বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে বৈঠক আজ

সীমান্ত পরিস্থিতি গুরুত্ব পাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »

বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে রোববার সকালে ১০ দিকে কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার পর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার।

তিনি জানান, কক্সবাজারের টেকনাফে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র সঙ্গে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)’র ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে এ পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

শেখ খালিদ বলেন, গত আড়াই মাস ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান গোলাগুলিকে কেন্দ্র করে সীমান্তে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এতে বাংলাদেশ সীমান্তের বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন। সীমান্তের এ পরিস্থিতি নিয়ে শুরু থেকে দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে নানা পর্যায়ে যোগাযোগ চলছিল। একাধিকবার বিজিপির কাছে চিঠি পাঠানোও হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছে।

তবে পতাকা বৈঠকটি সীমান্তের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠানের তথ্য জানালেও এতে আরও কি কি বিষয়ে আলোচনা হবে এবং দু’দেশের কতজন করে সদস্য অংশ নেবেন তা বিস্তারিত জানাননি বিজিবির এ কর্মকর্তা।

জানা গেছে, সীমান্তে উত্তেজনার রেশ শুরু হয় চলতি বছরের আগস্টে। প্রথমে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে শুরু হয় ব্যাপক গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণ। এর মধ্যে ২৮ আগস্ট মিয়ানমারে ছোড়া দুটি মর্টার শেল এসে পড়ে বাংলাদেশের ভূখ-ে। তবে বিস্ফোরিত না হওয়ায় কেউ হতাহত হয়নি।

এরপর ৩ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যুদ্ধ বিমান থেকে ছোঁড়া আরও দুটি মর্টার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়ে। একইদিন বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষে উড়ে যায় মিয়ানমারের যুদ্ধ বিমান ও ফাইটিং হেলিকপ্টার। যার কারণে সীমান্তের বাসিন্দাদের মধ্যে বাড়ে আতঙ্ক।

ধারাবাহিকভাবে চলে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি ও গোলাবর্ষণ। এর মধ্যে ১৬ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) আবারও বাংলাদেশে অভ্যন্তরে এসে পড়ে আরও কয়েকটি মর্টার শেল। যার মধ্যে শূন্যরেখায় মর্টার শেল বিস্ফোরিত হয়ে মারা যায় এক রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং আহত হয় আরও ৬ জন। যার কারণে সীমান্তের বাসিন্দারা অনেকেই বসতি ছেড়ে আশ্রয় নেন স্বজনদের বাড়িতে। সীমান্তে বার বার এমন কর্মকা-ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত ডেকে কয়েক দফায় কড়া প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ।

তুমব্রু সীমান্তে গোলাগুলি ও গোলা বর্ষণ বন্ধ হতেই নতুন করে উখিয়ার পালংখালী সীমান্তে শুরু হয় গোলাগুলি ও গোলা বর্ষণ। তারপর নতুন করে আতঙ্ক শুরু হয় টেকনাফ সীমান্তে। এভাবে সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে থেমে থেমে চলতে থাকে গোলাগুলি ও গোলা বর্ষণ।

এরই মধ্যে চলতি মাসের ১০ অক্টোবর (সোমবার) পরিস্থিতি দেখতে সীমান্তে আসেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ। সীমান্ত পরিদর্শনের পাশাপাশি দেখেন বিজিবি কার্যক্রম। ওইসময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, প্রতিবাদলিপি পাঠানোর পাশাপাশি বিজিপির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।

বিজিবির মহাপরিচালক আরও জানিয়েছিলেন, সময় নির্ধারণ না হলেও পতাকা বৈঠকে সম্মত হয়েছে মিয়ানমার। তারপর চলতি মাসের ২৩ অক্টোবর নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নতুন করে শুরু হয় ব্যাপক গোলাগুলি ও গোলা বর্ষণ। যা দু’দিন থেমে থেমে অব্যাহত থাকে। তবে এরপর থেকে আর শোনা যায়নি গোলাগুলির শব্দ।

এর মধ্যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতে সীমান্তে উত্তেজনার প্রেক্ষিতে অবশেষে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকে সম্মত হয় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি। পতাকা বৈঠকের জন্য রোববার মিয়ানমার প্রতিনিধি দল কক্সবাজারের টেকনাফে আসবেন।