প্যারাবন রক্ষায় যথেষ্ট উদ্যোগ নেই কেন

কক্সবাজার শহর থেকে ১১ কিলোমিটার উত্তরে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ছোট্ট দ্বীপ সোনাদিয়া। লাল কাঁকড়া, কাছিম ও বিরল পাখির কারণে এই দ্বীপ সুপরিচিত। সোনাদিয়া দ্বীপটিকে ২০০৬ সালে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। বলা হয়েছে, সেখানকার মাটি, পানি ও প্রাকৃতিক পরিবেশের কোনো পরিবর্তন করা যাবে না।
কিন্তু দুঃখজনক হলো, সংকটাপন্ন সে সোনাদিয়া দ্বীপে প্যারাবন নিধন থেমে নেই। প্যারাবনের গাছ কেটে চলছে চিংড়িঘেরের নির্মাণকাজ। এবার প্রায় ১ হাজার ১০ একর প্যারাবন ধ্বংস করে ১০টির বেশি চিংড়িঘের নির্মাণ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এমন একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি প্যারাবনের দখল নিয়ে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে গত ২ মার্চ দুজন মারা গেছেন বলে বলা হয়েছে। এই ঘটনায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরিবেশবাদীরা বলছেন, আগের ঘটনায় ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্যারাবননিধন থামছে না। একজন সাংবাদিক গত ২৭ জুন দুপুরে সরেজমিনে দেখতে পান, ৮-৯টি খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে চিংড়িঘেরের বেড়িবাঁধের নির্মাণকাজ চলছে। ইতিমধ্যে শ্রমিকেরা গাছপালা কেটে সাফ করেছেন। কিছু অংশে পেট্রল ঢেলে আগুনে গাছপালা পুড়িয়ে ফেলছে।
মাসের পর মাস ধরে প্যারাবন ধ্বংস করে চিংড়িঘের নির্মাণের কারণে ঝুঁকির মুখে রয়েছে বঙ্গোপসাগরের মোহনার ছোট দ্বীপ সোনাদিয়া। বন ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধেও স্থানীয় প্রশাসন, বন বিভাগ ও বেজা কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা।
এর আগে গত চার মাসে দ্বীপের প্রায় দুই হাজার একর প্যারাবন নিধন করে ৩৭টি চিংড়িঘের নির্মাণ করেছে শতাধিক প্রভাবশালী।
ইকো-ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলার জন্য সরকার নামমাত্র সেলামিতে (১ হাজার ১ টাকা) সোনাদিয়ার ৯ হাজার ৪৬৬ দশমিক ৯৩ একর বনভূমি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) বরাদ্দ দেয়। এর মধ্যে প্যারাবন পড়েছে অন্তত ৮ হাজার একর। ২০১৭ সালের মে মাসে বেজা উপকূলীয় বন বিভাগের কাছ থেকে তা অধিগ্রহণ করে। কিন্তু এখনো তা নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি তারা। এই বিশাল এলাকা পাহারার দায়িত্বে আছেন মাত্র ৫ জন নিরাপত্তাকর্মী ও ১০ জন আনসার সদস্য।
তবে মহেশখালীর ইউএনও মীকি মারমা সাংবাদিকদের বলেন, প্যারাবন নিধন করে চিংড়িঘের নির্মাণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বেজা কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা মামলা করেনি। তিনি বলেন, বেজা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে অবৈধ চিংড়িঘের উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ ধরনের কাজ তো রাতের আঁধারে বা গোপনে চলছে না। দিনেদুপুরে প্যারবন ধ্বংস করে মাছের ঘের বানানো হচ্ছে অথচ বাধা দেওয়ার কেউ নেই। আদালতের নিষেধাজ্ঞাকেও পরোয়া করছে না যারা তারা কি প্রশাসন তথা সরকারের চেয়েও শক্তিধর?