নিজস্ব প্রতিবেদক »
নগরীর আন্দরকিল্লা জামে মসজিদ থেকে জুমার নামাজের পর একটি মিছিল বের করে নগর পূজা উদযাপন পরিষদ আয়োজিত জে এম সেন হল মণ্ডপে হামলা চালানোর চেষ্টা করা হয়। গতকাল শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে এমন বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনার পর চট্টগ্রামে এবার প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। পরে এ ঘটনার পাঁচ ঘণ্টা পর অভয়মিত্র ঘাটে পূজা প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।
এর আগে সরেজমিনে দেখা গেছে, দুপুর ২টায় আন্দরকিল্লা জামে মসজিদ থেকে বেরিয়ে দুর্বৃত্তরা। জে এম সেন হল মণ্ডপে হামলা করে। এতে মণ্ডপের গেট এবং ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। পাথর নিক্ষেপ করা হয়েছে। এসময় পুলিশ ধাওয়া করলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এ সময় মণ্ডপের ভেতরে চলছিল দেবী বিদায়ের আয়োজন। পূজা মণ্ডপে তখন বিভিন্ন বয়সী নারীরা পান, তেল ও সিঁদুর দিয়ে দেবী বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বাইরে হট্টগোল শুরু হলে তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছে পুলিশ। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে অতিরিক্ত পুলিশ, ডিবি, সোয়াত মোতায়েন করা হয়েছে। আনা হয়েছে জল কামান। এ ঘটনার রেস ধরে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আন্দরকিল্লা মোড় থেকে জে এম সেন হল মোড় পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত শুক্রবারে প্রতিমা বিসর্জন না দেওয়ারও এক সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আন্দোলনের পর সন্ধ্যা সাতটায় অভয়মিত্র ঘাটে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এমন হামলার ঘটনার যথাযথ বিচারের দাবি তুলেছেন।
আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘চট্টগ্রামের মত শহরে এমন ঘটনা নিন্দনীয়। এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটবে তা কেউ ভাবতে পারেনি। তবে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’
বেলা ৩টার দিকে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত জে এম সেন হল মোড়ে এসে পূজা উদযাপন পরিষদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
এদিকে এমন ঘটনার কারণে নগরের বিভিন্ন স্থানের পূজা এলাকাভিত্তিক জলাশয়ে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতসহ কর্ণফুলীর বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনায় প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানান নগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য্য। তিনি বলেন, ‘প্রতিমা বিসর্জনে নিরাপত্তার বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরা। নগরীর সকল প্রতিমা শুক্রবার বিসর্জন দেওয়া হবে। কারণ শনিবারে প্রতিমা বিসর্জনে ধর্মীয় বিধিনিষেধ রয়েছে। আবার রোববার থেকে অফিস আদালত খোলা। জে এম সেন হলের পূজা প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে অভয়মিত্র ঘাটে।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) বিজয় বসাক বলেন, ‘শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীর সকল প্রতিমা বিসর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিসর্জনের সুবিধার্থে এবং যানজট নিরসনে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মোতায়ন করা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে মণ্ডপে হামলাকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।’