নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙামাটি :
দেশের সর্বশেষ জেলা হিসেবে কোভিড সংক্রমণ হওয়া পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে গত সাতমাসে পজিটিভ হয়েছেন নয়শ’র বেশি মানুষ। এদের মধ্যে মারা গেছেন ১৪ জন। নভেম্বর মাসে সংক্রমণের হারও অনেক কমে এসেছে।
৯ দিনে জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছেন ১৩ জন। ১৩ জনসহ এই মুহূর্তে জেলায় মোট আক্রান্ত অবস্থায় আছেন ২০ জন। অক্টোবর মাসে এই সংখ্যাটি ছিলো ৩০ জন। সেপ্টেম্বর মাসে ছিলো ৬৬ জন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টিকে ‘আশাপ্রদ’ ও ‘সন্তোষজনক পরিস্থিতি’ বললেও একই সাথে সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরিধান এবং ‘নিয়মিত হাত ধোয়া’র নিয়ম মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছে। আর স্বাস্থ্য বিভাগের এই অনুরোধ যেহেতু সরকারি নির্দেশনা, তাই সেটার বাস্তবায়নে এখনো প্রতিদিন শহরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন।
রাঙামাটি স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত এপ্রিল মাসের ৫ তারিখ জেলায় প্রথমবারের মতো একই সাথে ৪ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়ার মধ্যদিয়ে বিশ^ব্যাপী মহামারি হয়ে উঠা এই রোগের সাথে সম্পৃক্ততা হয় পার্বত্য এই জেলার। এরপর প্রায় নিয়ম করেই কোভিড-১৯ শনাক্ত পাওয়া যেতে থাকে। সর্বশেষ সোমবার পর্যন্ত জেলায় মোট ৯৪৬ জন করোনা পজিটিভ রোগী পাওয়া গেছে, যাদের মধ্যে মারা গেছেন ১৪ জন এবং বাকিরা সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। ৮১ জন ব্যক্তি সরকারি আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন।
আক্রান্ত রোগীদের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছে জেলা শহরেই, যার সংখ্যা ৬৮১ জন। এবং সবচে কম রোগী শনাক্ত হয়েছে ভারতের মিজোরাম সীমান্তবর্তী উপজেলা বরকলে, মাত্র ৫ জন। এছাড়া কাউখালী উপজেলায় ৩০ জন, নানিয়াচরে ৯ জন, কাপ্তাইয়ে ১২২ জন, বিলাইছড়িতে ১৩ জন, রাজস্থলীতে ১২ জন, বাঘাইছড়িতে ২৬ জন, জুরাছড়িতে ২৩ জন, লংগদু উপজেলায় ২৫ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন।
করোনায় মারা যাওয়া ১৪ জনের মধ্যে ১১ জনই রাঙামাটি শহরের এবং বাকি ৩ জনের মধ্যে ২ জন কাপ্তাই এবং ১ জন রাজস্থলী উপজেলার। গত সাতমাসে স্বাস্থ্য বিভাগ জেলার মোট ৩ হাজার ৫৩৭ জন মানুষকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে এবং এদের সবাইকে ছাড়পত্রও দেয়া হয়েছে।
কোভিড-১৯ সংক্রমণের শুরুতে এই জেলায় কোন পরীক্ষার ল্যাব না থাকলেও পরবর্তীতে জেলায় পিসিআর ল্যাব স্থাপিত হয় বেসরকারি শিল্প গ্রুপ বসুন্ধরার অর্থায়নে। শুরুতে চট্টগ্রামের বিআইডিআইটি ও সিভাসুতে জেলার সব নমুনা পরীক্ষা করা হলেও বর্তমানে সব নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে রাঙামাটিতেই।
তবে খুব বেশি লোকজন এখন আর পরীক্ষা করাতে আসছেন না বলে দাবি করে রাঙামাটির করোনা বিষয়ক ফোকাল পার্সন ডা. মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, এখন আর তেমন লোকজন পরীক্ষার জন্য আসছেন না, আবার আসলেও খুব একটা সংক্রমণ পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক সময় দেখা যায় ২০ জন পরীক্ষা করলে ২/১ জনের পজিটিভ মিলছে।’
বিষয়টি দৃশ্যত ‘ভালো খবর’ মানলেও আসন্ন শীতকে বিবেচনায় নিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, শীতকালে শ^াসকষ্টজনিত রোগগুলোর প্রকোপ বাড়ে এবং আপনারা জানেন যে, করোনায় সবচে ভালনারেবল (ঝুঁকিপূর্ণ) হচ্ছেন, শ^াসকষ্টের মানুষজনই। কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। সুতরাং সতর্ক থাকার কোন বিকল্প নেই।
সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা জেলার বর্তমান করোনা পরিস্থিতিকে ‘সন্তোষজনক’ আখ্যা দিয়ে বলেন, যদি সবাই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত, মাস্ক পরিধান এবং নিয়ম করে হাত ধোয়ার সরকারি নির্দেশনা মেনে চলি তবে করোনা আর পরাজিত করতে পারবে না বলেই বিশ^াস। তিনি সবার প্রতি এইসব নির্দেশনা মেনে চলার বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন।
এ মুহূর্তের সংবাদ