ব্যবসায়ীদের মতে ধানের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে চালে #
সালাহ উদ্দিন সায়েম :
এক মাস আগে পাইকারি বাজারে স্বর্ণা সিদ্ধ চালের বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) দাম ছলি ১৪০০ টাকা। সেই চালের দাম এখন ২ হাজার ২০০ টাকা। সপ্তাহ খানেক আগে বস্তা প্রতি ২৩০০ টাকা দামে বিক্রি হওয়া জিরাশাইল সিদ্ধ চাল এখন বস্তা প্রতি বেড়েছে ৩০০ টাকা। শুধু স্বর্ণা ও জিরাশাইল নয়, পাইকারিতে সব ধরনের চালের দাম বস্তা প্রতি বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।
পাইকারি বাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। নগরীর খুচরা বাজারে মোটা চাল থেকে শুরু করে সব ধরনের চালের দাম কেজি প্রতি চার থেকে ছয় টাকা বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ।
চাক্তাই ও পাহাড়তলী বাজারের চাল ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পাইকারি দামে প্রতিবস্তা নাজিরশাইল ২ হাজার ৮০০ টাকা, মিনিকেট সিদ্ধ ১ হাজার ৯০০ টাকা, মিনিকেট আতপ ২ হাজার ৩০০ টাকা, কাটারিভোগ আতপ ৩ হাজার টাকা, দিনাজপুরী পাইজাম ১ হাজার ৯০০ টাকা, চিনিগুঁড়া ৫ হাজার টাকা এবং মোটা সিদ্ধ ২ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব চাল আবার খুচরা বাজারে গিয়ে বস্তা প্রতি বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।
বৃহস্পতবিার নগরীর চৌমুহনী কর্ণফুলী মার্কেটে চাল কিনতে আসা তোবারক আলী বলেন, গত সপ্তাহে মিনিকেট চাল কিনেছি ৪৩ টাকা কেজি দরে, আর এখন কিনতে হচ্ছে ৪৮ টাকা দরে। প্রতিকেজিতে বাড়লো ৫ টাকা। এনিয়ে গত একমাসে ৮টাকা বাড়লো। আর কত বাড়বে চালের দাম?’ একই মার্কেটের চাল বিক্রেতা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা পাইকারি থেেক যে দামে চাল কিনি, তার কিছুটা লাভ রেখেই বিক্রি করি। চালের মূল্য নির্ভর করে পাইকারি ব্যবসায়ী ও মিল মালিকদের ওপর।’
দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম সুপ্রভাতকে বলেন, এবছর ধানের দাম বেড়েছে। আগে যে ধানের মন ছিল ৭০০ টাকা, এখন তা এক হাজার টাকা। ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই চালের দাম বেড়েছে।
অপরদিকে চালের দাম বাড়ার পেছনে পাহাড়তলী চাল ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. জাফর আলম জানালেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন,‘সরকার এ বছর কৃষকদের থেকে ন্যায্য মূল্যে ধান ও চাল কেনার কারণে চালের দাম বেড়েছে।’
জানা গেছে, খাদ্য বিভাগ চলতি বোরো মৌসুমে ২৬ এপ্রিল থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কৃষকদের কাছ থেকে ৬ লাখ মেট্রিক টন বোরো ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া খাদ্য অধিদপ্তর মাঠ পর্যায় থেকে ১০ লাখ মেট্রিক টন বোরো সিদ্ধ চাল এবং একই সময়ে দেড় লাখ মেট্রিক টন বোরো আতপ চাল সংগ্রহ করবে।
খাদ্য বিভাগ বাজার থেকে কিনছে ইরি সিদ্ধ বেতি আতপ চাল। কিন্তু বাজারে অন্য চালের দামও বেড়ে গেছে। এর কারণ জানতে চাইলে পাহাড়তলী চাল ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. জাফর আলম কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে ত্রাণের জন্য সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ে চাল কেনার কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম বেড়েছে।’ জানা যায়, চট্টগ্রামের চাক্তাই ও পাহাড়তলী পাইকারি বাজারে নওগাঁ, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া ও বগুড়া থেকে বেশিরভাগ চাল আসে।
চট্টগ্রামের বাজারে চালের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর চট্টগ্রামের সহকারী পরচিালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘ইতিমধ্যে বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে এবং তা মনিটরিং করছি।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উত্তরাঞ্চল থেকে এখানে চাল আসে চট্টগ্রামে। দামের বিষয়ে উত্তরাঞ্চলে চালের মোকামে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। মোকামে চালের দাম কম হলে এখানকার বাজারে অভিযানে নামবো।’