প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেছেন, মহামারীর প্রকোপ কমলে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া সম্ভব হয়, তাহলে এ বছরের মধ্যেই প্রাথমিকের শিক্ষাবর্ষ শেষ করা হবে। আর সেপ্টেম্বরে স্কুল না খুললে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ শিক্ষাবর্ষ দীর্ঘায়িত হতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখনই খুলুক, এবার প্রাথমিকের সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ইরাব) আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সেমিনারে সরকারের এই পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। মহামারীর কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আপাতত ৬ অগাস্ট পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করে রেখেছে সরকার, যদিও এরপর স্কুল খোলা যাবে কি না, সে নিশ্চয়তা এখনও মেলেনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদ্যালয় খোলার পর কতটুক সিলেবাসের উপর পরীক্ষা নেওয়া হবে সেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমিকে (নেপ) সংশোধিত সিলেবাস তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। “তবে প্রয়োজনে চলতি শিক্ষাবর্ষ বাড়িয়ে এবং পরের শিক্ষাবর্ষ কমিয়ে আনার পরিকল্পনাও রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে বর্তমান শিক্ষাবর্ষ আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।” বিদ্যালয় সেপ্টেম্বরে যদি খোলে, কিংবা না খুললে কীভাবে পরীক্ষা নেওয়া যায় সে বিষয়ে সংশোধিত সিলেবাস প্রণয়নে আমরা কাজ হাতে নিয়েছি। যদি খোলা হয়, তাহলে এক ধরনের প্রস্তুতি আমাদের আছে, না হলে আরেক ধরনের প্রস্তুতি আমাদের নিতে হবে।”
“যেসব চ্যাপ্টারে বেশি গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্কেজ রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে সিলেবাস তৈরির নির্দেশনা আমরা দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের শ্রেণিভিত্তিক মৌলিক সক্ষমতা অর্জনের বিষয় চিহ্নিত করে নতুন করে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে শিক্ষাবর্ষ শেষ করতে জোর দিচ্ছি।” প্রাথমিক সমাপনীসহ ক্লাসভিত্তিক পরীক্ষা কীভাবে নেওয়া যায়, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি তা নিয়ে কাজ করছে জানিয়ে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বন্ধের কোনো পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই। বরং এ পরীক্ষা আরও যুগপযোগী করতে একটি বোর্ড গঠনের চিন্তাভাবনা চলছে।
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন তাদের করা একটি জরিপ প্রকাশ করেছে। ‘চিলড্রেন ভয়েসেস ইন দ্য টাইম অব কোভিড-১৯’ শিরোনামে প্রকাশিত এই জরিপে বলা হয়, মহামারির সময়ে স্বাভাবিক জীবনে ছন্দপতনের জন্য সরাসরি তিনটি কারণকে উল্লেখ করেছে শিশুকিশোররা। সেগুলো হলো শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া, সামাজিক দূরত্বের কারণে মানসিক চাপ এবং পরিবারে দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়া। শতকরা ৭১ ভাগ শিশু ও তরুণ বলেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে তারা নিজেদের শিক্ষাজীবন নিয়ে চিন্তিত। তারা বিচ্ছিন্ন ও নিঃসঙ্গ অনুভব করছে। ওয়ার্ল্ড ভিশন তেরোটি উন্নয়নশীল দেশে এই জরিপ চালিয়েছে। দীর্ঘদিন এমন থাকলে শিশুকিশোরদের দ্বিধা, ভয় ও হতাশা আরও বাড়বে। এর থেকে সরে আসতে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে তাদের শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত রাখতে হবে।
করোনায় শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ধারাবাহিকতা রক্ষাই আমাদের এখন বড় চ্যালেঞ্জ। আর শিক্ষার ধারাবাহিকতা ধরে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উন্নত বিশ্বে এখন দূরশিক্ষণ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি ইরানেও অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রমে প্রধানত জনপ্রিয় অ্যাপ্লিকেশন হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। ইরানের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘শাদ’ নামে একটি লার্নিং অ্যাপ চালু করেছে। এ অ্যাপে সব শিক্ষার্থীকে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য বলা হয়েছে, যাতে তারা অনলাইনে তাদের শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে। এছাড়া গুগল ক্লাসরুম, গুগল হ্যাংসআউট, স্কাইপ, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, যার মাধ্যমে সহজেই শ্রেণিকার্যক্রম চালানো যায়। দূরশিক্ষণের আওতায় অসংখ্য শিক্ষাবিষয়ক অ্যাপস আবিস্কৃত হয়েছে, যা দিয়ে খুব সহজে লকডাউনে থেকেও বাড়িতে বসে শিক্ষাপ্রদান ও গ্রহণ করা যায়। অন্তত শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর শিক্ষার্থীরা এ সুবিধার আওতায় আসতে পারে। আর আমাদের দেশে দরিদ্র পরিবার অনেক। সেসব পরিবারের শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখেই সরকারকে পুরো পরিকল্পনা সাজাতে হবে। পুরো প্রক্রিয়ায় সরকার, শিক্ষাবিদ, প্রযুক্তি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, টেলিকম এজেন্সি, সুশীল সমাজ এবং এনজিওগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
মতামত