সুপ্রভাত ডেস্ক »
বিশ্বের প্রভাবশালী নেতা, রাজনীতিবিদ ও বিলিয়নিয়ারদের গোপন সম্পদ ও চুক্তির তথ্য ফাঁস হয়েছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্যানডোরা পেপার্স’।
প্যান্ডোরা পেপার্স হলো বিশ্বের ধনী ও প্রভাবশালী কিছু মানুষের গোপন সম্পদ, কর ফাঁকি, অর্থ পাচার ও কালো টাকা সাদা করার তথ্য সংবলিত প্রায় ১২ মিলিয়ন ফাঁস হওয়া নথি।
প্যান্ডোরা পেপারসকে বলা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির নথিগুলোর একটি।
করস্বর্গ হিসেবে পরিচিত পানামা, দুবাই, মোনাকো, সুইজারল্যান্ড ও ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া দ্বীপপুঞ্জের মতো দেশ এবং অঞ্চলের বিভিন্ন কোম্পানিতে বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালীরা যে অর্থ রেখেছেন ও গোপন লেনদেন করেছেন সেই তথ্য ফাঁস হয়েছে প্যান্ডোরা পেপারসে।
অফশোর কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগকারী হিসেবে বিভিন্ন দেশের সাবেক ও বর্তমান অন্তত ৩৫ জন নেতার নাম পাওয়া গেছে। এছাড়াও পাওয়া গেছে ৩০০-র বেশি সরকারি কর্মকর্তার নাম।
গত সাত বছরে প্যারাডাইস পেপার্স, পানামা পেপার্স ইত্যাদি নামে যেসব গোপন দলিলপত্র ফাঁস হয়েছে, – এই প্যানডোরা পেপার্স হচ্ছে তার সবশেষ ঘটনা।
বিবিসি প্যানোরামা, ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এবং আরো কিছু মিডিয়া অংশীদার মিলে বিশ্বের ১৪টি কোম্পানির এই ১ কোটি ২০ লাখ দলিলপত্র হাতে পেয়েছে।
এ দলিলপত্রগুলো উদ্ঘাটন করেছে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস। আন্তর্জাতিক জোট আইসিআইজেতে রয়েছেন ৬৫০ জনের বেশি সাংবাদিক।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে প্যানডোরা পেপার্সে ভ্লাদিমির পুতিন, ইলহাম আলিয়েভ ও বাদশাহ আবদুল্লাহর গোপন সম্পদের তথ্য আছে
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চেক প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেই বাবিস, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তা, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার – এমন আরো অনেক নেতার গোপন সম্পদের তথ্য এতে প্রকাশ পেয়েছে।
বিবিসি প্যানোরামার প্রকাশ করা এসব দলিলে দেখা যায়, জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রে ৭ কোটি পাউণ্ডের বাড়ি-জমির মালিক হয়েছেন।
আরো জানা যাচ্ছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মোনাকোয় গোপন সম্পদের সাথে সম্পর্কিত।
পুতিনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বান্ধবী হিসেবে পরিচিত প্রভাবশালী নারী সভেৎলানা ক্রিভোনোগিখের নামও রয়েছে। তারা পুতিনের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছেন।
আজারবাইজানি প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ ও তার সহযোগীরা যুক্তরাজ্যে প্রায় ৪০ কোটি পাউন্ডের জমি-বাড়ি কেনাবেচার চুক্তিতে জড়িত ছিলেন বলে এসব দলিলে দেখা গেছে।
ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও তার স্ত্রীর ব্যাপারে জানা গেছে যে তারা লন্ডনে একটি অফিস কেনার সময় ৩১২,০০০ পাউণ্ড কর স্ট্যাম্প শুল্ক বাঁচিয়েছেন। ওই ভবনের মালিক একটি বিদেশী কোম্পানিও তারা কিনে নিয়েছেন।
জর্ডানের বাদশাহর আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তার জমি-বাড়িগুলো ব্যক্তিগত সম্পদ দিয়েই কেনা এবং সাধারণতঃ এরকম উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সম্পত্তি অফশোর কোম্পানির মাধ্যমেই কেনা হয় – নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের একান্ত কাছের মানুষ, তার মন্ত্রী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা গোপনে কোটি কোটি ডলার আয় করছে বলে জানানো হয়েছে ফাঁস হওয়া তথ্যে। এ বিষয়ে পরবর্তিতে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে।
এসব নথি বিশ্লেষণ করে বিবিসি জানায়, এগুলোর মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি, অর্থপাচার, বৈশ্বিক কর ফাঁকির মতো আর্থিক অপরাধ। সবচেয়ে বড় যে বিষয় এই নথির মাধ্যমে সামনে এসেছে, তা হলো এই বিশ্বনেতা ও ধনকুবেররা কীভাবে অন্য দেশে গোপন সম্পদ কেনার জন্য বৈধভাবে বিভিন্ন কোম্পানি খুলে বসেছেন। নানা গোপন সম্পত্তি কেনার সঙ্গে বিদেশে খোলা এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অন্তত ৯৫ হাজার।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন এই আর্থিক কেলেঙ্কারিতে উঠে এসেছে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, মেয়র, সামরিক বাহিনীর জেনারেল, এমনকি বিচারকের নামও। রয়েছেন বিশ্বের শতাধিক বিলিয়নিয়ার, তারকা ও ব্যবসায়ী নেতা।
এর আগে পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অর্থপাচারের চিত্র প্রকাশ্যে এসেছিল। করজাল এড়িয়ে বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়া, সেই অর্থ পাচার করা কিংবা অবৈধ আয়ের টাকায় ক্ষমতার মালিক হওয়ার ঘটনায় বেরিয়ে এসেছিল দেড়শ রাজনীতিবিদের আসল চেহারা, যাদের ৭২ জনই ছিলেন অতীতের এবং পরবর্তীকালের রাষ্ট্রপ্রধান।