বস্তিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে ব্যবস্থা নিতে হবে

বস্তিতে বাস করা অর্ধেক পরিবার খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটায়। প্রায় ৫০ শতাংশ শিশু খর্বাকৃতির। ৮০ শতাংশ প্রসূতি ক্যালসিয়াম স্বল্পতায় ভোগে। এসব তথ্য উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) রাজধানীর বাউনিয়াবাদ বস্তিবাসীদের পুষ্টি পরিস্থিতি নিয়ে করা এক গবেষণায়।
গত সোমবার সকালে আইসিডিডিআরবির একটি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, ঢাকা শহরে প্রায় পাঁচ হাজার বস্তি আছে। এসব বস্তিতে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের বাস। প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করেন ৫০ হাজার মানুষ। ৮০ শতাংশ পরিবার এক কক্ষের ঘরে থাকে। ৯০ শতাংশ পরিবার টয়লেট ও সরবরাহ করা পানি ভাগাভাগি করে। ৯১ শতাংশ পরিবার কোনো না কোনোভাবে ঋণগ্রস্ত।
এর প্রধান গবেষক মোস্তফা মাহফুজ বলেন, বস্তির প্রসূতি নারীরা প্রয়োজনের চেয়ে ৩১৪ শতাংশ বেশি শর্করা খান। গর্ভবতীদের ৮০ শতাংশ ক্যালসিয়াম, ৭৮ শতাংশ ভিটামিন এ, ৫৮ শতাংশ লৌহ এবং ৪৪ শতাংশ জিংক স্বল্পতায় ভুগছেন। অন্যদিকে শিশুদের ৫৯ শতাংশ রক্তস্বল্পতায় ভুগছে। শিশুদের ২৭ শতাংশের উচ্চতা ও ২০ শতাংশের ওজন কম।
আইসিডিডিআরবির গবেষকরা এই বস্তির প্রসূতি নারী, কিশোরী ও দুই বছরের কম বয়সী শিশু- এই তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে একীভূত সেবা প্যাকেজ চালু করে। এই প্যাকেজের আওতায় পুষ্টিবিষয়ক পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন এ দেওয়া হতো। এ ছাড়া ওজন, রক্তচাপ, রক্তে হিমোগ্লোবিন ও শর্করা নিয়মিত মাপা হতো। এর পাশাপাশি বস্তিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ ও প্রচারণা চালানো হয়।
অনুষ্ঠানে মোস্তফা মাহফুজ বলেন, গবেষণার আওতাধীন প্রসূতি নারীদের ওজন বেড়েছে, হাসপাতালে প্রসবের হার বেড়েছে। পাশাপাশি গর্ভপাত ও নবজাতকের মৃত্যু কমতে দেখা গেছে। কিশোরীদের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়তে দেখা গেছে। অন্যদিকে শিশুদের উচ্চতা ও ওজন বেড়েছে।

শহরের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষ বস্তিতে বাস করে। স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের মাঝখানে থাকা বস্তিবাসী নানা সেবা থেকে বঞ্চিত। বস্তির মানুষের জীবনমান খারাপ। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০২১ সালের নভেম্বরে গবেষণা শুরু করেন গবেষকরা। এখানে ১৬ হাজার ৫৩২টি পরিবারে ৬০ হাজার ৭৮৬ মানুষ থাকে। গবেষণায় ৭২১ জন প্রসূতি নারী, ৪ হাজার ২৩৪ কিশোরী এবং দুই বছরের কম বয়সী ২ হাজার ৪৯৭ শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নিউট্রি-ক্যাপ নামে এ গবেষণাকাজ শেষ হয়েছে এ বছরের মে মাসে।
১৯৭৪ সালে প্রথম আদমশুমারি অনুযায়ী ঢাকার জনসংখ্যা ছিল মাত্র ১৬ লাখ। ৫০ বছর পর এখন তা প্রায় দুই-আড়াই কোটিতে পরিণত হয়েছে। সে শুমারীতে চট্টগ্রাম নগরের লোকসংখ্যার সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও আন্দাজ করা হয় তিন লাখের মতো।একদিকে উন্নত জীবনের আশা, অন্যদিকে নদীভাঙন, খরা, মঙ্গাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে বসতি হারিয়ে প্রতিনিয়ত গ্রামীণ এলাকার মানুষ ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো শহরে অভিবাসী হচ্ছে। ফলে তৈরি হচ্ছে ঘিঞ্জি দালানকোঠা। বাড়ছে ভিড়, শব্দদূষণ, যানজট, বায়ুদূষণ, মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণসহ নানাবিধ সমস্যা। বাসযোগ্য ও নিরাপদ আবাসস্থলের নিশ্চয়তার ব্যবস্থা সরকারের থাকলেও বিভিন্ন সময় সরকার সাধারণ মানুষের জন্য সাশ্রয়ী আবাসনের ব্যবস্থা যেমন করতে পারেনি; একইভাবে বস্তিবাসীর জন্যও দিতে পারেনি বসতির নিশ্চয়তা।

আর এভাবে জনসংখ্যার বিশাল একটি অংশকে বঞ্চিত রেখে সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।