ফড়িং

ফারহানা খানম »

ফড়িংটা ধরেছি! ধরেছি!
নিলয় খুশিতে চিৎকার করে উঠল। তার হাতে একটুকরো ছোট খাঁচা। খাঁচার ভেতরে রঙিন এক ফড়িং, যার ডানা নীলচে সবুজ। স্কুল থেকে ফিরে সে খেলার মাঠে গিয়ে ফড়িং ধরতে ধরতে হাঁপিয়ে উঠেছিল, অবশেষে আজকের মতো তার সংগ্রহ সফল হয়েছে।
‘দেখো দেখো! কত সুন্দর!’
তার ছোট বোন রিমি এগিয়ে এসে বলল, ‘ভাইয়া, এটা কি তুই রেখে দিবি?’
নিলয় গর্বে বলল, ‘হ্যাঁ! এটা আমার। আমি খাবার দেব, খাঁচায় রাখব, স্কুলে নেব, সবাইকে দেখাব!’
রিমি একটু চুপ করে থাকল। ফড়িংটা বারবার খাঁচার গায়ে গায়ে ধাক্কা দিচ্ছে যেন পালাতে চাইছে।
‘ভাইয়া, ও বোধহয় কাঁদছে, জানিস?’
নিলয় হেসে বলল, ‘আরে ফড়িং আবার কাঁদে নাকি! এটা তো পোকা!’
রিমি নিচু গলায় বলল, ‘মা বলেছে, প্রাণী যত ছোটই হোক, তারও একটা বাড়ি থাকে। মা তোকে মনে নেই বলেছে, ‘যে যেমন জায়গায় জন্মায়, সেখানেই সে ভালো থাকে?’
নিলয় একটু চিন্তায় পড়ল। ফড়িংটা আবার ডানা ঝাঁপটালো। খাঁচার ভেতর ওর দম যেন বন্ধ হয়ে আসছে।
রিমি বলল, ‘ভাইয়া, আমরা যদি ওকে রেখে দিই, তবে হয়তো ও মারা যাবে। আমি আজ গল্প বইয়ে পড়েছি, ফড়িংরা খুব বেশি দিন বাঁচে না। তুই যদি ওকে আজই না ছাড়িস, তাহলে কাল সকালে ও হয়তো থাকবেই না।’
নিলয় হঠাৎ ভয় পেয়ে গেল। সে চুপচাপ খাঁচার দিকে তাকিয়ে রইল।
‘তাহলে… আমি কি ওকে ছেড়ে দেব?’
রিমি মাথা নাড়ল।
‘আয়, চল নদীর ধারে যাই, যেখানে তুই ওকে ধরেছিলি। ওর বাড়ি হয়তো ওইখানেই।’
দুজনে খাঁচা হাতে রওনা দিল মাঠ পেরিয়ে নদীর পাড়ের দিকে। বাতাসে ফড়িংটার ডানা আবার দুলে উঠল।
‘ভাইয়া, খাঁচা খোল।
নিলয় খাঁচার দরজাটা খুলে দিল ধীরে ধীরে। কিন্তু ফড়িংটা তখনো বেরোয় না। যেন ভয় পাচ্ছে।
রিমি ফিসফিস করে বলল, ‘ভাইয়া, তুই চুপ থাক, ওকে সাহস দে মনে মনে।’
নিলয় চুপচাপ চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলল, ‘যাও বন্ধু, ফিরে যাও তোমার খোলা আকাশে।’
মুহূর্তখানেক চুপ করে থেকে ফড়িংটা হঠাৎই এক ঝটকায় উড়ে গেল। রোদে তার ডানা ঝলমল করল। আকাশে উড়তে উড়তে যেন একটা ছোট্ট ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গেল দূরে।
নিলয় তাকিয়ে রইল। তার চোখে একটু জল এসে পড়ল। রিমি বলল, ‘ভাইয়া, তুই কাঁদছিস?’
নিলয় বলল, ‘না, রোদে চোখে লেগেছে।’
তারপর একটু থেমে বলল, ‘আর কোনোদিন আমি ফড়িং ধরব না।’
রিমি খুশি হয়ে বলল, ‘তাই না ভাইয়া, ওরাও তো বন্ধু, তাই না?’
নিলয় মাথা নাড়ল। সে জানে, আজ সে শুধু একটা ফড়িং নয়, একজন বন্ধু ফিরিয়ে দিয়েছে তার নিজের বাড়িতে।