নিজস্ব প্রতিবেদক :
সিএমপি’র ওসিসহ ৬ পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করার অভিযোগে এবার বাদির বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১-এ মামলাটি দায়ের করেন দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম।
মামলায় একমাত্র অভিযুক্ত ব্যক্তি হচ্ছেন মো. নুরুল আবছার। যিনি ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ নিজেকে আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক পরিচয় দিয়ে ওসি পদ মর্যাদার এক কর্মকর্তাসহ ৬ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ‘ক্রসফায়ারের’ ভয় দেখিয়ে তার (নুরুল আবছার) কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগে নগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটি করেছিলেন।
দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১ এর উপ-সহকারী পরিচালক লুৎফুল কবীর চন্দন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নুরুল আবছার নামে পতেঙ্গা থানা এলাকার এক ব্যক্তি ছয় জন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত করে দুদক। কিন্তু তদন্তে অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। মিথ্যা মামলা প্রমাণ করে বাদির বিরুদ্ধে দুদকের আইনে বাদি নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নুরুল আবছার কর্তৃক দায়ের করা মামলায় পতেঙ্গা থানার তৎকালীন ওসি (বর্তমানে পাঁচলাইশ থানায় কর্মরত) আবুল কাশেম ভূঁইয়া, একই থানার এসআই প্রণয় প্রকাশ, এসআই আবদুল মোমিন, এএসআই তরুণ কান্তি শর্মা, এএসআই কামরুজ্জামান ও এএসআই মিহির কান্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। একই মামলায় মো. ইলিয়াছ, মো. জসিম ও মো. নুরুল হুদা নামে আরও তিন জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।
প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে পাঁচলাইশ থানার ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, ‘নুরুল আবছার মাদক মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি ছিলেন। বিচারাধীন মামলার এক আসামিকে গ্রেফতার অভিযান পরিচালনাকারী অফিসার এবং তদন্ত কর্মকর্তাসহ ছয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন আবছার, যা দুদকের তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। দুদকের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে সত্য। সুবিচার পেয়েছি, ন্যায়বিচার পেয়েছি।’
দুদক পিপি মাহমুদুল হক জানান, ছয় পুলিশসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে মামলার বাদি মো. নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪-এর ২৮ (গ) ধারায় মামলা করেছেন দুদক কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম। গত ১৩ সেপ্টেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত মামলা দায়েরের নির্দেশ দেওয়া হয়।
নুরুল আবছারের মামলার আরজিতে বলা হয়েছিল, ২০১৮ সালের ১ জুন বিকেলে কাটগড় এলাকা থেকে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা নুরুল আবছারকে তুলে পতেঙ্গা থানার ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়ার কাছে নিয়ে যান। সেখানে তার কাছ থেকে মোবাইল, গাড়ির চাবি ও টাকা-পয়সা কেড়ে নেন। এরপর তাকে আটকে রাখা হয়। পরদিন দুপুর পর্যন্ত নুরুল আবছারকে ইয়াবা ব্যবসায়ী অপবাদ দিয়ে আটকে রেখে ৩০ লাখ টাকা দেয়ার জন্য চাপ দেন পুলিশ সদস্যরা। পরে ১৫ লাখ টাকা তিনি এসআই কামরুজ্জামানের হাতে দেন। কিন্তু অবশিষ্ট ১৫ লাখ টাকা না দেয়ায় তাকে বিদেশি মদ উদ্ধারের একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান দেয়া হয়। ২৯ জুলাই কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান আবছার।
জানা গেছে, তদন্ত শেষে অভিযোগের সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদক’র চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১ এর উপ-সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্তদের অব্যাহতি দিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।