সুপ্রভাত ডেস্ক »
বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব কীভাবে সবক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন, সে কথা তার জন্মদিনে জানালেন তাঁদের সন্তান শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমার বাবার সাফল্য যদি আপনারা দেখেন, সেই ছাত্রজীবন থেকে মা পাশে থাকাতে তাঁর (বঙ্গবন্ধু) জীবন কিন্তু সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওঠে। শুধু ছাত্রজীবন থেকে নয়, রাজনৈতিক জীবনে তিনি সবসময় আমার বাবার পাশে ছিলেন।’
বাসস জানিয়েছে, ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার বঙ্গমাতার ৯৩তম জন্মবার্ষিকী এবং ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক-২০২৩’ প্রদান অনুষ্ঠানে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। খবর বিডিনিউজের।
বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে তাঁর সহধর্মিনী ফজিলাতুন নেছার অবদান তুলে ধরে মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গমাতা শুধু নিজের সংসারই চালাতেন না, হাতে যা টাকা-পয়সা আসত, তাও বাবার রাজনীতির জন্য তাকে দিয়ে দিতেন।
‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইতে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আব্বা-আম্মা ছাড়াও সবসময় রেণু (বঙ্গমাতা) আমাকে কিছু টাকা পয়সা দিয়েছে। রেণু যা কিছু জোগাড় করত, বাড়ি গেলে এবং দরকার হলেই আমাকে দিত, কোনো দিন আপত্তি করেনি। নিজে মোটেই খরচ করত না, গ্রামের বাড়িতে থাকত। আমার জন্য সব রাখত।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর বাবা যখন বি এ পরীক্ষা দেন, কলকাতায় তখন দাঙ্গা হচ্ছিল। তার বাবা দাঙ্গা দমনে ঝাঁপিয়ে পড়েন, কিন্তু সে সময় তাঁর মা চলে আসেন তাঁর বাবার লেখাপড়ার সহযোগিতা করার জন্য।
‘মা’র ধারণা হয়েছিল, তিনি যদি বাবার পাশে থাকেন, বাবা লেখাপড়া করবেন এবং পাস করবেন, যা করেছিলেনও তিনি। এটাও জাতির পিতা তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে লিখে গেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গমাতা জাতির পিতাকে বলতেন, ‘রাজনীতি করো আমার আপত্তি নেই, কিন্তু পড়াশোনা করতে হবে’। দাদাও বলেছিলেন ‘যে কাজই করো, তোমাকে পড়াশোনা করতে হবে’।
‘বাবা টানা দুই বছর কখনও জেলের বাইরে না থাকলেও মা সব সময় ঘর-সংসার সামাল দিতেন এবং কখনও হতাশ হননি।’
বঙ্গমাতার ৯৩তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তাঁর মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক ছয় দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এবং জাতির পিতার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণসহ জাতির বিভিন্ন সন্ধিক্ষণে বঙ্গমাতার সময়োচিত পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক
এ বছর চারজন নারী ও জাতীয় নারী ফুটবল দলকে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক দেওয়া হয়েছে। পদকপ্রাপ্ত চারজন হলেন- রাজনীতিতে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন (মরণোত্তর), শিক্ষা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় নাসিমা জামান ববি ও অনিমা মুক্তি গোমেজ এবং গবেষণায় ডা. সেঁজুতি সাহা (মলিকুলার বায়োলজিস্ট)।
বঙ্গমাতার অবদানকে স্মরণীয় রাখার জন্য আটটি ক্ষেত্রে নারীদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতি বছর সর্বোচ্চ পাঁচ নারীকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
পদক প্রদান অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক বঙ্গমাতার জীবন ও কর্মকা-ের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান বেগম চেমন আরা তৈয়ব। পুরস্কার প্রাপ্তদের পক্ষে বক্তব্য দেন জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জীবন ও কর্মের ওপর নির্মিত একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আর্থিক অনুদান ও সেলাই মেশিন বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এছাড়া দেশের সাড়ে ৪ হাজার দুস্থ নারীকে সেলাই মেশিন এবং ৩ হাজার জনকে এমএফএসের মাধ্যমে ২ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়।