সুপ্রভাত ডেস্ক »
বন্দর নগরী চট্টগ্রামে বায়েজিদ লিংক রোডের পাশে পাহাড় কেটে রাস্তা ও ঘর তৈরি এবং জমির শ্রেণি পরিবর্তনের প্রমাণ পেয়েছে জেলা প্রশাসন। গতকাল শনিবার দিনভর ওই এলাকায় এশিয়ান উইমেন ইউনিভার্সিটির (এইউডব্লিউ) সীমানার পরের পাহাড়টিতে এই অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বলেন, ‘সকালে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান মহোদয় বায়েজিদ লিংক রোড দিয়ে যাতায়াতের সময় পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণের বিষয়টি উনার নজরে আসে।’
‘তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিলে বায়োজিদ লিংক রোড সংলগ্ন এলাকার পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে পাহাড় কাটার সাথে সম্পৃক্তরা পালিয়ে যায়।’ খবর বডিনিউজের।
অভিযান দল ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পায়, লিংক রোডের পাশে প্রায় ৯০ ডিগ্রি খাড়াভাবে পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ করেছেন আকবর হোসেন খোকন নামের এক ব্যাক্তি।
সহকারী কমিশনার উমর ফারুক বলেন, ‘রেকর্ড অনুযায়ী উত্তর পাহাড়তলী মৌজার টিলা শ্রেণির ১৯৩ দাগের ৬৪১/১০ নম্বর খতিয়ানটির মালিক নগরীর বিবির হাট, পশ্চিমপাড় এলাকার জাফর আহামদ মজুমদার ও মোহাম্মদ হাছান আহাম্মদ কন্ট্রাক্টর। ওই জমিটির বায়না মূলে মালিক মো. আকবর হোসেন খোকন। পাহাড় কাটার বিষয়ে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়।’
সহকারী কমিশনার উমর ফারুক বলেন, ‘ওই জমিটি টিলা শ্রেণির। ১৯৩ দাগে সর্বমোট ১ দশমিক ৬০ একর জমি আছে। খাড়াভাবে পাহাড় কেটে উপরে উঠার রাস্তা করা হয়েছে। উপরে টিলা কেটে সমান করে চাষাবাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে কয়েকটি টিনের তৈরি ঘরও আছে।’
অভিযান চলাকালে উপস্থিতদের জিজ্ঞাসাবাদে জমির মালিকদের কোনো সন্ধান মেলেনি। পরে জমির কাগজ যাচাই করে ১৯৩ দাগে ৬৪১/১০ খতিয়ান এবং ওই খতিয়ান থেকে সৃজিত নামজারি খতিয়ান মূলে জমির মালিকদের সন্ধান পায় অভিযানকারী দল।
সহকারী কমিশনার উমর ফারুক বলেন, ‘উক্ত দাগে ১৭ জনের মালিকানা আছে। তাদের সবার জমিতেই পাহাড় কাটার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেখানে অধিকাংশ জায়গা বায়নাসূত্রে মালিক মো. আকবর হোসেন খোকন।
‘তাদের সবার বিরুদ্ধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে নগরীর আকবর শাহ থানায় মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।’
ওই ১৭ জন হলেন- মো. আকবর হোসেন খোকন, জাফর আহমদ মজুমদার, মোহাম্মদ হাছান আহম্মদ কন্ট্রাকটার, মোহাম্মদ ইলিয়াছ, মোহাম্মদ হামিদ, মোহাম্মদ সোলায়মান, শামীমা আকতার, মোহাম্মদ আইয়ুব মিঞা, এস এম নুরুন্নবী, সৈয়দা মাসকুরা আক্তার, জেবুন্নাহার খানম, শখিনা আকতার চৌধুরী, সোহরান হোসেন, নাসির উদ্দিন, ফরিদ মিঞা, আবুল মনসুর ও নুর আহাম্মদ।
অভিযানে সহায়তা করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর মামুন আহমেদ এবং নগর পুলিশের একটি দল।
এ বিষয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘লিংক রোডের পাশে দৃশ্যমান জায়গায় পাহাড় কেটে অবৈধভাবে রাস্তা নির্মাণ করছে একটি চক্র। দ্রুততার সাথে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে।’
‘এক্ষেত্রে কারো ছাড় নেই। পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স। ইতোমধ্যেই যারা পাহাড় কেটেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলার মাধ্যমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জনস্বার্থে জেলা প্রশাসনের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নগরীর বায়েজিদ অংশের সাথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাট অংশকে যুক্ত করতে এই লিংক রোড নির্মাণ করেছে।
এই সড়কটি নির্মাণের সময় বেশকিছু পাহাড় কাটা হয়েছে। এজন্য সিডিএকে জরিমানাও করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। সড়কটি নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকে এর দু’পাশের পাহাড়ে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে উঠছে গত কয়েক বছর ধরে।
সড়কের পাশে দেখা যায় এমন কিছু পাহাড় অপরিবর্তনীয় আছে। ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনাকারী জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সামনের পাহাড়ের ঢাল অটুট রেখে আড়ালে এসব পাহাড়ের উপর ও ভেতরের বেশিরভাগ অংশ কেটে নানা অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে।
