সুপ্রভাত ডেস্ক »
ইউরোপ ও রাশিয়ার বাজারে প্রক্রিয়াজাত হোয়াইট ফিশ রপ্তানি করার পরিকল্পনা করেছে চট্টগ্রামভিত্তিক চিংড়ি রপ্তানিকারক এপেক্স ফুডস লিমিটেড। কড, হ্যাডক, হেক ও সোলের মতো কয়েক প্রজাতির মাছ হোয়াইট ফিশ নামে পরিচিত।
ইউরোপ, আফ্রিকা থেকে হোয়াইট ফিশ আমদানি করে প্রক্রিয়াজাত করে সেগুলো আবার ইউরোপে রপ্তানি করবে প্রতিষ্ঠানটি। কর্মকর্তারা বলছেন, এ প্রক্রিয়ায় আমদানি করা মাছের মূল্য সংযোজন হবে প্রায় ৪০ শতাংশ। আর প্রতি কেজি মাছ প্রসেসিং করে আয় হবে এক ডলারের বেশি।
শুল্কমুক্ত সুবিধায় হোয়াইট ফিশ আমদানি করতে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে এপেক্স ফুড। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি মৎস্য অধিদপ্তরে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে হোয়াইট ফিশ আমদানিতে শুল্কের পরিমাণ ৫৮ শতাংশ। খবর টিবিএস।
সভায় মৎস্য অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশন, এপেক্স ফুড লিমিটেডসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। হোয়াইট ফিশ আমদানির অনুমতির বিষয়ে সভায় পক্ষে-বিপক্ষে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা। আমদানির অনুমতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে একটি কারিগরি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ওই বৈঠকে।
এপেক্স ফুডসের পরিচালক অসীম কুমার বড়ুয়া বলেন, সরকারি সব নিয়মনীতি অনুসরণ করেই মাছ আমদানি, খালাস ও রপ্তানি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। ইউরোপে মাছ প্রসেসিংয়ে শ্রমিকের খরচ বেশি হওয়ায় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এ প্রক্রিয়া বাংলাদেশে সম্পন্ন করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
অচিরেই হোয়াইট ফিশ আমদানির অনুমতি পাওয়ার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এপেক্স ফুডসের কারখানায় দৈনিক ৬৭ টন চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণের সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু চিংড়ির অপ্রতুলতার কারণে প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে এই সক্ষমতার ৩৫-৪০ শতাংশ ব্যবহার করতে পারছে। অব্যবহৃত সক্ষমতা কাজে লাগানোর জন্য তারা হোয়াইট ফিশ আমদানি করতে চায় বলে জানান কোম্পানিটির কর্মকর্তারা।
তারা জানান, সরকারের অনুমতি পেলে আমদানিকৃত হোয়াইট ফিশ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস করার পর চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকায় তাদের কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করা হবে। তারপর রপ্তানিকারকের পক্ষে রাশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোতে রপ্তানি করবে।
বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএফএ) প্রেসিডেন্ট নুরুল কাইয়ুম বলেন, মাছ আমদানির পর প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় কত শতাংশ বাদ যাবে এবং কত শতাংশ মূল্য সংযোজন হবে, তা নিরূপণ করা জরুরি। কী পরিমাণ মাছ আমদানি হচ্ছে এবং আমদানিকৃত মাছের মধ্যে কী পরিমাণ মাছ রপ্তানি হচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ ও নিয়মিত রিপোর্টের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
মৎস অধিদপ্তরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মুনিরুজ্জামান বলেন, সভায় রপ্তানির উদ্দেশ্যে হোয়াইট ফিশ আমদানির পক্ষে-বিপক্ষে মত এসেছে। তবে এখনও রূপরেখা প্রণীত হয়নি।
তিনি আরও বলেন, শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধা এবং নগদ প্রণোদনা সুবিধার অপব্যবহার হবে কি না, সেগুলো কারিগরি কমিটির গঠনের পর সভায় আলোচনায় আনা হবে।
এপেক্স ফুডসের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে তাদের তিনটি কোল্ড স্টোরেজের ধারণক্ষমতা ২ হাজার ৪০০ টন। মাছ রপ্তানি খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ১৫০ কোটি টাকা। বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। এপেক্স ফুডে কাজ করে প্রায় ১ হাজার শ্রমিক। প্রতিষ্ঠানটি বছরে ৪০০ কোটি টাকার মাছ রপ্তানি করে। তবে উৎপাদন কমে যাওয়ায় বছরে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার এখন চিংড়ি রপ্তানি হয় ।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর এবং টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে ইয়েমেন, প্যারাগুয়ে, ওমান, কুয়েত, কাতার, চীন, পাকিস্তান, মিয়ানমার ও ভারত থেকে সামুদ্রিক মাছ আমদানি হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ৮০ হাজার টন সামুদ্রিক মাছ আমদানি হলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে সেটি নেমে আসে ১২ হাজার টনে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ফ্রোজেন ফিশ আমদানি হয়েছিলো ৬৬ হাজার ৩৭৪ মেট্রিক টন।
তবে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে সামুদ্রিক মাছ আমদানি প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ আমদানিকৃত মাছ খালাসের আগে এসব মাছে ভারী ধাতু আছে কি না, তা পরীক্ষা করা হয় না। বিভিন্ন সময়ে আমদানি করা সামুদ্রিক মাছে ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।