বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে বাইসাইকেল রপ্তানির দ্রুত উত্থান

বিশ্বের বাজারে বাংলাদেশে তৈরি সাইকেলের সম্ভাবনা দ্রুত বাড়ছে

সুপ্রভাত ডেস্ক »

বাংলাদেশ থেকে রপ্তানির ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরে যে কয়েকটি শিল্প বেশ তাক লাগিয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বাইসাইকেল।

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে ধারাবাহিকভাবে বাইসাইকেলের রপ্তানি বেড়েছে।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের বাইসাইকেল এখন বেশ সমাদৃত। ব্রিটেন, জার্মানি, ডেনমার্ক এবং অস্ট্রিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এসব সাইকেল রপ্তানি হচ্ছে।

তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে ব্রিটেন এবং জার্মানি।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলো থেকে যত সাইকেল আমদানি করা হয় তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসেব মতে ২০১৯-২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে বাই সাইকেল রপ্তানি করে ৯৭ মিলিয়ন ডলার আয় হয়েছিল।

২০২০-২০২১ সালে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ১৩০ মিলিয়ন। এছাড়া ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে সেটি বেড়ে ১৪০ মিলিয়ন ডলার হয়।

বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা বলছেন, ইউরোপের বাজারে যেসব বাইসাইকেল রপ্তানি করা হয় সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশি মুদ্রায় সর্বোচ্চ দাম এক লাখ বিশ হাজার টাকা থেকে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত রয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি বাড়ছে কেন?

বাহন হিসেবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাইসাইকেল এমনিতেই পছন্দ করেন অনেকে। একদিকে স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে এবং অন্যদিকে পরিবেশ-বান্ধব – এ দুটো কারণে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সাইকেলের চাহিদা বাড়ছে।

ইউরোপের দেশগুলো একসময় বাইসাইকেল বেশি আমদানির করতো চীন থেকে। কিন্তু চীন থেকে আমদানি করা বাইসাইকেলের উপর ব্যাপকহারে শুল্ক আরোপ করে ইউরোপের দেশগুলো ১৯৯৩ সাল থেকে।

এই শুল্ক হার প্রায় ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত। এছাড়া ২০১৩ সাল থেকে উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করা হয় ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, কম্বোডিয়া, ফিলিপিন থেকে আমদানি করা সাইকেলের উপর।

এর ফলে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যায় বাংলাদেশের জন্য।

বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের বাজারে সাইকেল রপ্তানি করে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ।

প্রতিষ্ঠানটির মার্কেটিং ডিরেক্টর কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ইউরোপের দেশগুলোতে বেশিরভাগ বাইসাইকেল আমদানি হতো চীন থেকে।

“চীনের সাথে তাদের বাণিজ্যিক বিরোধের কারণে আমাদের জন্যে এই সুযোগ বেশি তৈরি হয়েছে,” বলেন মি. কামাল।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে প্রতিবছর প্রায় দুই কোটির মতো সাইকেল বিক্রি হয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান বিষয়ক অফিস ইউরোস্ট্যাট এর হিসেব অনুযায়ী ২০২১ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো পঞ্চাশ লাখ বাইসাইকেল আমদানি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশ থেকে।

এর মধ্যে ইউরোপ বাংলাদেশ থেকে আট শতাংশ সাইকেল আমদানি করেছে বলে ইউরোস্ট্যাট তথ্য দিয়েছে।

রপ্তানি আরো বাড়বে?

ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বাইসাইকেলের ডিজাইন পাঠানো হয় বাংলাদেশের কোম্পানিগুলোকে। তারপর সে ডিজাইন অনুযায়ী সাইকেল বানিয়ে ইউরোপে রপ্তানি করা হয়।

ইউরোপে বর্তমানে যত সাইকেল বিক্রি হয় সেটির সংখ্যা আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে ইউরোপিয়ান সাইক্লিস্ট ফেডারেশন বলছে, ২০৩০ সাল নাগাদ ইউরোপে প্রতিবছর তিন কোটি সাইকেল বিক্রি হবে।

অর্থাৎ এখন যা বিক্রি হচ্ছে তার চেয়ে আরো এক কোটি বেশি বিক্রি হবে।

বাংলাদেশের জন্য এটি আরো বেশি সুযোগ তৈরি করতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের মার্কেটিং ডিরেক্টর কামরুজ্জামান কামাল বলেন, “প্রতিবছর এ চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে এবং আমাদের রপ্তানিও বাড়ছে।”

বিশ্বব্যাংকের ব্লগে প্রকাশিত এক লেখায় বলা হয়েছে, ২০২২ সাল নাগাদ বিশ্বে বাইসাইকেলের বাজার দাঁড়াবে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলারে। তৈরি পোশাক শিল্পের বাইরে সাইকেল রপ্তানি করে বৈচিত্র্য আনতে পারে বলে মন্তব্য করা হয়েছে এই ব্লগে।

এই ব্লগে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে বাইসাইকেল রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে অষ্টম।

সূত্র : বিবিসি বাংলা