সুপ্রভাত ডেস্ক »
ছয় দিনের বিশেষ কর্মসূচির মত করে গণটিকা কার্যক্রম আপাতত আর হচ্ছে না; যে পরিমাণ টিকা হাতে থাকবে সেই পরিমাণ নিবন্ধন করে টিকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন। খবর বিডিনিউজের।
আগামীতে গণটিকা কার্যক্রম আবারও শুরু হবে কিনা জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ মুহূর্তে গণটিকা কার্যক্রম আমরা করছি না, কারণ সেই পরিমাণ টিকা আমাদের হাতে নেই। আমরা গণ কথাটা আগামীতে ব্যবহার করব না।’
‘আমাদের হাতে যখন যতটুকু টিকা আসবে এবং সেই টিকা যতগুলো লোককে দিতে পারব, সেই পরিমাণ লোককেই আমরা ডাকব। যাদের কাছে বার্তা যাবে তারাই আসবে।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ডের তিন কোটি ডোজ কেনার জন্য গত বছরের শেষ দিকে চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ। সেই টিকার প্রথম চালান পাওয়ার পর ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে গণ টিকাদান শুরু হয়।
কিন্তু সেরাম ইনস্টিটিউট দুই চালানে ৭০ লাখ ডোজ পাঠানোর পর ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলে টিকার সঙ্কটে পড়ে বাংলাদেশ। পর্যাপ্ত টিকা না থাকায় ২৫ এপ্রিল দেশে প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
তখন সরকার অন্য উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা শুরু করে। চীন থেকে জরুরিভাবে সিনোফার্মের টিকা কেনার চুক্তি করা হয়। এখন সিনোফার্মের টিকার পাশাপাশি কোভ্যাক্স থেকে ফাইজার, মডার্না ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাচ্ছে বাংলাদেশ।
কিছু টিকা হাতে পাওয়ার পর মহামারীর বিরুদ্ধে সুরক্ষা বলয় তৈরি করতে গত ৭ অগাস্ট থেকে ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ে ছয় দিনের গণটিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করে সরকার।
তাতে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়া মিললেও সরবরাহ কম থাকায় অনেককে টিকা না পেয়ে ফিরে যেতে হয়, অনেক ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনারও অভিযোগ আসে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গণটিকা দেওয়ার সময় লম্বা লাইন আমরা না চাইতেও হয়েছে। আমেরিকার টিকা হোক আর চায়নার হোক, টিকার কাজ সবগুলোই ভালো। তাই হুড়োহুড়ি করে টিকা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।’
বর্তমানে দেশে সিনোফার্ম, মডার্না, ফাইজারের টিকার দুই ডোজ দেওয়া হচ্ছে উৎপাদকদের নিয়ম অনুযায়ী এক মাস বা চার সপ্তাহের ব্যবধানে।
এই সময় কমিয়ে আনা যায় কি না, প্রধানমন্ত্রী তা দেখতে বলেছেন জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অন্যান্য দেশ ১৫ দিনের মধ্যে দিচ্ছে, টিকা প্রাপ্তি সাপেক্ষে এ বিষয়টিও আমরা দেখব বলে জানিয়েছি।’
টিকা পাওয়ার জন্য দেশে সুরক্ষা ওয়েব প্ল্যাটফর্মে এনআইডি নম্বর ও ফোন নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হয়। বর্তমানে ২৫ বছর বা তার বেশি বয়সী সকল নাগরিক নিবন্ধন করার সুযোগ পাচ্ছেন। তবে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বয়স ১৮ বছর হলেই নিবন্ধনের সুযোগ মিলছে। তাছাড়া প্রাধিকারের তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বয়সের ওই সীমা নেই।
ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়ে ছয় দিনের গণ টিকা কর্মসূচিতে এনআইডি নিয়ে কেন্দ্রে গেলেই টিকা পাওয়ার যে সুযোগ রাখা হয়েছিল, তেমন সুযোগ আর থাকবে না বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
‘অবশ্যই নিবন্ধন ছাড়া টিকা দেওয়া হবে না। টিকা যতটুকু আছে সেই পরিমাণভাবে যেন নিবন্ধন হয়, যে পরিমাণ টিকা থাকবে সেই পরিমাণ নিবন্ধন হবে।
‘গ্রামের লোকেরা টিকা নিচ্ছিল না, এজন্য গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বেশির ভাগ টিকা শহরে দেওয়া হয়েছে, গ্রামে আমাদের বসবাস থাকলেও সেখানে কম দেওয়া হয়েছে।’
দেশে টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন সাড়ে তিন কোটির বেশি মানুষ, যা মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশের কম। তাদের মধ্যে এক কোটি ৬৬ লাখ মানুষ প্রথম ডোজ পেয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন তাদের মধ্যে ৬৫ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সংক্রমণ কমে আসছে, দৈনিক মৃত্যুও কমেছেৃ। টিকা কার্যক্রম শহরে বেশি চলছে। গত পরশু অ্যাস্ট্রাজেনেকা আমরা পেয়েছি। ফাইজারের টিকা ৬০ লাখ পাব সেপ্টেম্বরের মধ্যে। চীনের সিনোফার্ম এ মাসের শেষে ১০ লাখ কনফার্ম করেছে।
‘গত ১৫ দিনে অনেক কাজ করা হয়েছে এবং অনেক অর্ডার দেওয়া হয়েছে। চায়নাতে নতুন ৬ কোটি ডোজের অর্ডারসহ মোট সাড়ে ৭ কোটি অর্ডার দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে আমাদের অফার দিয়েছে, আমাদের ক্রয় করে নিতে হবে যা আমরা নিয়েছি এবং এ সিদ্ধান্ত তাদের জানিয়ে দিয়েছি।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রস্তাব অনুযায়ী, চীনের সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাকের মোট সাড়ে ১০ কোটি ডোজ টিকা কেনা হচ্ছে। এর বাইরে কোভ্যাক্সের সহায়তার আওতায় ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা বিনা মূল্যে পাওয়া যাবে। সেটাও চলমান।
টিকা পাওয়া সাপেক্ষে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৮ কোটির বেশি লোককে টিকা দেওয়ার আশা প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, ‘যেভাবে প্রতিশ্রতি পেয়েছি এবং অর্ডায় দিয়েছি, আগামীতে খুব একটা অভাব দেখা দেবে না। যদি ১৬ কোটি ভ্যাকসিন পেয়ে যাই, তাহলে আমরা ৮ কেটি লোককে দিতে পারব, এই ভ্যাকসিনগুলো ডিসেম্বরের মধ্যে আসার কথা।
‘কোভ্যাক্সের ভ্যাকসিন যেটা ফ্রি আসবে, সেটাও তো কিছু আসবে, তাহলে ১৬ কোটি সাথে আরো যোগ হবে। আগামী জানুয়ারি ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমাদের দেশে আমরা ৭ থেকে ৮ কোটি লোককে টিকা দিয়ে ফেলতে পারব, বা আরও বেশিও করতে পারি যদি ভ্যাকসিন অ্যাভেইলেবল হয়।’
মন্ত্রিসভার বৈঠকে শ্রমিকদের টিকা দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ফ্রন্টলাইনারদের টিকা দিচ্ছি। সকল কারখানার শ্রমিকদের পর্যায়ক্রমে টিকা দেওয়া হবে। আমরা চাই দেশের প্রতিটি মানুষ ভ্যাকসিন পাক এবং সুরক্ষিত থাকুক।
‘ভ্যাকসিন যারা নিয়েছে, তারা খুব কমই মারা গেছে। বিনোদনের জায়গাসহ সব খুলে দেওয়া হয়েছে, সবাই স্বাস্থ্যিবিধি মেনে নিজেদের সুরক্ষিত রাখবেন এবং অবশ্যই মাস্ক পড়বেন।’
এ মুহূর্তের সংবাদ