নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি :
এবারও মৌসুমের আগে পাহাড়ের হাট-বাজারে উঠেছে ‘হানিকুইন’ জাতের আনারস। কম সময়ে কম জমিতে ভালো ফলনে খুশি প্রান্তিক কৃষকরাও।
খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি জেলার মধ্যবর্তী এলাকা, মানিকছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় উৎপাদিত আগাম আনারস কিনে নিয়ে যাচ্ছেন সমতলের ব্যবসায়ীরা।
বিক্রেতা ও ক্রেতারা জানান, এসব আনারস রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ফেনী, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে ক্রেতাদের তৃপ্তি যোগাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাহাড়ি জেলাগুলোতে আনারসের মৌসুমের আগেই বিগত কয়েকবছর ধরে আগাম ফলন আসা ‘হানিকুইন’ জাতের উচ্চ ফলনশীল আনারস চাষ হচ্ছে। এতে মৌসুমে উৎপাদিত আনারসের থেকে আগাম আনারসে বাড়তি লাভ করতে পারছেন চাষিরা। কিন্তু মৌসুমে অনেক কৃষককেই আনারস চাষ করে লোকসান গুনতে হয়।
মহালছড়ির মধ্য আদাম’র চাষি সুলক্ষণ চাকমা জানান, আগাম ১৬ হাজার আনারসের চারা লাগিয়ে এরমধ্যেই ১৪ হাজারের বেশি ফল পেয়েছেন। এ আনারসগুলো রসালো এবং সুস্বাদু হওয়ায় বাগান থেকেই ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আগাম এ আনারস চাষে মৌসুমের তুলনায় খরচ অনেক বেশি হয়। আনারস সাইজ অনুসারে ১৪-২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়।
আনারস চাষি রিপন চাকমা বলেন, এ এলাকায় এখন অনেকেই আগাম আনারসের চাষ শুরু করেছে। আগাম ফল আসলে ভালো লাভে বিক্রি করা যায়। এই আনারসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে সমতলে। যার ফলে ব্যবসায়ীরা বাগান থেকে কিনে নিয়ে যায়। এতে চাষিদের বাড়তি বেগ পোহাতে হয়না।
নোয়াখালী থেকে আসা পাইকারী ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম জানান, আমি মহালছড়িতে এসে মৌসুমী ফল নিয়ে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করি। বাগান থেকে কিনে নেয়ায় একটু কম দামে কিনে নিতে পারি। মৌসুমে প্রতিটি আনারস ৪-৫ টাকায় কিনলেও এখন কিনতে হচ্ছে ১৪-২০ টাকায়। এতে শ্রমিক খরচ এবং গাড়িভাড়া দিয়ে খুব বেশি লাভ করতে পারি না।
ব্যবসায়ী মো. সোহেল জানান, আগাম আনারস হওয়ায় মৌসুমের চেয়ে এখন দাম অনেক উর্ধ্বে। তিনি জানান, বাগান থেকে আনারস কিনে চট্টগ্রম নিয়ে যাই। এই পাহাড়ের আনারস রসালো ও সুস্বাদু হওয়ায় খুব ভালো চাহিদা আছে। আগাম এই ফল বাজারে আসার কারণে মানুষ কিনে নিতে কোনো চিন্তা করেনা। এটি মৌসুমের তুলনায় দাম একটু বেশি হলেও চাহিদা অনেক ভালো।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নানিয়ারচর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে চাষিরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে আনারস নিয়ে আসছেন মহালছড়ি ভাসমান পাইকার বাজারে। সেখান থেকে স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পাইকাররা পাইকারি দরে আনারস কিনছেন।
এ কাজের সাথে জড়িত শ্রমিক জাকির হোসেন জানান, চাষিদের বাগানের আনারসগুলো পাইকাররা কিনে নেওয়ার সময় ট্রাকে উঠানোর কাজ করে থাকি। এরপর ট্রাকে ভরে আনারসগুলো দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
মহালছড়ি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয়ভাবে খুচরা বাজারে প্রতি জোড়া মাঝারি আকারের আনারস বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দরে। বড় আকারের আনারস বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা জোড়া।
মহালছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল জব্বার জানান, আগাম আনারস চাষ হওয়ায় কৃষকরা ভালো লাভবান হচ্ছেন। পাইকারদের কাছে তারা এখন ১৪-২০ টাকা দরে আনারস বিক্রি করছেন। পাইকাররা বাইরে নিয়ে সেই আনারস ৩০-৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে। এখানকার আনারস এখন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে। এতে করে চাষিরা আনারস চাষে ঝুঁকছেন।