পিনন বুনন করে স্বাবলম্বী কাপ্তাইয়ের বিনতা তঞ্চঙ্গ্যা

পিনন বুননরত বিনতা তঞ্চঙ্গ্যা

অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই (রাঙামাটি) »
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের সাক্রাছড়ি এলাকার বাসিন্দা বিনতা তঞ্চঙ্গ্যা। নিজ জন্মস্থান বান্দরবান জেলাতে হলেও বিয়ের সূত্রে রাঙামাটি জেলার কাপ্তাইয়ে বসবাস করে আসছেন তিনি। ৯ বছর পূর্বে স্বামী বিনময় তঞ্চগ্যা মারা যান। এর পর থেকে ২ ছেলে ১ মেয়ের সংসারের হাল ধরেন তিনি। বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পিনন বুনন করেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন তিনি।

সম্প্রতি কাপ্তাইয়ের সাক্রাছড়ি এলাকায় গিয়ে কথা হয় বিনতা তঞ্চঙ্গ্যার সাথে। নিজ বাড়ির আঙিনায় পিনন তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।
পিনন হচ্ছে পাহাড়ী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের একটি ঐতিহ্যবাহী পোশাক। উৎসব পার্বণে তারা এই পোশাক পরিধান করে থাকেন। বিনতা তঞ্চঙ্গ্যা জানান, প্রায় ৩০ বছর ধরে পিনন বুনন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। তবে পূর্বে শখের বসে এই কাজ করলেও বর্তমানে স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে পিনন বুনন করে সংসার চালান তিনি। এছাড়া এই পিননের চাহিদা ও বেচাবিক্রি ভালো হওয়াতে এ কাজে উৎসাহ পাচ্ছেন তিনি।
পিনন তৈরির প্রসঙ্গে তিনি জানান, পিনন তৈরির মূল বস্তু যেটাকে পাহাড়ী ভাষায় খাং বলা হয়ে থাকে। সেই খাং বাজার থেকে ক্রয় করে আনেন তিনি। এরপর সেই খাং আনার পর ভাতের মাড় দিয়ে শক্ত করে শুকাতে দিতে হয়। সেই খাং থেকে সূতার গোলা তৈরি করা হয়। এর সেই সূতাগুলো বাইং এর মধ্যে সুদুক বাইশ এবং বগলা দিয়ে বিশেষ একটি প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে এই পিনন তৈরি করা হয়ে থাকে।
তিনি আরো জানান, পিনন বুনন করাটা অনেকে মনে করে সহজ বিষয় কিন্তু এটি অত্যন্ত পরিশ্রমের কাজ। অনেকটা ধৈর্য ও সময় নিয়ে এই পিনন বুনন করতে হয়। তাছাড়া পাহাড়ী নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক যেটিকে থামি ড্রেস বলা হয়। সেটি তৈরি করতে প্রায় ১ সপ্তাহ সময় লেগে যায়। এছাড়া চাঁদর বানাতে প্রায় ৩ দিন সময় লাগে। তবে এসব কাপড়ের ভালো চাহিদা ও দাম রয়েছে বলে তিনি জানান। বিশেষ করে একটি থামি ড্রেস তারা ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা কিংবা তারও বেশি দামে বিক্রয় করে থাকেন। এতে ভালো আয় হয় তাঁর। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অর্ডার পেলে তিনি তৈরি করে দেন এসব পোশাক। আর পাহাড়ীদের পাশাপাশি অনেক বাঙালি মেয়েরাও এই পোশাক সংগ্রহ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তারাও ভালো দাম দিয়ে এটি ক্রয় করে নিয়ে যান। বিনতা তঞ্চঙ্গ্যা জানান, এই কাজে সময়ের পাশাপাশি পুঁজিও দরকার। সরকারি বা বেসরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে আরও বেশি এগিয়ে যেতে পারতাম।’
এ বিষয়ে কাপ্তাই উপজেলা হেডম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং ১১৯ নম্বরের ভাইজ্যাতলী মৌজার হেডম্যান থোয়াই অং মারমার সাথে কথা হলে তিনি জানান, বিনতা তঞ্চঙ্গ্যা পিনন বুননের মাধ্যমে তাঁদের সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। এই ঐতিহ্যবাহী পোশাক নারীরা সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিচ্ছেদ করে থাকেন। তবে বিভিন্ন সরকারি সংস্থাসমূহ যদি এগিয়ে আসে তবে এই প্রতিভাগুলো আরও বিকশিত হবে এবং যারা এই কাজে যুক্ত তারাও উপকৃত হবে।
কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গা ইউপি চেয়ারম্যান চিরঞ্জিত তঞ্চঙ্গ্যার সাথে কথা হলে তিনি জানান, বিনতা তঞ্চঙ্গ্যা দীর্ঘবছর যাবৎ পিনন বুনন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। তিনি অনেক পরিশ্রম দিয়ে এই কাজ করে থাকেন। আমরাও ওয়াগ্গা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রান্তিক পর্যায়ের এই হস্তশিল্প কারিগরদের সার্বিক সহযোগিতা করার চেষ্টা করে যাবো।