রাঙামাটি থেকে কাপ্তাই যাওয়ার ১৮ কিলোমিটার সড়কটিকে বলা হতো মুগ্ধতার সড়ক। দেশি বিদেশি পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণ এই সড়কটি এবং চারপাশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সজ্জা। সড়কটির এক পাশে সবুজ পাহাড়, অন্যপাশে কাপ্তাই হ্রদের নীল জলরাশিÑদুই মিলিয়ে প্রকৃতি যেন এখানে তার সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে দিয়েছে। সড়কটি ঘিরে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি রিসোর্ট ও ট্যুরিস্ট স্পট। কিন্তু যারা উন্নয়নের কারবারি তারা কি এই সৌন্দর্যের মুগ্ধতা আমলে নেবে। নতুবা নির্মাণের ৫ বছর পর সড়ক সম্প্রসারণের পরিকল্পনা কিভাবে এলো, কেনইবা এর হঠাৎ প্রয়োজন পড়লো?। আমাদের রাঙামাটি প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, ১২ ফুট চওড়া সড়কটিকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে আরো চওড়া করা এবং সড়কের পাশে ড্রেন, বাথরুম, বসার স্থান নির্মাণের জন্য পৃথক প্রকল্প গ্রহণ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়কের দুধারে দেদারসে পাহাড় কাটা হয়েছে। অন্তত শ খানেক পাহাড় কাটা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ধরণের নির্বিচার কর্তনের ফলে পাহাড়ের মাটি আলগা হয়েছে, এতে পাহাড় ধসের আশঙ্কাও সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন পাহাড়ের মাটি কেটে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সড়ক সম্প্রসারণের প্রয়োজনে পাহাড়ের কিছু কিছু অংশ কাটতে হয়েছে একথা বলেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি। যেভাবে ছোট বড় পাহাড় কাটা চলেছে অবিরাম, তাতে জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর কেউ বাধা দিচ্ছে না, এমনকি পাহাড় কাটার নিয়মকানুন না মেনে দিনের পর দিন পাহাড় সাবাড় করে দেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসক বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত নন বলে জানিয়েছেন সংবাদ মাধ্যমে; এতগুলি সরকারি প্রশাসনÑসংস্থা রয়েছে তারা প্রকৃতি ও পরিবেশের ধ্বংসযজ্ঞ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তাহলে প্রকৃতি ও পরিবেশের সুরক্ষা কার ওপর ন্যস্ত?
রাঙামাটিÑকাপ্তাই সড়ক নির্মিত হয়েছে ৫ বছর আগে। এত বছর পর প্রকল্প সম্প্রসারণ কোন যুক্তিতে? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় প্রকল্পে নতুন বিষয় যোগ, প্রকল্পব্যয় বৃদ্ধি ও প্রকল্পের সময় বাড়ানোতে বারবার অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছেন। কারা এ জন্য দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দিয়েছেন। আলোচ্য প্রকল্পটি শুরু করার সময় একসাথে প্রয়োজনীয় আইটেম সংযুক্ত করা হলে এখন পাহাড় নিধন, প্রকৃতি ও পরিবেশের সৌন্দর্যহানির ব্যাপারটি ঘটতো না। প্রধানমন্ত্রী বারবার প্রকৃতি ও পরিবেশের সুরক্ষা করে উন্নয়ন প্রকল্প নিতে বলেছেন, তা কি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অবহিত নন? এখন প্রকৃতি ও পরিবেশ ন্যাড়া করে গোটা এলাকার সৌন্দর্যহানি করার যৌক্তিকতা কি? এরফলে এলাকাটি পর্যটকদের আকর্ষণ হারাবে।
আমরা চাই এলজিইডির উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদফতর পাহাড় কাটা, বৃক্ষ নিধন ও অন্যান্য পরিবেশগত ক্ষতি বিশদ পর্যালোচনা পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। দেশে বিদেশে বহু আলোচিত রাঙামাটির পাহাড়ধসে শোচনীয় ট্র্যাজেডি কি প্রশাসন বিস্মৃত হয়েছেন!
মতামত সম্পাদকীয়