আপ্রুমা পার্বত্য অঞ্চলের একটি দুর্গম এলাকায় বসবাস করে তার পরিবারের সাথে। তার প্রথম যেদিন মাসিক হয় সে খুব আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ও মনে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন আসতে থাকে। অজানা ভয় আর লজ্জায় সে বিষয়টি কাউকে বলতে পারে না। মাসিক শুরু হলে সে এটিকে কেমনে সামলাবে বুঝতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়ে। সে ঘরের বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দেয় । এমনকি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরসামনে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। তার এমন লুকোচুরি আচরণর তার মা-র চোখে পড়ে ও তাকে জিজ্ঞেস করে “কীরে মা তোর কী হয়েছে, তুই কেন এমন করছো । সে অজানা ভয়ে মাকেও এড়িয়ে যায়।
আপ্রুমার মত হাজার হাজার কিশোরীর মনে বিরাজ করছে নানা প্রশ্ন, শংকা, ভয় ও আতঙ্ক। বাংলাদেশের সকল জায়গায় এটি একটি চিরাচরিত চিত্র হলেও তিন পার্বত্য জেলায় এই চিত্রটি আরো করুণ। মাসিক সংশ্লিষ্ট এসব শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সাথে এই অঞ্চলে যুক্ত হয়েছে ভৌগোলিক অবস্থা, অপ্রতুল স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বল্পতা, সামাজিকপ্রথা, আদিবাসীদের প্রথাগত ব্যবস্থা, জীবনযাত্রার মান এবং অর্থনৈতিক অবস্থা।
বিভিন্নআদিবাসী সমাজের সামাজিক কাঠামো, প্রথাগত আইন , সামাজিক রীতিনীতি,নিরড়্গতা,অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা, জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাসএবংসামাজিক সংস্কার ইত্যাদির প্রভাবে নারীরা অনেক পিছিয়ে আছে, বঞ্চিত হচ্ছে প্রজনন স্বাস্থ্য সেবায়।
অনুন্নত যোগাযোগ, শিক্ষা সচেতনতার অভাবে তাদের মধ্যে প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে কেনো ধারণাই নেই, এমনকি আদিবাসী অধিকাংশ নারীই জানেন না মাসিক ব্যবস্থাপনা প্রজনন স্বাস্থ্যেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পাহাড়ি এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনেক দূরে দূরে থাকায় আদিবাসী নারী ও কিশোরীরা লেখাপড়ার সুযোগ কম। ফলে গতানুগতিক প্রথাগত ব্যবস্থায় নিজের অধিকার, শরীর ও সিদ্বান্ত নেওয়ার উপর তাদের কোনো প্রকার নিয়ন্ত্রণ থাকে না। সমাজ বা পরিবারের ইচ্ছামতজীবন- যাপন করতেহয়। সমাজেরবিভিন্ন ধ্যান-ধারণা, রীতি-নীতি, কুসংস্কার এবংমতবাদগুলোকে চোখবুঝে মেনে নিতে হয়। মাসিক স্বাস্থ্য এর ব্যাতিক্রম নয়। আদিবাসী নারীরা যে ধারণাগুলো লালনপালন করে আসছে বছরের পর বছর তা হলো মাসিক সময়ে মেয়েটি অশুচি হয়ে যায়, মাসিকচলাকালীন জুমেনাযাওয়া, মন্দিরে না যাওয়া, মাসিক শেষ নাহওয়া পর্যন্ত ঘরের বাইরেনা যাওয়া ইত্যাদি।
মাসিককে ঘিরে বিভিন্ন সমাজেরবিভিন্নধ্যান-ধারণা, রীতি-নীতি, কুসংস্কার এবংমতবাদ প্রজনন স্বাস্থ্যেরও উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে তাদের অজান্তে।
সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে কিছু কিছু মানুষের মধ্যে মাসিকসম্পর্কে জানাশোনা বৃদ্ধি পেলেওবৃহৎপরিসরে এই বিষয়ে সচেতনতাআসা এখনো অনেক দেরি। মাসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি করতে সবচেয়েব ড় ভূমিকাপালন করতে পারে পরিবারের সদস্যরা, এরপাশাপাশি কমিউনিটির পুরুষদেরওএ গিয়েআসতে হবে। বাড়াতেহবে সঠিক তথ্য সরবরাহ , জানতে হবে মাসিক কেনো রোগ নয়, এটি একটি প্রাকৃতিক বিষয়। এটি নিয়ে সকলের খোলামেলা আলোচনা করতেহবে।
রিমি চাকমা
মাস্টার ট্রেইনার, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ
সহযোগিতায়-প্রগ্রেসিভ, টংগ্যা, হিল ফ্লাওয়ার এবং উইভ।