সুপ্রভাত ডেস্ক »
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ছাত্র এবং পুলিশ হচ্ছে ভাই-ভাই। আমাদের কোনো বিভেদ নাই।
আপনারা আপনাদের কাজে ফিরে আসুন। আপনাদের মধ্যে যারা খুনিদের দোসর ছিল তাদেরকে আমরা জানি।
সব পুলিশ কিন্তু বেনজীর না। সব পুলিশ ডিবি হারুন না। আমার বাবা, আমার ভাই; তারাও কিন্তু পুলিশ। সুতরাং পুলিশদের আমরা সহযোগিতা করবো।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টায় নগরীর লালদিঘী ময়দানে গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র-নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজে যারা বর্তমানে মাঠে রয়েছেন তাদেরকে আমরা প্রতিপক্ষ না ভেবে সহযোগী ভেবে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাব। পুলিশদের প্রতি বার্তা-দেখেন বেনজীর দেশে থাকতে পারেনাই। ডিবি হারুন ভালো নেই। সুতরাং আপনারা জনমুখী না হয়ে ক্ষমতামুখী হলে আপনাদের অবস্থাও বেনজীর এবং হারুনের মতো হবে।
সর্তক বার্তা দিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আপনাদেরকে আবার সতর্ক করতে চাই, প্রভু চলে গিয়েছে কিন্তু প্রভুর দাসরা আমাদের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে। তারা বিভিন্ন রুপে আমাদের মাঝে এসে আমাদের ইউনিটিকে ভাঙতে চাইবে। আপনাদেরকে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে যেভাবে আমরা ক্ষুদ্র স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থকে সামনে রেখে একসাথে কাজ করেছি একইভাবে রাষ্ট্র পুনর্গঠনে একসাথে কাজ করবো।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা দেখেছি ঢাকাতে যখন আন্দোলন বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো তখন চট্টগ্রাম থেকে আপনারা আন্দোলনকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। আমরা দেখেছি ওয়াসিমরা কিভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, শান্তরা কিভাবে রক্ত দিয়েছে। আমরা সেই চট্টগ্রামে এসেছি। আমরা আপনাদের কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে চাই, সংকটকালীন সময়ে আমরা যেভাবে একসাথে হয়েছিলাম এখন দেশটা পুনর্গঠনের সময়। আমাদেরকে একইভাবে একসাথে থাকতে হবে।
‘বীর চট্টলাবাসী সবসময় ধর্মভীরু। কিন্তু আমরা দেখেছি তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সবসময় ধর্মীয় গোঁড়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দাঁড়ি-টুপি যাদের রয়েছে তাদেরকে সবসময় প্রান্তিকীকরণ করা হয়েছে। আমরা বলতে চাই, যে দাঁড়ি-টুপির মানুষগুলো সেদিন উত্তরায় নেমে এসেছিল, যাত্রাবাড়িতে দুর্গ গড়ে তুলেছিল তাদের সমন্বয়কের পরিচয় লাগেনি। উত্তরায় যারা শহীদ হয়েছিল তাদের সমন্বয়কের পরিচয় লাগেনি। ঠিক একইভাবে এ রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজে আমাদের সমন্বয়ক হওয়ার প্রয়োজন নেই, সহ সমন্বয়ক হওয়ার প্রয়োজন নেই। এখানে যারা রয়েছে প্রত্যেকেই সমন্বয়ক, প্রত্যেকেই সহ সমন্বয়ক। ‘
তিনি বলেন, ছাত্রদের যে আন্দোলনটি হয়েছিল সেই আন্দোলনটি হয়েছিল ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, অসাম্যের বিরুদ্ধে, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে, টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে। টেন্ডারবাজ এবং দুর্নীতিবাজ যারা রয়েছে আপনাদের সতর্ক করতে চাই। আপনারা ১৬ বছর একটি দলের ছত্রছায়ায় ছিলেন। এখন যদি আর একটা দলের ছত্রছায়ায় এসে আপনারা দুর্নীতি করার চেষ্টা করেন ছাত্র-জনতা আপনাদেরকে দেখে নেবে।
প্রশাসনে কর্মরতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করুন। আপনারা যদি ভেবে থাকেন আপনারা গোস্সা করে বসে থাকবেন, অফিস-আদালতের কাজ করবেন না; তাহলে আপনারা ভুল ভাবছেন। এই আন্দোলনে কামার ছিল, কুলি ছিল, মুচি ছিল। ঠিক একইভাবে এই আন্দোলনে শিক্ষিত শ্রেণিও ছিল। সুতরাং আপনাদের রিপ্লেসমেন্টও হয়ে যাবে।
এই সমন্বয়ক বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই এই ছাত্র নাগরিকদের পাওয়ার কিছুই নেই, আমরা ত্যাগ করতে প্রস্তুত। আমাদের ছাত্র নাগরিক রাস্তায় এসে দাঁড়ায়, পুলিশের সামনে বুক পেতে দেয়। যে চাঁদাবাজ এবং টেন্ডারবাজ রয়েছেন, আপনাদেরকে বলতে চাই; আমরা বুলেট-বোমা ভয় পাই না। আপনারা সতর্ক হয়ে যান। আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতাকে পুঁজি করে আপনারা যদি ভেবে থাকেন আবার দুর্নীতি শুরু করবেন তবে ছাত্র-নাগরিক আপনাদের বিষদাঁত উপড়ে ফেলবে।
চট্টগ্রামে সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানো চেষ্টার বিষয়ে তিনি বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদেরকে বিভাজন করেছে। বিভাজনের রাজনীতি বিদ্যমান রেখে তারা ফ্যাসিজম কায়েম করেছে। তারা সবসময় বিভাজন করেছে, কারা দাঁড়িওয়ালা, কাদের দাঁড়ি নাই। কারা মাদরাসা শিক্ষার্থী, কারা না। কিন্তু এই ফ্যাসিজম পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা উদাহরণ তৈরি করেছি। মন্দিরে মন্দিরে যখন হামলা হয় তখন সেই মন্দির পাহাড়া দিয়েছে আমাদের দাঁড়ি-টুপিওয়ালা ভাইয়েরা। আমাদের সবার প্রথম পরিচয় আমরা বাংলাদেশী। এরপর উপস্থিত ছাত্র-জনতাকে হাত তুলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার প্রতিশ্রুতি করান।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ, সহ-সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, মোহাম্মদ আলী, ফজলুল হক শ্রাবণ, রিয়াজুর রহমজান ও পুষ্পিতা নাথ প্রমুখ।