কৃষি কর্মকর্তাদের হিসাবে, চলতি বছর রাঙামাটি জেলার ২ হাজার ১০০ একর জমিতে কমলার চাষ হয়েছে। এসব বাগান থেকে উৎপাদিত কমলার বাজারমূল্য প্রায় দুই শ কোটি টাকা। তাঁরা বলছেন, সঠিকভাবে পরিচর্যা করা গেলে পাহাড়ে অপার সম্ভাবনা রয়েছে কমলা চাষের।
নানিয়ারচর উপজেলায় এবার কমলার চাষ হয়েছে প্রায় ৬০০ একর জমিতে। কৃষকেরা জানিয়েছেন, উপজেলাটিতে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে কমলার ব্যাপক ফলন হচ্ছে। আগে জোড়া হিসেবে চাষিরা কমলা বিক্রি করতেন, এখন কেজিতে বিক্রি করেন। এরফলে চাষিরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। পত্রিকার তথ্যমতে, খুচরা বাজারে আকারভেদে স্থানীয় কমলা ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে এবার।
জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় কমলার ব্যাপক চাষাবাদ শুরু হয়। এর বাইরে বর্তমানে বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল, লংগদু, জুরাছড়ি উপজেলায় কমলার চাষ করা হচ্ছে। সুদত্ত চাকম একজন বাগান মালিক, তিনি জানান, ২০২০ সালে ৪ একর জমিতে কমলা চাষ শুরু করেন। প্রথমে মাত্র ১৫০টি কমলার চারা রোপণ করেন। ২০২১ সালে আরও ২০০ চারা রোপণ করা হয়। পরবর্তী বছর ৩০০ কমলার চারা রোপণ করেন। সুদত্ত চাকমা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘এবার ১৩০টি গাছের ফলন থেকেই ১৭ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছি। আশা করি, আগামী মৌসুমে আরও বেশি ফলন ও আয় হবে।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, রাঙামাটিতে চলতি মৌসুমে কমলার উৎপাদন হয়েছে ৮৫ লাখ কেজি। গড়ে প্রতি কেজি ২৪০ টাকা করে বিক্রি হলেও অন্তত ২০০ কোটি আয় হবে চাষিদের। তবে রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মুনিরুজ্জামান একটি অসুবিধার কথা উল্লেখ করে বলেন, পাহাড়ে একসময় ঘন বন ছিল। এখন ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। যার কারণে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে কমলার ফলনে প্রভাব পড়েছে। অতিরিক্ত উষ্ণতায় কমলার ভালো ফলন হয় না। এরপরও রাঙামাটির কিছু কিছু এলাকায় ভালো ফলন হচ্ছে। নানিয়ারচরে কমলার ফলন সবচেয়ে ভালো। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা হিসাব করে দেখেছি, চলতি মৌসুমে কমলা বিক্রি করে চাষিদের ন্যূনতম ২১০ কোটি টাকা আয় হওয়ার কথা।’
একসময় সিলেটের কমলা ছিল বিখ্যাত। আমদানিকৃত কমলার চেয়ে সে কমলার চাহিদা ছিল বেশি। কিন্তু কালক্রমে সে উৎপাদনে ভাটা পড়েছে। এর পাশাপাশি রাঙামাটিতে কমলাচাষে ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি। ন্যাড়া পাহাড়গুলোতে দ্রুত গাছ বৃদ্ধি করে কমলা উৎপাদনের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সে সঙ্গে উৎপাদকের উৎপাদন সহায়ক পরিবেশ ও সুষ্ঠু বিপনন ব্যবস্থা গড়ে তুললে একসময় হয়ত দেশীয় কমলাই দেশের চাহিদা মিটিয়ে বৈদেশিক মূদ্রার সাশ্রয় করবে। এখন দরকার বাগানমালিকদের নানাভাবে সহযোগিতা করা।
এ মুহূর্তের সংবাদ