টাইটান্সের হয়ে।
সাকিবকে নিয়ে আগে বোর্ড সভাপতির একটি সংশয় ছিল বলে জানালেন নিজেই। এখন তা দূর হয়ে গেছে বলেই নিশ্চিত করলেন তিনি।
‘ওর পটেনশিয়াল নিয়ে তো কোনো সন্দেহ নেই। একটা জিনিস খুব ভালো লাগছে আমার, সাম্প্রতিক সময়ে… গত এক বছর ধরে দেখছি… সেটা হচ্ছে, সাকিবের ব্যাপারে আমার যে সন্দেহ ছিল, এটা আমার ব্যক্তিগত কথা, ও কতটা সিরিয়াস, কোন খেলাটা খেলবে কিংবা খেলবে নাৃ এখন দেখছি ওর চেয়ে সিরিয়াস কেউ নেই, ক্রিকেট নিয়ে।
আমাদের যে পরিমাণ খেলা, সেগুলো তো খেলছেই, নিয়মিত খেলে যাচ্ছে। কানাডায় গেল, এখন আবার শ্রীলঙ্কায় গেল। এই যে এখন বিশ্বকাপে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব, আমার কাছে মনে হয়, সে এখন টোটালি ফোকাসড অন ক্রিকেট। এটা আমাদের জন্য খুব বড় বিষয়। ওর সামর্থ্য ও সম্ভাবনা নিয়ে কখনও কারও সন্দেহ থাকার প্রশ্নই ওঠে না।
সব ঠিকঠাক থাকলে বাংলাদেশের দ্বিতীয় অধিনায়ক হিসেবে দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেবেন সাকিব। তার আগে মাশরাফি নেতৃত্ব দিয়েছেন ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপে।