দেশীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের বহুমুখি সম্ভাবনা উন্মুক্ত করবে কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেল। এটি উপমহাদেশের প্রথম টানেল যা চট্টগ্রামবাসীর গর্বের বিষয়। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি চালু করা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রকল্প পরিচালক হারুনর রশিদ চৌধুরী। ইতিমধ্যে এক টিউবের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকিটির কাজ চলছে। টানেলের সর্বোচ্চ গভীরতা ৪২.৮০ মিটার, সমুদ্র সমতল থেকে। এই টানেল নির্মিত হলে সাংহাই ও বুদাপেস্ট এর মতো কর্ণফুলীর ওপারে আর একটি শহর গড়ে উঠবে, ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’। প্রকল্প পরিচালক বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ও কর্ণফুলীকে বাঁচাতেই এই টানেল। কক্সবাজারের সাথে চট্টগ্রাম অঞ্চল, আগামীতে মিয়ানমার হয়ে চীন পর্যন্ত যাতায়াতের ক্ষেত্রে এই টানেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আমাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টানেলটি যুক্ত হবে এশিয়ান হাইওয়ে, সিটি আউটার রিং রোড, আনোয়ারা ইকনমিক জোন, পারকি সমুদ্র সৈকত, বাঁশখালী পেকুয়া হয়ে কক্সবাজার এবং মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর সড়কের সঙ্গে। এছাড়া ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী যানবাহনগুলি এই টানেল দিয়েই চলে যাবে। টানেলের উভয় দিকে নানামুখি সংযোগ সড়কের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এর ফলে চট্টগ্রাম মহানগর কর্ণফুলীর উভয় দিকেই সম্প্রসারিত হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে মিরেরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ, মাতারবাড়িতে সমুদ্র বন্দর, টেকনাফের সাবরাংয়ে পর্যটন প্রকল্প, বে-টার্মিনাল, কক্সবাজারের পর্যটন সম্ভাবনাসহ নানামুখি প্রকল্প ছাড়াও কর্ণফুলীর হামিদচরে গড়ে তোলা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি যা আমাদের সমুদ্রসীমায় সম্পদ আহরণ তথা ব্লু ইকনমি সম্ভাবনায় অবদান রাখবে। সেই সাথে আছে মিরেরসরাইয়ে এশিয়ার সবচাইতে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল ‘বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর’। ‘এখানে দেশিÑবিদেশি বিনিয়োগের উৎকৃষ্ট ক্ষেত্র তৈরি’ হচ্ছে যা চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা অনেক বাড়িয়ে দেবে। মোটকথা, যোগাযোগ, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কর্মসংস্থানের ব্যাপকতা জাতীয় প্রবৃদ্ধি বাড়াবে। দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এবং এশিয়া পূর্বমুখি দেশগুলির সাথে বৃহত্তর চট্টগ্রাম হবে অর্থনীতি, আঞ্চলিক বাণিজ্য, পর্যটনের বড় কেন্দ্র।
এখন প্রয়োজন কর্ণফুলীর দু তীরে পরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন। নদীর ওপারে পরিকল্পিত শহর ও শিল্প এলাকা স্থাপনে পরিকল্পনা নিতে হবে। অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ণ করা চলবে না। এজন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে দক্ষ জনবল, গবেষণা সেল, লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়াতে হবে। দুই শহরের জন্য নতুন করে মাস্টারপ্ল্যান করতে হবে উভয় সংস্থাকে। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার মধ্যে সমন্বয় রেখেই কাজ করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু টানেল বৃহত্তর চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনীতি ও যোগাযোগের বহুমুখি সম্ভাবনা তৈরি করে দিয়েছে। এখন আমাদের উচিত হবে উন্নয়ন, জনকল্যাণ ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ তথা জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ জীবন-জীবিকার সকল ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো।
মতামত সম্পাদকীয়