সুপ্রভাত ডেস্ক »
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলা ফেনী। এখন পর্যন্ত প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল সাহায্য কঠিন করে তুলেছে সেখানকার মানুষের পরিস্থিতি।
ফেনী জেলার সব উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়ন এখন বন্যার পানিতে ডুবে আছে। যেদিকে চোখ যাচ্ছে, শুধু পানি আর পানি। গ্রামের পর গ্রাম, মাঠের পর মাঠ; পানিতে ডুবে আছে।
জেলার ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি খারাপ। উপজেলাগুলোর পৌর শহরগুলোও এখন পানির নিচে।
ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি উপচে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে।
বন্যা দুর্গতদের সহযোগিতায় উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি সহযোগিতার জন্য পৌঁছেছে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ড। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্বেচ্ছাসেবীরাও সেখানে যাচ্ছেন।
স্থানীয়দের দাবি, যে পরিমাণ সহযোগিতা প্রয়োজন, সে তুলনায় খুব কমই এখন পর্যন্ত সেখানে পৌঁছেছে। সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দ্রুত স্পীডবোট ও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারের আবেদন তাদের।
বন্যা পরিস্থিতির কারণে বন্ধ রয়েছে উপদ্রুত এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ। ফলে অনেকের মোবাইল ফোনের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ার পর আর যোগাযোগ করতে পারছেন না। সেই সঙ্গে বেশ কিছু মোবাইল টাওয়ার বিকল্প উপায়ে চালানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ায় নেটওয়ার্কেও সমস্যা হচ্ছে।
জেলায় বসবাস করা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে দেশের বাইরে ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত মানুষ উদ্বিগ্ন। তারা দ্রুত মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল করার অনুরোধ জানিয়েছেন, যাতে কোনোভাবে মোবাইলে চার্জ থাকা পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে খবর নিতে পারেন, তাদের উদ্ধারে সম্ভাব্য সহযোগিতা করতে পারেন।
বন্যা কবলিত এলাকায় খাবার ও পানির প্রচণ্ড সংকট তৈরি হয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি বিপদে আছেন অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুরা।
পাহাড়ি ঢল ও বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে সোনাগাজী উপজেলার বড় ফেনী নদীর ওপর নির্মিত মুহুরী রেগুলেটরের ৪০টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।
ফেনীর অধিকাংশ বাড়িতে ঢুকেছে পানি, একটি বড় অংশ এখন পানির নিচে।
বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতিতে মোবাইল নেটওয়ার্কের সর্বশেষ অবস্থা ও প্রস্তুতি সম্পর্কে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘বন্যাদুর্গত এলাকার ১৩ শতাংশ সাইট ডাউন আছে। কয়েকটি উপজেলায় অপটিক্যাল ফাইবার ড্যামেজ হওয়ার কারণে নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন আছে কয়েকটি জায়গায়, সেখানে জেনারেটর ব্যবহার করা হচ্ছে৷ নেটওয়ার্ক একেবারে বিচ্ছিন্ন হলে ১০টি ভিএসএটি প্রস্তুত আছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ফ্রি করতে নির্দেশনা দেওয়া আছে।’
পানি উন্নয়নের বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম বড়ুয়া বলেন, ‘ফেনীর রামগর পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮৬ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। পানি রয়েছে বিপৎসীমার ২১৮ সেন্টিমিটার উপরে। ফেনীর পরশুরামের সঙ্গে আমাদেরও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।’
ফেনী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হোসেন মাহমুদ শামীম ফরহাদ বলেন, ‘আমাদের প্রায় ৭০ শতাংশ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভবনগুলোর নিচতলায় পানি ঢুকে মিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই পানি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকবে।’
ফেনীর জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার বলেন, ‘ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরামের পাশাপাশি আজ সকাল থেকে সদর উপজেলাতেও বন্যার পানি ঢুকে গেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের প্রথম লক্ষ্য উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা।’
তিনি বলেন, ‘জেলার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আমরা আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করেছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিচতলাগুলোতে পানি উঠে গেছে, উপরের তলাগুলোতে উদ্ধারকৃতদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে।’
‘সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিজিবি, কোস্ট গার্ডের পাশাপাশি স্থানীয়রাও উদ্ধার কাছে আমাদেরকে সহযোগিতা করছেন। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খিচুরি রান্না করে বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া, শুকনো খাবারসহ সম্ভাব্য সব সহযোগিতার চেষ্টা আমরা করছি,’ যোগ করেন তিনি।
সেনাবাহিনী থেকে ৪০টি উদ্ধারকারী যানসহ ১৬০ জন সদস্যকে ফেনীতে পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে ইতোমধ্যে একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি ৮টি উদ্ধারকারী যান নিয়ে নৌবাহিনীর ৭১ জন সদস্য উদ্ধারকাজ করছে। এ ছাড়াও বিজিবিসহ আরও নৌযান আনার কার্যক্রম চলছে।
দেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ফেনী সফরে যাচ্ছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।