সুপ্রভাত ডেস্ক »
ফুটবল থেকে নির্বাসিত হল রাশিয়া। ইউক্রেনে যুদ্ধ করার জন্য বিশ্ব ফুটবলে রাশিয়াকে একঘরে করে দিল ফিফা এবং উয়েফা। এর ফলে এই বছর কাতার বিশ্বকাপে খেলা হবে না রাশিয়ার। খেলা হবে না ইউরোপীয় ফুটবলেও।
বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের প্লে-অফ ম্যাচে পোলান্ডের সঙ্গে রাশিয়ার খেলার কথা ছিল আগামী মাসে। বিশ্ব ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা ফিফা রাশিয়াকে নির্বাসিত করায় সেই ম্যাচ বাতিল হয়ে গিয়েছে। ইউরোপীয় ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা ইউরোপা লিগে রাশিয়ার ক্লাবগুলি আর খেলতে পারবে না। রাশিয়ার মহিলা ফুটবল দলও ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ গ্রহণ করতে পারবে না।
ফিফা এবং উয়েফা এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ফিফা এবং উয়েফা যৌথ ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রাশিয়ার কোনও জাতীয় এবং ক্লাব দল ফিফা ও উয়েফার কোনও প্রতিযোগিতায় খেলতে পারবে না। পরবর্তী বি়জ্ঞপ্তি জারি না করা পর্যন্ত নির্বাসনের এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।’
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ইউক্রেনে আক্রান্তদের পাশে রয়েছে ফুটবল। গোটা বিশ্বের ফুটবল এ ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ আছে। দুই সংস্থার প্রেসিডেন্টই আশাবাদী দ্রুত ইউক্রেনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, যাতে ফুটবল আবার শুরু হয়, ফুটবলের মাধ্যমে শান্তি এবং ঐক্য ফিরে আসে।’
এর আগে সোমবার ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) সব আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংগঠনগুলির কাছে আর্জি জানিয়েছিল, রাশিয়া এবং বেলারুশের খেলোয়াড়, কর্মকর্তা এবং দলগুলিকে যেখানে যত দূর সম্ভব যেন বহিষ্কার করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই রাশিয়াকে নির্বাসিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিফা এবং উয়েফা।
এর আগে রাশিয়াকে নির্বাসনের সিদ্ধান্ত নেয়নি ফিফা। তার বলেছিল, রাশিয়াকে তাদের যাবতীয় ফুটবল ম্যাচ নিরপেক্ষ দেশে খেলতে হবে। তারা নিজেদের জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় সঙ্গীত ব্যবহার করতে পারবে না। কিন্তু ফিফার এই সিদ্ধান্ত প্রায় কোনও দেশই মানতে পারেনি।
ইংল্যান্ড সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনও আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ খেলবে না তারা। ভয়ঙ্কর বিপদে থাকা ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইংল্যান্ড। সে দেশের ফুটবল নিয়ামক সংস্থা এফএ সামরিক অভিযানের তীব্র নিন্দা করে জানিয়েছিল, রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনও পর্যায়ের কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচই খেলবে না ইংল্যান্ড।
ইংল্যান্ডের এই ঘোষণার আগেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে না খেলার কথা জানিয়েছিল পোলান্ড, সুইডেন এবং চেক প্রজাতন্ত্র। ফিফা কী ভাবে রাশিয়াকে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে খেলার অনুমতি দিচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন পোলান্ডের ফুটবল নিয়ামক সংস্থার সভাপতি। ফুটবল থেকে রাশিয়াকে নির্বাসিত করার দাবিও করেছিল পোলান্ড।
পোলান্ড খেলতে অস্বীকার করার পর চেক প্রজাতন্ত্র এবং সুইডেনও জানিয়ে দিয়েছিল, ফিফার নির্দেশ মেনে নেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এই তিন দেশই এক সঙ্গে ফিফাকে অনুরোধ করেছিল, রাশিয়াকে প্রতিযোগিতা থেকেই বহিষ্কার করার জন্য।
পোলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সেজারি কুলেজা ফিফার সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘‘ফিফার সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা রাশিয়ার বিরুদ্ধে খেলতে আগ্রহী নই। নিজেদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোনও সম্ভাবনা নেই। রাশিয়া যে নামেই মাঠে নামুক আমরা খেলব না।’’
চেক প্রজাতন্ত্রের ফুটবল সংস্থা আরও এক ধাপ এগিয়ে জানিয়েছিল, নিরপেক্ষ কেন্দ্রেও রাশিয়ার সঙ্গে খেলবে না তারা। তাদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে রাশিয়ার সঙ্গে খেলার কোনও প্রশ্নই নেই। আমাদের সব কর্তা, ফুটবলার এ নিয়ে সহমত। আগে যুদ্ধ পরিস্থিতির অবসান দরকার। তার পর খেলার কথা ভাবা যাবে।’
শেষ পর্যন্ত ফুটবল বিশ্বের দাবি মেনে নিল ফিফা এবং উয়েফা। রাশিয়াকে একঘরে করে দেওয়া হল ফুটবল বিশ্বে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা