সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সোনাকানিয়া ও বড়হাতিয়া বনের প্রায় আড়াই হাজার একর বনভূমি জবর দখল করে কৃত্রিম হ্রদ তৈরি করে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। অবৈধ এ লেকে মাছ চাষ করা হয়েছিল। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে এ লেক নির্মাণ করা হয়। লেকটি তৈরি করা হয়েছে সরকারি বনের ভেতরে সোনাকানিয়া নামের একটি ছড়ায় বাঁধ দিয়ে। বাঁধের দৈর্ঘ্য ২০০ ফুট, প্রস্থ ২০ ফুট ও উচ্চতা ১০০ ফুট।
বন বিভাগের দাবি, কৃত্রিম লেক তৈরির কারণে গামারি, সেগুন, চিকরাশি, অর্জুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় প্রায় পাঁচ লাখ গাছ মারা গেছে। লেকে ডুবে যাওয়া জায়গার মধ্যে বন্য হাতির চলাচলের পথ ছিল। খ্যাঁকশিয়াল, শজারু, বন্য শূকর, বনমোরগ, ময়ূর, গুইসাপ, অজগরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণি এবং নানা প্রজাতির পাখি বাস করত। হঠাৎ কৃত্রিম লেকের কারণে এ জীব বৈচিত্র অনেকটা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, বাঁধ দিয়ে লেক সৃষ্টির কারণে ছড়ার পানি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে লোহাগাড়া ও সাতকানিয়ার ৪ হাজার ২৫৫ একর জমির চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে।
বনের আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা বলেন, লেকে শুষ্ক মৌসুমে পানির গভীরতা থাকে ৪৫ ফুট আর বর্ষায় গভীরতা বেড়ে প্রায় ৬০ ফুট পর্যন্ত হয়। সেখানে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করা হয়। লেকে নিয়মিত বড়শি প্রতিযোগিতার নামে চলত মূলত জুয়া। স্থানীয় সূত্র বলছে, লেক তৈরির সঙ্গে জড়িতরা মূলত সেখানে অবৈধভাবে একটি বড় পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিলো।
এই সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার পর বন বিভাগ তড়িঘড়ি করে লেকের বাঁধটি কেটে দেয়। তাতে নতুন করে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন স্থানীয়রা। হঠাৎ করে ঘোষণা ছাড়া ওই বাঁধ কেটে দেয়ায় শীতের রাতে পানিতে ভেসে গেছে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা, অর্ধশতাধিক মাটির ঘর সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। পানির প্রবল তোড়ে উপজেলার সোনাকানিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র মির্জাখীল বাংলাবাজার পুরোটাই পানির নিচে তলিয়ে যায়। পানির প্রবল স্রোতে ১টি স্লুইসগেট ভেঙে গেছে। এমন আকস্মিক পানির স্রোতে বিপুল পরিমাণ জমির ধানের চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, রাতে লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়ার পর পশ্চিমের পাহাড় থেকে বাঁধের পানিতে পার্শ্ববর্তী সাতকানিয়ার সাইরতলী, তাঁতীপাড়া ডুবে যায়। এরপর একে একে কুতুবপাড়া, মঙ্গলচাঁদ পাড়া পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। এই পানি একসময় এসে পৌঁছায় সোনাকানিয়ার মির্জাখীল গ্রামে। মির্জাখীল বাংলাবাজার ব্যবসায়ীদের প্রচুর মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে বাংলাবাজারের ভাসমান দোকানিদের পণ্যসামগ্রী মুহূর্তেই পানিতে ভেসে যায়।
সোনাকানিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীন সুপ্রভাত প্রতিনিধিকে জানান, বিনা নোটিশে বাঁধের পানি ছেড়ে দেয়ার কারণে ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ও সাড়ে ৩ শতাধিক বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবজিক্ষেত, পুকুরের মাছ, রাস্তাঘাট, বাজারসহ ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ না করে উপায় নেই। বন দখল করার সময় তারা নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে আবার ক্ষমতার পালাবদলের সুযোগে রাতারাতি বাঁধটি কেটে চরম বোকামির পরিচয় দিয়েছে বন বিভাগ। বাঁধ কাটার আগে তাদের ভাবা উচিত ছিল এত পানি হঠাৎ ছেড়ে দিলে কী পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এটা অত্যন্ত সাধারণ জ্ঞানের ব্যাপার। এরজন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ারও প্রয়োজন নেই। এখন এত মানুষকে কষ্টে ফেলা এবং এত সম্পদ বিনষ্টের দায় কে নেবে? আমরা মনে করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ মামলা করা উচিত।
এ মুহূর্তের সংবাদ