সুপ্রভাত ডেস্ক »
‘প্রগতিবিরোধী অপশক্তি’ সরকারের বিরুদ্ধে আর কিছু না পেয়ে নতুন পাঠ্যপুস্তক নিয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক অপপ্রচার এবং মিথ্যাচার চলছে। বলা হচ্ছে যে, আমাদের নতুন বইয়ে ইসলাম ধর্ম বিরোধী বিষয় আছে। একেবারেই অসত্য। বলা হচ্ছে, ইসলাম ধর্ম সংক্রান্ত জিনিসপত্র সব সরিয়ে দিয়ে ভিন্ন ধর্মী জিনিসপত্র আনা হয়েছে। একেবারে অসত্য।’
‘এমনকি প্রথম শ্রেণির একটি বর্ণ পরিচয়ের বই দিয়ে বলা হচ্ছে, এটি আমাদের বই। এটি আমাদের বই নয়। পশ্চিমবঙ্গের কোনো একটি বই, যেটি পশ্চিমবঙ্গেও এখন চলে না। সেই বইয়ের ছবি দিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’
শনিবার চট্টগ্রাম নগরীর আরেফিন নগরে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে (এইউডব্লিউ) ডিগ্রি প্রদান (কমান্সম্যান্ট) অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। খবর বিডিনিউজের।
দীপু মনি বলেন, ‘জনগণকে বুঝতে হবে, জানতে হবে যে- একটা অপশক্তি আছে, যারা এই মিথ্যাচার চালিয়ে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে শুধু প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় না, আমাদের দেশের স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করতে চায়। আর যেখানেই কোনো বিষয় আছে- যেটা নিয়ে কারো অস্বস্তি থাকে, কারো আপত্তি থাকে, আমাদেরকে জানাবেন। আমরা সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’
‘কোথাও ধর্মবিরোধী কোনও কিছু থাকার সুযোগই নেই। তার কারণ হচ্ছে আমরা নৈতিকতার শিক্ষায় বিশ্বাস করি। এবং ধর্মীয় শিক্ষা সেই নৈতিকতার শিক্ষার একটি মূল স্তম্ভ।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘যখনই কোথাও দেখবেন, প্রথমে সেই শ্রেণির বই নিয়ে সত্যতা যাচাই করে নিবেন। সত্যতা যাচাই করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার, কমেন্ট দেবেন। অসত্য বিষয় প্রচার করা কিন্তু অপরাধ।’
‘আমরা সবাই জানি যারা অপপ্রচার করছে তারা কারা। তারা এদেশের স্বাধীনতা বিরোধী, উন্নয়ন বিরোধী, গণতন্ত্র বিরোধী, প্রগতিবিরোধী। তারা আমাদের নারী অধিকার বিরোধী। এই অপশক্তি সরকার বিরোধী আর কিছু খুঁজে না পেয়ে নতুন শিক্ষাক্রমের উপর চড়াও হয়েছেন।’
অপপ্রচারকারীদের সম্পর্কে দীপু মনি বলেন, ‘তাদের আপনারা সবাই চিনেন। তারা মিথ্যাচার করে শুধু আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নষ্ট করতে চায় না, দেশের স্থিতিশীল পরিবেশটাকেও নষ্ট করতে চায়।’
পাঠ্যপুস্তকে ভুলের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমি খুব কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি যারা এ ভুলগুলো শনাক্ত করেছেন। আমাদের নবম-দশম শ্রেণির তিনটি বইয়ে কিছু ভুল শনাক্ত হয়েছে। একটি তো একেবারে খুব বড় তথ্যগত ভুল বঙ্গবন্ধুর শপথ গ্রহণ বিষয়ে।’
‘আর বাকিগুলো… খুব মজার ব্যাপার হলো ২০১৩ সাল থেকে প্রত্যেক বছরের বইতে ছিল, কিন্তু কখনো কারো চোখে পড়েনি। আমি শিক্ষা পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই যে, এবছর সবাই আমাদের শিক্ষার্থীদের বইগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন।’
পাঠ্যবইয়ের প্রতি এই মনোযোগ পাঠ্যবইয়ের মান আরও উন্নত করতে সহযোগিতা করবে বলে মনে করেন তিনি।
দীপু মনি বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমের বই ষষ্ঠ, সপ্তম ও প্রথম শ্রেণিতে পরীক্ষামূলক সংস্করণ। গত বছর ৬২টি প্রতিষ্ঠানে পাইলটিং করেছি। কিন্তু এ বছর ৩৩ হাজার প্রতিষ্ঠানে এই বইগুলো যাচ্ছে। পুরো বছর শিক্ষার্থী শিক্ষক অভিভাবক শিক্ষাবিদ সবার কাছ থেকে ফিডব্যাগ নেব। এবং বইগুলো ক্রমাগত পরিমার্জন পরিশীলন করবে।’
‘এরমধ্যে যদি তথ্যগত ভুল কোথাও থাকে। কারো যদি কোনো বিষয়বস্তু-ছবি আপত্তিকর মনে হয়। এমনকি অস্বস্তি থাকে। আমরা অনুরোধ করব, আমাদেরকে জানাবেন। এবং আমরা সেই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে আমাদের এই বইয়ের পরবর্তী সংস্করণ করব।’
প্রাথমিকের বই নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘গত বছর কাগজের বিশাল সংকট ছিল। সকলের সহযোগিতায় জানুয়ারির ১ তারিখের মধ্যে ৮০ ভাগ পৌঁছে দিতে পেরেছি। আমরা যেটা নিশ্চিত করেছি সেটা হলো, প্রতিটি উপজেলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রত্যেক শিক্ষার্থী বই পেয়েছে।’
‘যার ৫টি পাওয়ার কথা- সে ৩টি বা ৪টি পেয়েছে। যার ১০টি পাওয়ার কথা- সে ৬টি বা ৭টি পেয়েছে। বাকি যে বইগুলো এ মাসের মধ্যে প্রত্যেকটি বই প্রত্যেক শিক্ষার্থীর আছে পৌঁছে যাবে।’
অনুষ্ঠানে এইউডব্লিউ’র ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ এই তিন শিক্ষাবর্ষের ১৯টি দেশের ৩০০ শিক্ষার্থীকে স্মাতক ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী সাদিকা বেগম।
সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে এইউডব্লিউর আচার্য যুক্তরাজ্যের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী শেরি ব্লেয়ার, ডেনমার্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পল নাইরুপ রাসমুসেন, এইউডব্লিউর উপাচার্য ড. রুবানা হক, সমাবর্তন বক্তা নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস জন সেক্সটন, এইউডব্লিউর প্রতিষ্ঠাতা কামাল আহমেদ, সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মায়ারা, এইউডব্লিউর আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস অনুষদের ডিন ড. বীনা খোরানা বক্তব্য রাখেন।