সমুদ্রে প্লাস্টিকদূষণ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। প্রতিবছর ৯০ লাখ মেট্রিক টন প্লাস্টিক নদীতে গিয়ে পড়ে। এরপর ভেসে ভেসে সমুদ্রে গিয়ে পড়ে। নদী ও সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়া প্লাস্টিক দূষণ মানুষ, পরিবেশ এবং বাস্তুতন্ত্রের জন্য ভয়ংকর ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা ‘এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) দ্য ট্র্যাজিক টেলস অব আওয়ার রিভারস : প্রসপেক্ট টু প্রবলেম’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের আন্তসীমান্ত নদীগুলো প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার ৩৪৫ টন একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য বহন করে। এর মধ্যে দুই হাজার ৮০২ টন ভারত ও মিয়ানমার থেকে আসে, দুই হাজার ৫১৯ টন ভারত ও ২৮৪ টন মিয়ানমার থেকে।
আনুমানিক ২৬ লাখ ৩৭ হাজার ১৭৯ টন (২.৬ মিলিয়ন টন) একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য প্রতিবছর বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে। যার মধ্যে আন্ত সীমান্ত বর্জ্য রয়েছে চার লাখ ৭০ হাজার ৪৩৯ টন (প্রায় অর্ধমিলিয়ন টন)। ভারত থেকে চার লাখ তিন হাজার ৩২৭ টন ও মিয়ানমার থেকে বছরে ৬৭ হাজার ১১২ টন প্লাস্টিক বর্জ্য প্রবেশ করে।
জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহারসংক্রান্ত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা নদী দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সাগরে মিশে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে প্রতিদিন তিন হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়। সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ দশম স্থানে। বাংলাদেশে খাদ্য এবং ব্যক্তিগত সামগ্রীর মোড়ক একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। দেশে প্রতিদিন মিলিয়ন মিলিয়ন পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। এগুলো প্রায়ই নদী ও সমুদ্রে গিয়ে মেশে। এসডো জানায়, প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন থাকা সত্ত্বেও দেশের ৬১ শতাংশ মানুষ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে।
সহজলভ্য এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য হওয়ায় এগুলো ব্যবহারের পর যখন বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়, তখন তা পরিবেশ ও সামগ্রিকভাবে মানুষের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে। তাই প্লাস্টিকের সামগ্রী যাতে সরাসরি মাটি ও পানিতে ফেলা না হয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। তবে জনগণকেও এ ব্যাপারে সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে।
অর্থনৈতিক কারণেই দেশে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে। এটা শুধু এককভাবে বাংলাদেশের সমস্যা না। বিশ্বজুড়ে এটি পরিবেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি তৈরি করছে। এসব পণ্যের উৎপাদকদেরই এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিতে রাজি করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবেও এটি একটি আন্দোলন হিসেবে গড়ে উঠছে। বাংলাদেশ সেই আন্দোলনে আছে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমরা পিছিয়ে আছি। বর্জের পরিমাণ কমানো, বর্জের পুনর্ব্যবহার ও রিসাইক্লিং সম্পদ কনজারভেশনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং এটা টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
বঙ্গোপসাগরে প্লাস্টিক বর্জ্য
দেশের মানুষ ও পরিবেশের জন্য ভয়ংকর ঝুঁকি