ভোক্তা অধিকার-জেলা প্রশাসনের অভিযান
দোকানে ‘পেঁয়াজ নেই’ লেখা, গুদামে মিলল ৩৭ বস্তা
পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
নিজস্ব প্রতিবেদক
পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বাজার অস্থিতিশীল করায় নগরীতে দুই স্থানে অভিযানে নেমেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন। গতকাল পাহাড়তলী বাজারে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, অন্যদিকে নগরীর খাতুনগঞ্জে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। দুই স্থানে পরিচালিত অভিযানে মোট পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে।
পাহাড়তলী বাজারের দুই পাইকারি প্রতিষ্ঠানসহ তিন প্রতিষ্ঠানকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
গতকাল রোববার দুপুরে পাহাড়তলী পেঁয়াজের আড়তে এ অভিযান পরিচালনা করেন সংস্থাটি। অভিযানে নেতৃত্ব দেন সংস্থার বিভাগীয় উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ। অভিযানে অন্যদের মধ্যে সহযোগিতা করেন জেলা সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান ও রানা দেবনাথসহ সংস্থাটির অনান্য কর্মকর্তারা।
অভিযানে গুদাম থেকে পেঁয়াজ সরিয়ে রেখে মূল্য তালিকায় ‘পেয়াজ নাই’ লিখে রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজারকে অস্থিরতা করার সত্যতা খুঁজে পান এ সংস্থাটি। এতে আড়তদার মেসার্স বাছা মিয়া সওদাগরকে ২০ হাজার ও কালু শাহ এন্টারপ্রাইজকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। একই অভিযানে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তেল বিক্রি ও খাবারে মেশানো অনুমোদিত জর্দা রং বিক্রির দায়ে বায়েজিদের আমিন কলোনি এলাকার ছৈয়দ স্টোর নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকাসহ তিন প্রতিষ্ঠানকে মোট ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন সংস্থাটি।
সংস্থাটির জেলা সহকারী পরিচালক মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘পাহাড়তলী বাজারে মেসার্স বাছা মিয়া সওদাগর নামে একটি পেঁয়াজ বিক্রির প্রতিষ্ঠানের মূল্যতালিকায় ‘পেঁয়াজ নাই’ লিখে রাখেন। পরবর্তীতে আমরা তাদের সরিয়ে রাখা ৩৭ বস্তা পেঁয়াজ উদ্ধার করি। প্রতিষ্ঠানটি দুই দিন আগেও ১০৫ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করেছিলো। ভারতের বাজারে রপ্তানি বন্ধের কথা শুনে প্রতিষ্ঠানটি শনিবার থেকে চড়ামূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করে। আরো চড়া দরে বিক্রির আশায় আজ (রোববার) সকাল থেকে প্রতিষ্ঠানটির মালিক পেঁয়াজ সরিয়ে রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন। এর দায়ে প্রতিষ্ঠানটিকেসহ কালু শাহ এন্টারপ্রাইজকে ৪০ হাজার জরিমানা করা হয়েছে। অন্যদিকে একই অভিযানে বায়েজিদে এক প্রতিষ্ঠানে সরকারের টিসিবির সয়াবিন বিক্রি ও অনুমোদিত জর্দার রং বিক্রি করার দায়ে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
জনস্বার্থে বাজার তদারকিতে অব্যাহত অভিযান চলমান থাকবে বলে হুশিয়ারি করেন সংস্থাটির এ কর্মকর্তা।
অন্যদিকে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে গতকাল অভিযানে নেমেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
রোববার বিকাল ৩ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খাতুনগঞ্জ এলাকায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুকের নেতৃত্বে বাজার মনিটরিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। এ সময় মূল্য তালিকা না থাকা এবং ক্রয় বিক্রয় রশিদ অসংরক্ষণের মতো অনিয়ম এবং সরকার নির্ধারিত মূল্যে এর অতিরিক্ত দামে বিক্রির অপরাধে মেসার্স মেহের আলী ট্রের্ডাসকে ১০ হাজার টাকা এবং মোহাম্মদ আলী ট্রের্ডাসকে ১০ হাজার টাকাসহ দুই প্রতিষ্ঠানে মোট ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ব্যবসায়ীদের দাবি বেশি দামে কেনার কারণে উচ্চমূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি তাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে পাইকারি বাজার থেকে। পাইকারি দোকান থেকে সংগ্রহকৃত রশিদে দেখা যায় সৌমিক ট্রেডার্স, আবুল বশর এন্ড সন্স, মেসার্স মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন ট্রের্ডাস, মেসার্স জান্নাতুল মাওয়া ট্রের্ডাস এই আড়তগুলো থেকে কেজিপ্রতি ১৭৫ থেকে ১৯৮ টাকায় পাইকারি দোকানে পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক বলেন, সংকট দেখিয়ে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে বিক্রির দায়ে খাতুনগঞ্জের দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। জনস্বার্থে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী ব্যবসায়ীদের জরিমানার পাশাপাশি মনিটরিং অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও সরবরাহ কমার অজুহাতে যাতে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়াতে না পারে সেই বিষয়েও লক্ষ্য রেখেছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘কোনো আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য অবৈধভাবে মজুদ কিংবা এসব পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ালে জেলা প্রশাসন মজুদ করা পণ্য জব্দ করতে পারে। আড়ত এবং বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা, পণ্য জব্দ, আড়ত দোকান সিলগালাসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে পেঁয়াজের ক্রমবর্ধমান মূল্য নিয়ে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের সাথে বসে তাদের মতামত, পরামর্শ, যুক্তি উপস্থাপন করবে।’