স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শ্রদ্ধা
মো. সেকান্দর চৌধুরী »
১৯৬৯ সালে এদেশের জনগণ গভীর ভালোবাসায় শেখ মুজিবুর রহমানকে ভূষিত করেন বঙ্গবন্ধু উপাধিতে। যার অর্থ হলো বাংলার বন্ধু (ঋৎরবহফ ড়ভ ইবহমধষ)। বাংলা এবং অবিভক্ত ভারতের রাজনীতিতে স্বাধীনতার স্মারকে যারা উজ্জ্বল, যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যেও অনেক রাষ্ট্রনেতার উপাধি লক্ষ করি। উপাধি প্রদান এদেশের মানুষের একটি চিরায়ত রীতি। যেমন সুভাষ চন্দ্র বসুকে ‘নেতাজী’, এ. কে. ফজলুল হককে বলা হয় ‘শেরে বাংলা’। এরকম উপাধি ছাড়িয়ে গেছে সেসব ব্যক্তির স্বনামকে। স্বরাজ পার্টি গঠন ও বঙ্গীয় চুক্তি সম্পাদন করে, দেশের জনগণের কাছ থেকে ‘দেশবন্ধু’ উপাধি পেয়েছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশ। অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ভারতীয় জাতির পিতা ‘মহাত্মা’ বললে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী বুঝি। পাকিস্তান জাতির পিতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ‘কায়েদ-ই আযম’ নামেই পরিচিত। দেশের সংগ্রামে আত্মদানকারী সূর্য সেনকে মাস্টারদা , তুরস্কের জাতির পিতা আতাতুর্ক বলতে মোস্তফা কামাল, বর্ণবাদ বিরোধী নেতা বললে নেলসন ম্যান্ডেলা ও মার্টিন লুথার কিং, মার্শাল বললে টিটোকে চিনি। এছাড়া বিশ^কবি বলতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি বলতে কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লীকবি বললে জসীম উদদীন, রূপসী বাংলার কবি বলতে জীবনানন্দ দাশকে বুঝি। এভাবেই বিখ্যাত ব্যক্তিগণের উপাধিসমূহ তাদের সমার্থক হয়েই পরিচিতি লাভ করে। ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধু বললেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে চেনে বিশ^বাসী।
সেই বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন! দিবসটির মূল্যায়নে স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর অবলোকন নিতান্তই সারল্যমাখা, সাদামাটা। বঙ্গবন্ধুর কারাগারের রোজনামচা থেকে জানা যায় সে বিষয়ে। বঙ্গবন্ধুর ভাষায়Ñ “আজ আমার ৪৭তম জন্মবার্ষিকী। এই দিনে ১৯২০ সালে পূর্ব বাংলার এক ছোট্ট পল্লীতে জন্মগ্রহণ করি। আমার জন্মবার্ষিকী আমি কোনোদিন নিজে পালন করি নাই- বেশি হলে আমর স্ত্রী এই দিনটাতে আমাকে ছোট একটি উপহার দিয়ে থাকতো। এই দিনটিতে আমি চেষ্টা করতাম বাড়িতে থাকতে। খবরের কাগজে দেখলাম ঢাকা সিটি আওয়ামী লীগ আমার জন্মবার্ষিকী পালন করছে। বোধ হয়, আমি জেলে বন্দি আছি বলেই। ‘আমি একজন মানুষ, আর আমার আবার জন্মদিবস’! দেখে হাসলাম।”
সাদামাটা বাঙালির যাপিত জীবনের সাঁকো আর বর্ণিল ইতিহাসের পথ বেয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনটি এক মহিমান্বিত দিনে আসীন হয়েছে। এবছরই বিপুল উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি উদ্যাপন করছে জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।সৌভাগ্য হচ্ছে তাঁর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এবং তাঁরই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমন্ত্রণে এই মহামারীর মধ্যেও বিশ^ নেতারা জন্মদিনের শুভেচ্ছা বার্তা প্রদান করেন এবং অনেকেই সশরীরে উপস্থিত ছিলেন এবং থাকবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
খোকা থেকে শেখ মুজিব, কখনো তিনি মুজিব ভাই, কখনো তিনি জাতির পিতা হয়ে নিজেই নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন। যেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘বঙ্গবন্ধুর’ চেয়েও বড়।
৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র নির্বাচন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৫’র ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে অরক্ষিত পূর্ব বাংলা, ৬৬’র ‘৬ দফা’, ৬৮’র আগরতলা মামলা, ৬৯’র গণঅভ্যূত্থান, ৭০’র নির্বাচন ও ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধুর “বঙ্গবন্ধু” হয়ে উঠা, জাতির পিতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পেছনে ব্যাপকভাবে ভূমিকা রাখে বাঙালি জাতির ইতিহাসের এসব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
অসাম্প্রদায়িক চরিত্রের অধিকারী বঙ্গবন্ধু তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনে শিখেছেন দেশবন্ধুর সম্প্রীতি, নেতাজীর সংগ্রাম ও গান্ধীজীর অহিংস অসহযোগ। এমনকি রবীন্দ্রনাথের দেশাত্মবোধ ও নজরুলের বিদ্রোহেও অনুপ্রাণিত ছিলেন তিনি। ইতিহাস সচেতন ছিলেন শেখ মুজিব। বিভিন্ন বিপ্লবীদের সংস্পর্শে না থেকেও তিনি তাঁদের দেখানো পথ অনুসরণ করেছেন। অনুপ্রাণিত হয়েছেন বিভিন্ন মনিষীদের জীবন-আদর্শে। শিখেছেন সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া। ধীরে ধীরে নিজেকে নির্মাণ করেন বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে।
বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক গুরু সোহরাওয়ার্দী ও এ. কে. ফজলুল হকদের থেকে উচ্চশিক্ষায় পিছিয়ে থাকলেও তিনি ছিলেন অসম্ভব বাকপটু।তাঁর বাগ্মিতা (ঙৎধঃড়ৎ) ছিল লক্ষ করার মতো। তিনি ‘বার এট ল’ পড়তে চেয়েছিলেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে একবার একটি চিঠিতে তিনি তাঁর এ অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।বাঙালির ক্রান্তিকালে বঙ্গবন্ধু মানব মুক্তির প্রত্যয়ে নিজেকে উদ্বুদ্ধ করেন, সে কারণে উচ্চশিক্ষার সুযোগ ও ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সেটি সম্ভব হয়নি। মানুষকে আকর্ষণ করার অসম্ভব সম্মোহনী শক্তি ছিল তাঁর, যেটি জাতীয় নেতৃত্বের অন্যতম গুণ,যা তাঁকে পরর্বীতে সারা বিশে^ একজন ক্যারিশমেটিক লিডারে পরিণত করে।
১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পরে ৮ই জানুয়ারি পাকিস্তান কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু মুক্তি পান। এবং লন্ডন-দিল্লি হয়ে স্বাধীন স্বদেশে ফিরে আসলেন। উল্লেখ্য, ফেরার পথে ইন্দিরা গান্ধীর সাথে সাক্ষাৎকালে বঙ্গবন্ধু শুভেচ্ছা বিনিময়ের সাথে সাথে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়টিও উত্থাপন করেন।বাংলাদেশের অবকাঠামো ও অর্থনীতি প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের শাসনামল। দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু দেশের কৃষি শিল্প ও সেবা খাতের অবকাঠামো পুনর্গঠনসহ দক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহন করেন। পাকিস্তান যেখানে নয় বছর সময় নেয়, ভারত যেখানে তিন বছর, সেখানে বঙ্গবন্ধু সরকার মাত্র নয় মাসে (এপ্রিল, ১৯৭২-ডিসেম্বর, ১৯৭২) রচনা করলেন মানব মুক্তির সংবিধান-শাসনতন্ত্র। যার মূল ভিত্তি চার মূলনীতি; জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।বঙ্গবন্ধু বলতেনÑ “ধর্মনিরপেক্ষ মানে ধর্মহীনতা নয়”। তিনি বাংলাদেশকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। তিনি পাকিস্তানিদের ন্যায় দেশ ও দেশের জণগণকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে ঠেলে দিতে চান নি।তিনি বাঙালিকে অসাম্প্রদায়িক বাহুডোরে বাঁধতে চেয়েছিলেন। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান প্রত্যেক ধর্মের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন তিনি । তাঁর ভাষায়Ñ“এ মাটিতে ধর্মহীনতা নাই, ধর্মনিরপেক্ষতা আছে”। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি শাসনতন্ত্রের চতুর্থ সংশোধনী পাসের দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর দীর্ঘ ভাষণে বলেছিলেনÑ “… আজকের এই সংশোধন কম দুঃখে করি নাই আমরা জীবনভর সংগ্রাম করেছি।… এখানে জনগণের ভোটাধিকার থাকবে। এখানে আমরা সমাজতন্ত্র করতে চাই, এখানে আমরা শোষিতের গণতন্ত্র রাখতে চাই। সাম্প্রদায়িকতার বীজ বাংলার মাটিতে কোনদিন আসতে পারবে না, আমরা তা হতে দেব না ”।
বঙ্গবন্ধুর শাসনামল মাত্র ৩বছর ৭মাস ৩ দিন স্থায়ী ছিল। এই অল্প সময়ে বঙ্গবন্ধু দেশের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন সাধন করেন। ‘কৃষক বাঁচলে বাঁচবে দেশ’ এ স্লোগান দিয়ে তিনি ২২ লক্ষেরও অধিক কৃষক পরিবার পুনর্বাসন করেন। প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নসহ গ্রহন করেন নানা অর্থনৈতিক উন্নয়ন পদক্ষেপ, ৪০০টিও অধিক কলেজ ও স্কুল নির্মাণের মাধ্যমে পরিবর্তন আনেন শিক্ষা ক্ষেত্রে। এছাড়া উন্নত করেন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, নারী কল্যাণ, নদী শাসন ব্যবস্থা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন পদক্ষেপ, পুনর্বাসন পদক্ষেপ, সড়ক রেল ও বিমান যোগযোগের উন্নয়ন, মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানার জাতীয়করণ। মাত্র তিন মাসের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলেন যা অন্য কোন স্বাধীন দেশ সহায়ক বাহিনীর ক্ষেত্রে পারেনি এমনকি এখনো অনেক তৃতীয় বিশে^র দেশে মিত্র শক্তির সৈন্যরা অবস্থান করছে। বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শের প্রতিফলন দেখতে পাই তার শাসনামলে। অসাম্প্রদায়িক বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতির মূলমন্ত্র হলো “কারো সাথে বৈরিতা নয়, সকলের সাথে বন্ধুত্ব”। অচিরেই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে। বঙ্গবন্ধুর সফল কূটনীতির ফলে স্বাধীনতার অল্পদিনের মধ্যেই আমেরিকাসহ ১২১টি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে।
১৯৭৩ সালের ২৩শে মে বঙ্গবন্ধু ‘জুলি ও কুরি’ পদক লাভ করেন। বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ প্রদানের মাধ্যমে বাঙালির মাতৃভাষাকে বিশ^সভায় সম্মানিত করেন। বঙ্গবন্ধুর মাধ্যমে বাংলাদেশ কমনওয়েলথ ও ইসলামি পররাষ্ট্র সম্মেলনসহ ১৪টি আন্তর্জাতিক সংগঠনের সদস্যপদ লাভ করে। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই ৯৮ লাখ ৯৯ হাজার ৩০৫ জন শরণার্থীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন। ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ বহুল প্রতীক্ষিত জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। ১৯৭৩ সালে আলজেরিয়ায় অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন “পৃথিবী আজ দুভাগে বিভক্ত। একভাগে শোষক শ্রেণি আরেকভাগে শোষিত। আমি শোষিতের দলে” ওই ভাষণের পর ফিদেল ক্যাস্ত্রো শেখ মুজিবুর রহমানকে বলেছিলেন “তুমি আজ ভাষণ দিলে, এখন থেকে সাবধানে থেকো। আজ থেকে তোমাকে হত্যার জন্য একটি বুলেট তোমার পিছু নিয়েছে”। দুই বছরের ব্যবধানেই ফিদেল ক্যাস্ত্রোর সেই কথাটিই যেন সত্যে পরিণত হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন।
বঙ্গবন্ধু মারণাস্ত্রসমৃদ্ধ একটি দখলদার বাহিনীর কব্জা থেকে ছিনিয়ে এনে দিয়েছেন স্বাধীনতা যা একটি জাতির জীবনের পরম আরাধ্য ও সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। ২০০৪ সালে ১৪ এপ্রিল বিবিসি জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নাম ঘোষণা করা হয়। মহাত্মা বাদ দিয়ে যেমন ভারতের ইতিহাস লেখা যায় না, মাও সে তুং কে বাদ দিয়ে যেমন চীনের, হো চিন মিনকে কে বাদ দিয়ে ভিয়েতনামের ইতিহাস লেখা যায় না, জর্জ ওয়াশিংটনকে বাদ দিয়ে যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস লেখা যায় না তেমনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা যায় না। বঙ্গবন্ধু ছাড়িয়ে গেছেন তাঁর সকল উপাধিকে।উপাধি কেবলই আলংকারিক মাত্র। কোনো উপাধিই ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে ছাপিয়ে যেতে পারে না। তিনি সকল উপাধির উর্ধেŸ।কবি অন্নদাশঙ্কর রায়ের ভাষায় বলা যায় “যতকাল রবে পদ্মা মেঘনা যমুনা গৌরি বহমান, ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান”।
লেখকÑসাবেক ডিন,কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়।প্রাবন্ধিক ও গবেষক