সুপ্রভাত ডেস্ক »
দক্ষিণ–পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে থাকা লঘুচাপটি ইতিমধ্যেই সুষ্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া অফিস বলছে, শুক্রবার সকালের মধ্যে এটি নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। পরে আরো শক্তিমাত্রা অর্জন করে গভীর নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, যদি এটি গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয় এবং আরো শক্তি অর্জন করে ২৪শে মে রাতে বা ২৫শে মে সকালের দিকে ঘূর্ণিঝড়েও রূপ নিতে পারে। খবর বিবিসি বাংলার।
তবে যেহেতু প্রতি মুহূর্তেই এর গতিপথ পরিবর্তিত হচ্ছে তাই কোথায় এটি আঘাত হানতে পারে সেটি সুস্পষ্টভাবে এখনই বলা যাবে না।
এর আগে আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “লঘুচাপটি ২৩শে মে রাতে বা ২৪শে মের মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। পরে ২৪শে মে রাতে বা ২৫শে মে সকালের দিকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে”।
ওমর ফারুক ফারুক বলেন, “যখন এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে এর নাম হবে রেমাল। এটি ওমানের দেয়া নাম। আরবি এই শব্দটির অর্থ বালু। তবে, এই নামে আফগানিস্তানে একটি শহর আছে। সেই শহরের নামানুসারে এটির নামকরণ করা হয়েছে।”
তিনদিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার সকালে ৭২ ঘণ্টার যে পূর্বাভাস দিয়েছে তাতে বলা হচ্ছে, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় থাকা লঘুচাপটি বর্তমানে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের উপর অবস্থান করছে।
এটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হবে। শুক্রবার সকালের মধ্যে নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। পরবর্তীতে এটি আরো শক্তিমাত্রা অর্জন করে গভীর নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। এটি আরও তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ দেশের অন্যত্র আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের ১৪টি জেলা ও একটি উপজেলায় মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
এসব জেলার মধ্যে মাদারিপুর, গোপালগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, বান্দরবান, খুলনা, মোংলা, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা এবং ভোলা জেলায় মৃদু তাপ প্রবাহ বয়ে যাবে।
এছাড়া পটুয়াখালীর খেপুপাড়া উপজেলায়ও তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে।
এদিন নিম্নচাপের কারণে সারাদেশেই দিন ও রাতের তাপমাত্রা খানিকটা বাড়তে পারে। আর্দ্রতা বৃদ্ধির কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে।
ঢাকায় বাতাসের দিক ও গতি পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রতি ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কি.মি থাকবে।
শুক্রবার ২৪ মে’র পূর্বাভাস সম্পর্কে অধিদপ্তর বলছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
একই অবস্থা থাকতে পারে ঢাকা, খুলনা এবং বরিশাল বিভাগের একটি বা দুটি জায়গায়। দেশের অন্যত্র আবহাওয়া প্রধানত অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ শুষ্ক থাকতে পারে।
এদিন সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আর্দ্রতা বৃদ্ধির কারণে অস্বস্তি অব্যাহত থাকতে পারে।
শনিবার ২৫ মে দেশের আটটি বিভাগেই অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এতে বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বেশিরভাগ জায়গায়ই অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
শনিবার সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আর্দ্রতা বৃদ্ধির কারণে অস্বস্তি অব্যাহত থাকতে পারে।
রোববার থেকে পরবর্তী পাঁচ দিনের বৃষ্টিপাত বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “নিম্নচাপ না হওয়া পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় হবে বা এর গতিপথ কেমন হবে তা বলা যায় না। নিম্নচাপে পরিণত হলেই স্পষ্টভাবে লোকেশন বলা যায়। তাই এটা না হওয়া পর্যন্ত কোথায় যাবে, যাবে না তা বলা যাবে না।”
যেসব ধাপ পার হয়ে ঘূর্ণিঝড় হয়
ঘূর্ণিঝড় হলো সমুদ্রে সৃষ্ট বৃষ্টি, বজ্র ও প্রচণ্ড ঘূর্ণি বাতাস সংবলিত আবহাওয়ার একটি নিম্নচাপ প্রক্রিয়া।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় হতে হলে প্রথমে সাগরে লঘু চাপ তৈরি হয়। প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ যখন ১৭ কিলোমিটার থাকে এবং বায়ুর চাপ কম থাকে তখন একে লঘু চাপ বলা হয়।
বাতাসে যদি ঘুর্ণন তৈরি হয়, অর্থাৎ ঘূর্ণিবায়ুর আবর্তন তৈরি হলে সেখানে বায়ুর চাপ কমে যায়। কারণ আশেপাশে থেকে জলীয় বাষ্প আসে। জলীয় বাষ্প আসলে বায়ুর চাপ কমে যায়।
এরপরের ধাপে রয়েছে সুস্পষ্ট লঘুচাপ।
আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, “লঘুচাপ শক্তির মাত্রা অর্জন করে ৩১ থেকে ৪০ কিমি প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের বেগ থাকলে একে সুস্পষ্ট লঘুচাপ বলা হয়। অর্থাৎ লঘুচাপ আরো শক্তিমাত্রা অর্জন করে সুস্পষ্ট লঘুচাপে রূপ নেয়”
তৃতীয় ধাপে রয়েছে সাগরে নিম্নচাপ তৈরি হওয়া।
আবুল কালাম মল্লিক বলেন, “সুস্পষ্ট লঘুচাপ আরো শক্তিমাত্রা অর্জন করে তৈরি হয় নিম্নচাপ। এরপর নিম্নচাপ আরো শক্তিমাত্রা অর্জন করে তৈরি হয় গভীর নিম্নচাপ”।
পরে এটি সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। তবে এই আবহাওয়াবিদ বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রাথমিক ধাপই হচ্ছে সাগরে নিম্নচাপ তৈরি হওয়া।