চবি প্রতিনিধি »
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শান্তি ও উন্নয়নের পথে পার্বত্য চট্টগ্রাম’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ‘সশস্ত্র সংঘাত ও তথ্য বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে ছাত্র যুবসমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, শান্তিচুক্তির ফলে এই অঞ্চলের স্থিরতা ও উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। সরকার নৃগোষ্ঠীদের ভাষাকে সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের মাধ্যমে। নৃগোষ্ঠীদের সবধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়ে শিক্ষার সুযোগ করে দিচ্ছে। সংবিধানের ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সব জাতি গোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা করা হয়েছে। তবে বর্তমান সমস্যাগুলোর পেছনে রয়েছে এই অঞ্চলের তথা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল এবং এর সম্পদ। এই সমস্যাকে প্রথমে বুঝতে হবে। এর সমাধান খুঁজতে হবে আন্তর্জাতিক দৃষ্টান্ত থেকে। আমরা দেখেছি সিয়েরা লিওনে, রুয়ান্ডায় এবং নেপালের গৃহযুদ্ধে তাদের ছাত্র ও যুবরা কিভাবে ভূমিকা রেখেছে। তাই পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন সমস্যা- সংকট নিরসনে ছাত্র-যুব সমাজকে ভূমিকা রাখতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা ২টায় চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজের (সিসিআরএসবিডি) উদ্যোগে চবি সিনেট মিলনায়তনে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও সিসিআরএসবিডি’র সদস্য তন্ময়ী হাসানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চবি উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী। ধারণাপত্র প্রদান করেন রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও সিসিআরএসবিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মাহফুজ পারভেজ।
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন মানিকছড়ি মঙ রাজবাড়ির রাজকুমার সুই চিং প্রু, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক।
সিসিআরএসবিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মাহফুজ পারভেজ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করতে হবে। শান্তি একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে চূড়ান্ত করতে হবে। পার্বত্য এলাকার পিছিয়ে পড়া তরুণ সমাজকে আদর্শ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। ইতিহাস ও অধিকার সম্পর্কে তাদেরকে আরও সমৃদ্ধ হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের জ্ঞানভিত্তিক গবেষণার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের অভিমতকে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্ষদে পৌঁছে দিতে হবে।
সিসিআরএসবিডির পরিচালক ও চবি আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন ছিল একটা শান্তিচুক্তি, তা সম্পন্ন করা হয়েছে। মানুষকে মূলধারার উন্নয়নের সঙ্গে একীভূত করতে সেখানে আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হয়েছে। কিছু গ্রুপ বর্তমানে যুব সমাজ এবং ছাত্র সমাজকে বিভিন্নভাবে বিভ্রান্ত করছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তাদের সব ধরনের সুযোগ প্রদান করছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটার মাধ্যমে তাদের শিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছে। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের উন্নয়ন পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে নয় বরং সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে। তাই আমাদের তথ্য-বিভ্রান্তি থেকে সচেতন হয়ে দেশের উন্নয়নে এবং এই অঞ্চলের উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যেতে হবে।
সেমিনারে মানিকছড়ি মং রাজবাড়ির রাজকুমার সুই চিং প্রু বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তির পরিবর্তে বিভিন্ন অশান্তি বিরাজমান। তাই প্রথমে অশান্তির কারণগুলো চিহ্নিত করতে করে সেগুলো সমাধান করতে হবে। ভূমি বিরোধ ও জাতিগত বৈষম্য এবং বিদ্বেষ এই এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রধান অন্তরায়। বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেমন সিয়েরা লিওন ও নেপালের গৃহযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যুবসমাজের ভূমিকা থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ম্রৌ জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ রয়েছে। আমরা চাই এই অঞ্চলের শান্তি এবং উন্নয়ন অব্যাহত থাকুক। এই লক্ষ্যে তরুণ ছাত্র ও যুবসমাজকে তথ্য বিভ্রান্তি থেকে সচেতন থাকতে আহ্বান জানাই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চবি উপ উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে বলেন, তরুণ প্রজন্মকে দেশের সেবার নিয়োজিত থেকে নিজেকে তথ্য বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।