বড় ধরনের জলাবদ্ধতার শঙ্কা ব্যবসায়ীদের

স্থবির চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ

রাজিব শর্মা »

টানা কয়েকদিনের মাঝারি বর্ষণ ও জোয়ারে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জসহ আশপাশের স্থানগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। সেখানের ভোগ্যপণ্যের বড় মোকামগুলোর সঙ্গে নৌ ও সড়ক পথে ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অন্যান্য দিনের তুলনায় গত তিনদিন ধরে বিক্রি কমেছে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ। শুধু ভোগ্যপণ্য নয়, অন্যান্য ব্যবসায়ও একই রকম প্রভাব পড়েছে। আর জোয়ারের পানির কারণে বিপাকে পড়েছেন পচনশীল পণ্য গুদামজাতকারী ব্যবসায়ীরা। মাঝারি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার অবস্থা এমন হলে, আগামিতে ভারি বর্ষণ ও জলাবদ্ধতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা।

বুধবার থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত দেখা যায়, মাঝারি বৃষ্টিপাত ও জোয়ারের পানিতে ডুবেছে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের বেশ কিছু এলাকা। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে মধ্য চাকতাইয়ের ভাঙ্গাপুল, চালের মার্কেট, রাজাখালি রোড, আছাদগঞ্জ, কোরবানিগঞ্জ, ময়দার মিল, খালের পাড় এলাকায় বেশকিছু চাল ও পচনশীল পণ্য আদা, পেঁয়াজ ও রসুনের আড়তে পানি ঢুকে পড়ে। নষ্ট হয় ব্যবসায়ীদের লক্ষ লক্ষ টাকার ভোগ্যপণ্য। এছাড়া বৃষ্টি ও জোয়ারের পানির সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে এ ক’দিন ক্রেতারাও তেমন আসেননি মোকামে। এমনকি আবহাওয়ার পরিস্থিতি অনূকুলে না থাকায় অনেক ব্যবসায়ী তাদের মালামাল নৌপথে পাঠাতে পারছে না দেশের উপকূলবর্তী স্থানগুলোতে। আগামিতে ভারি বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার মাত্রা বাড়লে বড় ধরনের লোকসানের মুখোমুখি হবেন- এ আশঙ্কা করছেন তারা।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের আশপাশের নালা-নর্দমাগুলো দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার করা হয়নি। ফলে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। তাছাড়া কর্ণফুলীর রাজাখালী ও চাক্তাই খালের মুখে পানি প্রতিরোধক স্লুইসগেট নির্মাণ কাজ শেষ হলেও স্লুইসগেইটের আশেপাশে মাটি ভরাটের কারণে পানি চলাচলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই এলাকার পানি চলাচলের জন্য স্লুইসগেইট দুটির ছোট হওয়াতে পানি নামতে দীর্ঘ সময় লাগছে। চাকতাই-খাতুনগঞ্জের সহস্রাধিক দোকান-গুদামে দিন-রাত সমানে চলে বেচাকেনা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা এসে ট্রাক বোঝাই করে ভোগ্য পণ্য নিয়ে যায়। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ক্রেতাশূন্য দিন কাটাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে তেমন মালপত্রও আসছে না। চিনি, ভোজ্যতেল, আটা-ময়দা, ডাল, ছোলা, চাল, তৈরি পোশাক, কাপড়, কাগজ, ঢেউটিন, রড-অ্যাঙ্গেল, মশলা, ক্রোকারিজ, ওষুধ, কেমিক্যাল, মোটর পার্টস, স্যানিটারিওয়্যার, জুতা, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স পণ্যসহ সব ধরনের ব্যবসায় নেমে এসেছে স্থবিরতা।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিছ বলেন, ‘বৃষ্টি ও জোয়ারের পানির কারণে কয়েকদিন ধরে ক্রেতা নেই। প্রতিকূল আবহাওয়ার পরিস্থিতিতে নৌযোগে তেমন মাল পরিবহন হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা তাদের মালামাল রক্ষায় ব্যস্ত। এ কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে অনেকেই ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। জোয়ারের পানি উঠলেও নামতে না পারার প্রধান কারণ চাক্তাই খালের ড্রেজিং ও স্লুইস গেইট জটিলতা। এ জটিলতা ৮-১০ বছর ধরে চলছে।’

চাক্তাই ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফোরকান বলেন, ‘জোয়ারের পানি যেভাবে উঠছে সেভাবে নামতে পারছে না। এতে কয়েক ঘণ্টা পানি জমে থাকার কারণে মোকামগুলোতে পানি ঢুকছে। এতে ব্যবসায়ীদের বিক্রির চেয়েও ব্যস্ত মজুদ পণ্য বাঁচানোর চেষ্টায়। এ কয়েকদিনে জলাবদ্ধতার কারণে পেঁয়াজ, আদা, রসুন ব্যবসায়ীদের বড় ক্ষতি না হলেও বেশ কিছু আড়তদারের ক্ষতি হয়েছে। তবে জোয়ারের পানি বাড়লে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে ব্যবসায়ীরা।’

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘জলাবদ্ধতা ও মাঝারি বৃষ্টিপাতের কারণে আমাদের বিক্রি প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কমেছে। আগামিতে যদি পানি আরো বাড়ে ব্যবসায়ীরা যে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে তা নিশ্চিত। কিন্তু এই সমস্যা নিরসনে এখনো স্থায়ী সমাধান হয়নি। যার খেসারত দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।’

এদিকে জলজটে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

চাক্তাই খালের জলাবদ্ধতায় ব্যবসায়ীর ক্ষতি ও স্লুইস গেইট বিষয়ে জানতে চাইলে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী বলেন, ‘স্লুইস গেইটের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আর একটি প্রকল্পের অধীনে। চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জের জলাবদ্ধতা নিরসনে যেখানে ড্রেজার যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেখানে আমরা কাজ করেছি। কিছুস্থানে ড্রেজার যাচ্ছে না। যদি ড্রেজিং করতে হয় দুই পাশের ভবন ভাঙতে হবে। তাছাড়া অনেক জটিলতা রয়েছে। অনেক কাজ এখনো বাকি। তবে আমাদের দায়িত্বে যতটুকু কাজ করার তা আমরা করেছি।’