দুই বছর আগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েলকে হত্যা করে সেতুর ওপর থেকে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় হানিফ পরিবহনের বাস চালক, তার সহকারী ও সুপারভাইজারকে মৃত্যুদ- দিয়েছে আদালত। ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান গত রোববার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। মামলার ৩ আসামি রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘এ রকম অনেক পায়েল মারা যায় যাদের কথা আমরা জানতে পারি না। সড়ক দুর্ঘটনা দিন দিন হত্যার পর্যায়ে চলে যাচ্ছে যা বলাটা বোধ হয় ভুল নয়’। আদালত তার পর্যবেক্ষণে ৪টি সুপারিশের কথা উল্লেখ করেন। গাড়ির চালক, তার সহকারী ও সুপারভাইজার মাদক সেবন করেছেন কিনাÑ তা নিশ্চিতে ডোপ টেস্ট ও যাত্রীদের সাথে ভদ্র আচরণের ব্যাপারে গাড়ির স্টাফদের কাউন্সেলিং ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
মহাসড়কে প্রতি ৩ কিলোমিটার পরপর চালক ও যাত্রীসহ সবার জন্য আধুনিক বাথরুম ও টয়লেটের ব্যবস্থা এবং মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ যানবাহন চলাচলের ওপর নজরদারি জোরদার করা।
যাত্রীদের সাথে যা খুশি তাই করার অভদ্র প্রবণতা বন্ধে এই রায় পরিবহন শ্রমিকদের জন্য কঠোর বার্তাস্বরূপ। একটি মেধাবী ছাত্রের জীবন অকালে ঝরে গেলো কিছু মানুষের নির্মমতার শিকার হয়ে। কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে ১ টাকার ভাড়া নিয়ে তর্কাতর্কির জেরে বাস চালক ও তার সহকারী এক যাত্রীকে বাস থেকে ফেলে দিলে তিনি মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেন। মহিলা যাত্রীদের সাথে অশালীন আচরণ, তাদের যৌন হয়রানি এমন কি ধর্ষণের পর নারীকে বাস থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনাও আছে। দুঃখের বিষয়, যানবাহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলি শ্রমিকদের অভদ্র ও অসভ্য আচরণের ব্যাপারে অনেকটা নির্লিপ্ত ভূমিকা নেয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, গাড়ি চালকের অদক্ষতা, বেপরোয়া গতি, চলাচলের অযোগ্য রাস্তা এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি নামানোÑএসব কারণে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। সড়কে প্রতিদিন এই দুর্ঘটনা কি নিছক দুর্ঘটনা না হত্যাÑএ নিয়ে সবার মনে প্রশ্ন উঠেছে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষকে পিষে দিচ্ছে যানবাহন।
দেশে প্রতিদিন শিক্ষার্থী, তরুণ, কর্মক্ষম ব্যক্তি ও পথচারী সড়ক দুর্ঘটনার বলি হচ্ছেন অথচ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কিংবা যেসব সংস্থা সড়ক ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট, দুর্ঘটনা হ্রাসে তাদের যথাযথ ভূমিকা নেই। সড়ক পরিবহন আইনটি সংসদে পাশ হলেও এর প্রয়োগ ঝুলে আছে মালিকÑশ্রমিকদের চাপে। সড়কে প্রতিদিন মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। গুটিকয়েক লোকের হাতে মানুষের জীবন জিম্মি হতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদক সেবন প্রতিরোধে চালকদের ডোপ টেস্ট এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানে দুর্নীতিÑঅনিয়ম পরিহারের কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে নির্দেশনা হিসেবে নেওয়া উচিত।
আমাদের দেশে আইনি প্রক্রিয়া জটিল। ফলে মানুষের মনে হতাশা জন্মে, বিচারহীনতার সংস্কৃতির সংজ্ঞাটি এই পরিপ্রেক্ষিতে এসেছে।
আমরা মনে করি, আদালতের পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন ও পরিবহনখাতের সংশ্লিষ্টপক্ষ দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে সড়ক পরিবহন আইনের দ্রুত কার্যকর প্রয়োগ শুরু হোক ।
মতামত সম্পাদকীয়