কোরপাটেলিক
পৃথিবীর সব মানুষই কম-বেশি জীবনে উদ্বাস্তু
যেমন মেঘেরা উদ্বাস্তু
ঘ্রাণিত ফুলেরা উদ্বাস্তু
যেমন প্রেমেরা উদ্বাস্তু
শোকার্ত জীবন আরো বেশি উদ্বাস্তু
আনন্দ জীবন আরো বেশি উদ্বাস্তু
লোরকা একদিন হাঁটতে হাঁটতে
নেরুদাকে বলেছিলো
ওই যে জানালা দেখছ বাড়িটার
ওটা হচ্ছে ‘কোরপাটেলিক’
ওই যে কুকুরটা- সেও ‘কোরপাটেলিক’
নেরুদা জানতো না কোরপাটেলিক মানেটা কী
লোরকা বলেছিলো সব কথার মানে হয় না
কবিদের মানে করে নিতে হয় :
উদ্বাস্তু ‘ শব্দটার মানে করতে হবে আমাদের।
জ্যামিতি বুঝি না
সব বুঝি কম-বেশি
কম-বেশি বুঝি বিজ্ঞান বিস্তার
শুধু জ্যামিতি বুঝি না
জরা এসে শোনায় মরার বর্ণনা
স্মৃতির সংসারে কেঁপে ওঠে কৈশোর যৌবন
আহারে সময়- বেদনা কাহারে বলে
বেদনা দেখতে কেমন!
বেদনারে চিনি হাড়েমাংসে
কিন্তু বেদনার ম্যাজিক বুঝি না…
কেউ কেউ বোঝে – অথচ বলে না
বলার সাহস নেই
মৃত্যুকে মানি না আমি
একথাটি বলতে গেলে
স্বর্গ – মর্ত্য- পাতালেরে ব্যাপ্ত করে
সাহস লাগে সাহস লাগে :
সাহস দুষ্প্রাপ্য বস্তু
বীরদেরও সাহস থাকে না বলে
বীরেরা ও মৃত্যুতে সন্ত্রস্ত হয়
ভয়ানক ভয় পায়:
অথচ আমাকে দেখো
ভয় চিনি – কিন্ত ভয়েরে মানি না
সব জানি কম-বেশি
বুঝি,আশার গণিত ভালোবাসা নয়
নিজেকে বিজয় করা শ্রেষ্ঠতম জয়।
অসহ্যসুন্দর
তুমি পাকামাকালের চেয়ে অসহ্যসুন্দর
তোমার মুখশ্রী
তুলনারহিত
কথার শোভন হার মানায় শিল্পকে
মিথ্যাকে কীভাবে সোনার মুখোশে ঢাকতে হয়
এই ক্যারিশমাটা তুমি জানো সবচেয়ে ভালো-
এই ভালো জানাটাই
কোনো একদিন সকালে
ডেকে আনবে তোমার সমূহ সর্বনাশ
সর্বনাশ মানে হলো জীবন্ত পতন
একবার চেতনে হাত রাখো
দেখবে — তুমি দেখবে
পতন শব্দের কোনো বিকল্প হয় না
তুমি রূপ চেনো
ক্ষমতাও চেনো
কিন্তু ভুবন চেনো না
সর্বনাশ আসে চুপিচুপি ইঁদুরের পায়ে হেঁটে।
কেন যে গোলাপ ফোটে
অজস্র মৃত্যুর প্রাণ থেকে
মাত্র তিনটি জীবন্ত গোলাপ ফোটে
কী আশ্চর্য!
কার জন্য ফোটে?
একটি আমার জন্য
একটি তোমার জন্য
আরেকটি তবে কার জন্য?
অবশ্যই
আমাদের ভবিষ্যৎ শিশুটির জন্য।
কেউ আজকাল হঠাৎ কিশোর বেলার
ডাক নাম ধরে ডেকে উঠলে
চমকে যাই থমকে যাই
ভয়ে ত্রাসে কুঁচকে যাই চুপসে যাই
বলি আমি নই- অন্য কাউকে ডাকো
আমার শৈশব নেই
আমার কৈশোর নেই
আমার যৌবন ধীবরের জালে পড়া মাছ
দুলাল মরিয়া গেছে অনেক অনেক আগে
মরে ভূত হয়ে গেছে
মৃত এক সোনাব্যঙ সাক্ষি আছে
সকাল গড়িয়ে গেছে
দুপুর গড়িয়ে গেছে
বিকেল গড়িয়ে গেছে সন্ধ্যার চাকার দিকে
মৃতব্যঙ জানে ভালো করে জানে
দুলাল এখন এক বহুদূর মৃত নক্ষত্রের নাম :
অজস্র মৃত্যুর প্রাণ থেকে
মাত্র তিনটি জীবন্ত মানুষ ফোটে
একজন আমি
একজন তুমি
আরেকজন কে?
ভবিষ্যৎ, ভবিষ্যৎ, ভবিষ্যৎ, ভবিষ্যৎ।
ফাউজুল কবিরের অন্যান্য গ্রন্থ :
আমার সুন্দর আমার টেন্টালাস [১৯৯৬]
একা হলে জলতরঙ্গ নীলকণ্ঠ বাউল [১৯৯৭]
কবির বাড়ি মেঘের নীলে [২০০৯]
প্রতিদিন জন্মচক্র প্রতিদিন যাদুমন্ত্র [২০০৯]
মেডুসার খেলা [২০১৫]
রহস্যের চাবিকাঠি [২০১৫]
সময়ের মায়াবী রাখাল [২০১৭]
জেগে ওঠো পাখির প্রমায় [২০১৯]
শিল্প মাতালের ধন [২০২০]
অদৃশ্যের মরমী অর্গান [২০২২]