ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে বাঙালির প্রাণের বইমেলা। একসময় বাংলা একাডেমি চত্বরে শুরু হলেও এই মেলা দেশের অনেক স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, বিশ্বের অনেক দেশে এখন একুশে ফেব্রুয়ারি পালনসহ বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই মেলা লেখক-পাঠকদের মধ্যে এক মেলবন্ধনও তৈরি করে। মেলা নিয়ে, বই নিয়ে সুপ্রভাত কথা বলেছে লেখকদের সঙ্গে। নির্দিষ্ট প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছেন তারা। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।
১। মেলায় কী কী বই বের হচ্ছে?
২। কী বিষয় নিয়ে লিখলেন? (প্রবন্ধ ও উপন্যাসের ক্ষেত্রে)
৩। চট্টগ্রামে প্রকাশনার মান কেমন?
৪। বই বিক্রি কি কমেছে বলে মনে করেন?
৫। একুশের বইমেলাকে কেন্দ্র করে একটি নির্দিষ্ট সময়ে বই প্রকাশ করা, এটাকে কীভাবে দেখেন?
ড. শ্যামল কান্তি দত্ত
১। আমি মূলত ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি এই বিষয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখি। আর আবেগের স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটলে কদাচিৎ কবিতাও লিখি। না, এবছর মেলায় আমার কোনো বই বেরুচ্ছে না। তবে এবার মেলায় প্রথম আসবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট থেকে প্রকাশিত মাতৃভাষাপিডিয়া (২০২৪)। ভাষাবিজ্ঞানী ড. হাকিম আরিফ ও অন্যান্য সম্পাদিত মাতৃভাষাভিত্তিক ভাষাবৈজ্ঞানিক এই বিশ্বকোষ চার খণ্ড বাংলা এবং চার খণ্ড ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়েছে। এই বিশ্বকেষে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ থেকে শুরু করে ড. মাহবুবুল হক পর্যন্ত বারো জন ভাষাবিজ্ঞানীকে নিয়ে আট হাজার শব্দের বারোটি ভুক্তি আমি লিখেছি। এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত বাংলাপিডিয়া (২০০৩)-এর পর এমন আরেকটি বই প্রকাশ বিশ্বব্যাপি বাংলাদেশের গৌরব বাড়াবে বৈকি।
২। বারোজন ভাষাবিজ্ঞানী নিয়ে ভুক্তি লেখার বাইরে এবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট থেকে প্রকাশিত মাতৃভাষা জার্নালের জন্য লিখেছি ‘আনিসুজ্জামান ও বাংলা ভাষাচর্চা’ শীর্ষক প্রবন্ধ এবং বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিতব্য জুলাই শিক্ষার্থী-গণঅভ্যুত্থান শীর্ষক প্রবন্ধ সংকলনের জন্য লিখেছি ‘জুলাই শিক্ষার্থী-গণঅভ্যুত্থানে উচ্চারিত সেøাগানের ভাষাশৈলী’ শিরোনামে আরেকটি প্রবন্ধ। আশাকরি ভাষা ও ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহী পাঠক-গবেষকগণ এগুলো পাঠে আনন্দ পাবেন।
৩। চট্টগ্রামের অতীত ঐতিহ্যে আলোকে অস্বীকার করবার উপায় নেই যে, বইঘর যেভাবে ঢাকার প্রকাশনার সাথে সমানে-সমানে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিল বর্তমানে আমরা সে-অস্থান থেকে ছিটকে পড়েছি। অবশ্য এর জন্য দেশের রাজধানীকেন্দ্রিক বাজার-ব্যবস্থাও দায় এড়াতে পারে না। তবে সাম্প্রতিক কিছু প্রকাশনা-প্রতিষ্ঠান প্রতিশ্রুতিশীল হচ্ছে বলে মনে হয়।
৪। এই প্রশ্নের উত্তরে বলব বাঙালি কখনোই বই কিনতে বড় বেশি আগ্রহী ছিল না। বর্তমানের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী পাঠ্যবইয়ের পরিবর্তে নোটবই বা পিডিএফ পড়তে ভালোবাসেন। উপরন্তু পণ্ডিত সলিমুল্লাহ খান কিংবা ডা. পিনাকী ভট্টাচার্যের অধিকাংশ ভক্তরাই বই পড়ার চেয়ে ইউটিউবে উত্তেজক-আক্রমণাত্মক বক্তৃতা শুনেই গুণমুগ্ধ হন বেশি। তবু নিবিষ্ট পাঠক বাড়ছে, বাড়ছে বই বিক্রিও। আর ভালো সবকিছুইতো প্রত্যাশার চেয়ে অল্প বলেই ভালো।
৫। একুশের বইমেলা ফাগুনে হয় বলেই উৎসবমুখর হতে দেখি। ফাগুন এলেই বাঙালি দ্বিগুন হয়, কবি-সাহিত্যিক হয়। এটা বেশ উপভোগ্য। অন্তত গল্প-উপন্যাস ও কবিতার বই প্রকাশের জন্য এমন আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন; লেখক-পাঠকগণের আড্ডা আশাপ্রদ করে আমাদেরে। তবে হুজুগে পড়ে, তাড়াহুড়ো করে বই প্রকাশ করতে গিয়ে বইয়ের মানের সাথে আপোষ করা উচিত নয়। অবশ্য, আমার এযাবৎ প্রকাশিত চারটি বইয়ের ( সিলেটের উপভাষা: ব্যাকরণ ও অভিধান, ঢাকা: আগামী প্রকাশনী, এপ্রিল, ২০১৮। চেতনা-চড়ুই, চট্টগ্রাম: খড়িমাটি, ডিসেম্বর, ২০২০। প্রণয় প্লাবন, ঢাকা: কবি মানস, ফেব্রুয়ারি ২০২১। বঙ্গবন্ধুর ভাষাশৈলী, ঢাকা: বাংলা একাডেমি, জুলাই ২০২২।) তিনটিই বইমেলাকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত হয়নি। প্রতিদিনেই বইকে ভালোবাসবো, তবু বই ভালোবাসার একটি মাস বইমেলা বাড়তি পাওনা হিসেবে আসুকÑএইতো চাই।