তাসকিন মইজ »
বই দুটি বর্ণের উচ্চারণেই সৃষ্ট শব্দ। কারো কাছে খুবই প্রিয় আবার কারো কাছে অপ্রিয়। বই পড়তে ভাল লাগে না এমন যেমনটি হয় আবার ঠিক তার উল্টোটাও হয়। বইকে চাইলে নিরব বন্ধু বানানো যায়। যদি সে ইচ্ছেটা নিজের মধ্যেই তৈরি করা যায়। আমরা যখন ছোট ছিলাম ঘরের পরিবেশটা অন্য রকম ছিল। তখন তো স্মার্ট ফোন ছিল না। সময় কাটানোর মাধ্যম ছিল লুডু, ক্যারাম কিংবা বই পড়া। অনেক মজার মজার সিরিজ ছিল আমরা পড়তাম যেমন- সাইমুম, ওয়েস্টার্ন, তিনগোয়েন্দা, মাসুদরানাসহ আরো অনেক বই। তাদের মাঝে কমিক্স, কার্টুন ও বাদ ছিল না যেমনÑনন্টে-ফন্টে, ফ্যান্টম, হাঁদাÑভোঁদা, বাটুল দি গ্রেট, কাকা চৌধুরী, টিনটিন আরো কত। স্কুলের বইয়ের উপর তিন গোয়েন্দার বই লুকিয়ে রেখে আম্মাকে বোকা বানানোর মজাই অন্য রকম ছিল। রাতে কারেন্ট চলে গেলে মশা মেরে বইয়ের পাতায় জমিয়ে রাখা দুষ্টুমিগুলো খুব মিস করি। হারিয়ে যাওয়া শৈশবের আরো মজার কত কি। তবে এই বই পড়ার জন্য আমরা উৎসাহ পেতাম পরিবারের কাছ থেকেই। এখনকার শিশুরা যেমন উৎসাহ পায় মোবাইল নিয়ে বসে থাকার। এর জন্য আমি শিশুকে দায়ী করি না,করি তার পরিবেশকে।তার মা কাজের নাম করে শিশুটির হাতে মোবাইল তুলে দিল কিংবা শিশুটি মোবাইল ছাড়া খায় না বলে অজুহাত দেখিয়ে দিল।
আমরাও যখন শিশু ছিলাম খাবারের অনীহা নিশ্চয় ছিল। আমরা তো মোবাইল পাইনি, টিভির সামনেও বসিয়ে রাখেনি। তখন তো সিরিয়াল কম্পিটিশন ছিল না, মা আমাদের ভালোবেসেই গল্প, ছড়া বলতে বলতে বিশেষ কিছু ভাতের লাড্ডু বানিয়ে স্বস্নেহে ভালোবেসে খাওয়াতেন। সেই দিনগুলো কোথায়? হয়তো অনেকেই বলবে যুগ বদলেছে। যুগ তো আমরাই বদলিয়ে দিয়েছি। সমস্ত সৌন্দর্য, ভালোবাসা, মানবিকতা, কমনীয়তা আমরাই হারিয়ে দিয়েছি। আমাদের আধুনিকতা আমাদের যান্ত্রিকতাবাদ এর জন্য দায়ী। বর্তমানে সমগ্র বিশ্ব করোনায় আক্রান্ত, সেই সাথে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নিয়েও আমরা চিন্তিত। বন্দিত্বজীবন আর একাকীত্ব তাদের গ্রাস করছে প্রতিনিয়ত। এই সময়টাতে যদি তাদের আমরা নিজেরাই একটু সময় দিই, ফেলে দেয়া জিনিস কিভাবে কাজে লাগানো যায়, রং করা, গান, কবিতা শিখাই, যার যার ধর্ম শিক্ষা দিই, পরিবারের ছোট ছোট কাজে তাদের নিয়োজিত করি। আমার মনে হয় এতে তাদের মোবাইল প্রীতি অধিকাংশে কমে যাবে। আর নিজেরাও সার্বক্ষণিক মোবাইলে না থেকে যদি বইয়ের প্রতি নিজের মনকে নিয়োজিত করা যায় তাহলে লাভ বৈ ক্ষতি হবে না। আমাদের পরিবার আমাদের প্রথম বিদ্যালয়। শিশু তাই শিখবে যা সে দেখবে, শুনবে, জানবে। শিশুর হাতে মোবাইল নয় বই দিন। বই এমন এক বন্ধু যা থেকে আপনি শুধুই পাবেন। সবাই ছেড়ে গেলেও আপনার বর্ধিত জ্ঞান কখনো আপনাকে ছেড়ে যাবে না। বই পড়লে আপনি হবেন মার্জিত, জ্ঞানী মানবিকতায় পূর্ণ একজন মানুষ। একটা সময় বই খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপহার হিসেবে পরিগণিত হতো। স্মৃতি হিসেবে সাজিয়ে রাখতো বছরের পর বছর। এখন সেই দিন ও নেই, নেই সেই উপহার। এখন উপহার মূল্যের উপর নির্ভর করে। বই মূল্য নির্ধারিত থাকলেও বই তো অমূল্য সম্পদ। এটা বোঝার তাৎপর্য কি আমাদের আছে? বই পড়ার আনন্দ সৃষ্টি করতে হবে। প্রথমে হয়তো ভাল লাগবে না তবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বই পড়লে আনন্দ সৃষ্টি হবেই। বই হোক আমাদের পাথেয়, আনন্দ বার্তা। আমাদের দর্শন, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, আচরণ সকল কিছুর পরিমাপক। ভালোবাসার প্রথম নাম হোক বই।
লেখক : প্রাবন্ধিক