সুপ্রভাত ডেস্ক :
কয়েকটি টুইট উসকে দিয়েছে ইন্ডাস্ট্রির অন্দরের সমীকরণ। সুশান্ত সিংহ রাজপুতের আত্মহত্যার নেপথ্যে সেটাও কি বড় কারণ? গলায় ফাঁসের জেরে শ্বাসরোধ হয়েই মৃত্যু হয়েছে অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের। সোমবার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী মুম্বাই পুলিশ মৃত্যুর নিশ্চিত কারণ জানিয়েছে। রোববার দুপুরে অভিনেতার বান্দ্রার ডুপ্লেতে উদ্ধার হয়েছিল তার ঝুলন্ত দেহ। যদিও এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর পিছনে খুনের ষড়যন্ত্রকে এখনই নস্যাৎ করতে চাইছে না অভিনেতার পরিবার।
এ দিন সকালে মুম্বই এসে পৌঁছান অভিনেতার বাবা ও পরিবারের অন্যরা। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ ভিলে পার্লের পবন হংস শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় সুশান্তের। মুম্বইয়ের বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেও তার শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন ইন্ডাস্ট্রির সহকর্মীরা। ছিলেন পরিচালক অভিষেক কপূর, রাজকুমার রাও, শ্রদ্ধা কপূর, তাহির রাজ ভাসিন, প্রতীক বব্বর, বরুণ শর্মা প্রমুখ। এসেছিলেন রণবীর শোরে, বিবেক ওবেরয়, একতা কপূর, কৃতী শ্যানন, মুকেশ ছাবরা এবং রিয়া চক্রবর্তীও।
রবিবার সুশান্তের মৃত্যুসংবাদ প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া ভরে গিয়েছিল শোকবার্তায়। ইন্ডাস্ট্রির নামী-অনামীর ভার্চুয়াল বার্তার মিছিলে নজর কেড়েছিল কর্ণ জোহরের পোস্ট। সুশান্তের মৃত্যুর দায় তিনি নিজের কাঁধেও খানিক নিয়েছিলেন। পোস্টের জন্য কর্ণ ট্রোলড হয়েছেন। তবে তার অজান্তেই পোস্টটি উসকে দিয়েছে গম্ভীর প্রশ্ন, কর্ণের অপরাধবোধের কারণ কী?
এই প্রশ্নের উত্তর মেলার আগেই সোমবার দুপুরে পরিচালক শেখর কপূরের করা একটি টুইট ওই প্রশ্নচিহ্নকে আরও জোরালো করেছে। সুশান্তের উদ্দেশে শেখর টুইটে লিখেছেন, ‘আমি জানি, কাদের জন্য তোমার এই হতাশা… গত ছ’মাসে যদি তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতাম… যা হয়েছে সেটা ওদের কর্মফল, তোমার নয়…’ নাম উহ্য থাকলেও, শেখরের পোস্ট ইশারা করছিল বলিউডের অন্দরের কোনও গোপন সত্যির দিকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ইঙ্গিতকে জনসমক্ষে তার নিজস্ব ভঙ্গিতে তুলে ধরলেন কঙ্গনা রানাউত। একটি ভিডিয়োয় কঙ্গনার বিস্ফোরণ, বলিউডের ইতিহাস লিখতে যারা উচ্চাকাক্সক্ষী, তারা দুর্বলচিত্ত হিসেবে সুশান্তকে দেখাতে চায়। ‘গাল্লি বয়’-এর মতো খারাপ ছবি পুরস্কৃত হয়। এ দিকে ‘ছিছোরে’র জন্য সুশান্তকে সম্মান দেওয়া হয়নি। তবে সুশান্তের ভুল, ওকে যারা প্ররোচিত করেছে, ও তাদের কথা মেনে নিয়েছে…।’ অভিনেত্রীর যুক্তি, এটা পরিকল্পিত খুন নয়? আবার কঙ্গনার উল্টো মেরুতে সোনম কপূরের অবস্থান। তার টুইট, ‘একজনের মৃত্যুর জন্য তার বান্ধবী, প্রাক্তন বান্ধবী, সহকর্মীদের দায়ী করা জঘন্য কাজ।’
গত কয়েক মাসে নিজের স্বপ্ন-আকাক্সক্ষার সঙ্গে বাস্তবকে মেলাতে পারছিলেন না সুশান্ত। তার শেষ ইনস্টাগ্রাম পোস্টে তা স্পষ্ট। কেরিয়ারে সাফল্য পেলেও, বলিউডের মতো লাভ-সর্বস্ব ইন্ডাস্ট্রির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি হয়তো অভিনেতার মানসিকতায় বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল। শোনা গিয়েছে, কেরিয়ারের শুরুর দিকে যশ রাজ ফিল্মসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকায় তার হাতছাড়া হয়েছিল সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর ‘রামলীলা’। সঞ্জয় নিজেই নাকি যশ রাজের কাছে অভিনেতাকে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু সুশান্তকে ছাড়া না হলেও, তখন যশ রাজের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ রণবীর সিংহকে ছবিটি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এর পরে আদিত্য চোপড়ার পরিচালনায় ‘বেফিকরে’ ছবিটি করার কথা ছিল সুশান্তের। কিন্তু তা চলে যায় রণবীরের (সিংহ) কাছে। যশ রাজ ফিল্মসের তরফে সুশান্তকে দেওয়া হয় ‘পানি’ নামে একটি ছবি, যার পরিচালনা করার কথা ছিল শেখর কপূরের। রোববারের পোস্টে এই ছবির কথা উল্লেখ করেছেন শেখর। কিন্তু বছর দুয়েক পরে প্রজেক্টটি স্থগিত করে দেয় যশ রাজ। পর্যায়ক্রমিক ভাবে এই ঘটনাগুলি হওয়ার পরে আদিত্যের সঙ্গে সুশান্তের মনোমালিন্য বাড়তে থাকে বলে শোনা যায়। যার জেরে সুশান্তকে মাশুল দিতে হয় বলে ইন্ডাস্ট্রির একাংশের ধারণা। বিগত বছর দেড়েক তাকে কোনও ফিল্মি পার্টিতে আমন্ত্রণ করা হত না।
অন্য দিকে কর্ণ জোহরের প্রযোজনায় সুশান্ত অভিনীত ‘ড্রাইভ’ নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায়। তবে ছবির ডিজিটাল রিলিজ প্রসঙ্গে সুশান্তকে জানানো হয়নি। আদিত্যের সঙ্গে ঝামেলার সময়েই কর্ণের সঙ্গেও নাকি দূরত্ব বাড়ে সুশান্তের।
ছবি পাওয়া, ছবির হস্তান্তর, বড় ব্যানারের চোখের মণি হওয়া… ইন্ডাস্ট্রির হিসেবনিকেশের অঙ্কের মাঝে প্রতিভার জোরেই জায়গা করেছিলেন সুশান্ত। তবে নামী প্রযোজনা সংস্থায় নাম টিকিয়ে রাখতে হয়তো আপস করতে চাননি। যার জন্যই ভক্তদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার ছবি না দেখলে ওরা আমাকে তাড়িয়ে দেবে। তোমরাই তো আমার গডফাদার…’।
খবর : আনন্দবাজার’র।
বিনোদন