পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত হতে দেওয়া যাবে না

খাগড়াছড়িতে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটল। এবার প্রাণ হারালেন, খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুলের ইন্সট্রাক্টর (বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স) ও বিভাগীয় প্রধান  আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোহেল রানা। দুঃখজনক হলো একই প্রতিষ্ঠানের পাহাড়ি ছাত্রদের বিরুদ্ধে শিক্ষক সোহেল রানাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় দুপুর তিনটা থেকে খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। শহরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অনির্দষ্টিকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।

শিক্ষককে হত্যার ঘটনা জানাজানি হলে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এর প্রতিবাদে বাঙালি শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ভেতর এবং বাইরে উভয়পক্ষে বহিরাগতরা জমায়েত হয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় জড়িয়ে পড়েন। ভাঙচুর করা হয়েছে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিভিন্ন কক্ষ ও আসবাবপত্র। আহত হয়েছেন উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১০ জন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি করলেও পুরো শহরজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

ঘটনার সূত্রপাত অনেক আগের। খাগড়াছড়ি সদর থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল বাতেন মৃধা এ বিষয়ে জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই শিক্ষক সোহেল রানাকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিল পাহাড়ি ছাত্রছাত্রীরা। বেশ কয়েক বছর আগে সোহেল রানার বিরুদ্ধে এক পাহাড়ি ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা হয়েছিল। ওই ছাত্রী আদালতে এসে সাক্ষ্য দেয় তিনি কোন ধর্ষণের শিকার হননি। পাহাড়ি একটি সংগঠনের চাপে মামলা করেছে মর্মে সাক্ষ্য দিলে সোহেল রানা খালাস পান এবং চাকরিতে যোগদান করেন। সোহেল রানা চাকরিতে যোগদানের পর থেকে পাহাড়ি ছাত্ররা তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির নানা অভিযোগ এনে প্রত্যাহার দাবি করে আসছিল। গতকাল ওই শিক্ষক বিদ্যালয় এলে ধর্ষণের অভিযোগ এনে শিক্ষককে হত্যা করা হয়।

১৮ সেপ্টেম্বর ভোরে চোর সন্দেহে খাগড়াছড়িতে মামুন (৩০) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। এরপর অশান্ত হয়ে ওঠে পাহাড়। যার জেরে পরবর্তীতে পার্বত্য চট্টগ্রামের দুই জেলায় (খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি) ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। দুঃখজনক সে ঘটনায় কয়েকজনের মৃত্যুও হয়।

এবারের ঘটনার পর সাধারণ পাহাড়ি-বাঙালিদের অভিযোগ করেছেন, প্রশাসনের উদাসীনতায় দুই সপ্তাহের মাথায় দুইজন মানুষ গণপিটুতে মারা গেলেন। ঘরবাড়ি পোড়া গেলো। ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরুপ প্রভাব বিরাজ করছে। সাজেকসহ অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রও বন্ধ। বন্ধ রয়েছে গাছ-বাঁশ পরিবহনও। এই অবস্থায় বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের দুর্দশা অবর্ণনীয় হয়ে উঠেছে।

আমরা মনে করি প্রশাসনকে আরও বেশি সতর্ক ও সক্রিয় হওয়া উচিত। পিটিয়ে মারার মতো বর্বর ঘটনা বন্ধ হওয়া উচিত সারাদেশেই। দেশবাসী লক্ষ্য করছে, আন্দোলন ও আন্দোলন পরবর্তী সময়ে দেশের বেশকিছু স্থানে পিটিয়ে মারার ঘটনা ঘটেছে, এখনও ঘটছে, যা নতুন এই সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করছে। এটা বন্ধ করতে হবে। পাহাড় বা সমতল কোথাও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলতে দেওয়া যায় না। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে।