শান্তি রঞ্জন চাকমা, রাঙ্গুনিয়া »
সবুজ পাহাড়ঘেরা মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত শেখ রাসেল এভিয়ারি অ্যান্ড ইকো পার্ক ও বিজিবি’র পরিচালিত জুম রেস্তোরাঁ। প্রতিদিন হাজার হাজার টুরিস্টের আগমনে পর্যটন এলাকাগুলো পুরোদমে জমে উঠেছে। বিনোদন কেন্দ্রগুলো আধুকিায়ন ও আকর্ষণীয়ভাবে সাজানো হয়েছে। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ও বাড়তি আনন্দ দিতে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক সোনিয়া ও রুবেল বলেন, পাহাড়, নদী, ঝরনা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসছে পর্যটকরা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কাপ্তাই এ ওয়া¹া বিজিবি’র পরিচালিত জুম রেস্তোরাঁ। এখানে প্রকৃতি অকৃত্রিমভাবে দুহাত মেলে দিয়েছে। জুম রেস্তোরাঁ বিনোদন কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়েছে নয়নাভিরাম সৌন্দর্যমণ্ডিত প্রকৃতির এক ছায়া নিবিড় পরিবেশে। লুসাই পাহাড় থেকে নেমে আসা চপলা-চঞ্চলা পাহাড়িয়া উর্বশী কর্ণফুলী নদীর একেবারে কোলঘেঁষে এর অবস্থান।
রাঙ্গুনিয়া শেখ রাসেল এভিয়ারি অ্যান্ড ইকো পার্কের ফরেস্টার মো. হাসিবুর রহমান বলেন, নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা ইকো পার্কে পর্যটকরা অনায়াসে যাতে ভ্রমণ করতে পারেন সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
পার্কে রয়েছে সবুজ জলরাশির কৃত্রিম লেক, আড়াই কিলোমিটার ক্যাবল কার, দেশি-বিদেশি পাখির অভয়ারণ্য, মিনি চিড়িয়াখানাসহ বিভিন্ন বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া পার্কে সড়ক, কৃত্রিম লেক, রিটার্নিং ওয়াল, গেস্ট হাউজ, ফুট ব্রিজ, গুহা, পাখি, ময়ূর ও হরিণসহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি পাখী বিচরণের খাঁচা, অ্যামিউজমেন্ট, গোলঘর, দোলনা, স্নিপিংসহ নির্মাণ করা হয়েছে মনোরম পিকনিক স্পট।
বান্দরবান থেকে বেড়াতে আসা নব দম্পতি রাজু ও জেসমিন বলেন, সবুজ পাহাড়ের কোলে গড়ে উঠা হ্রদে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মিলনমেলা। সবুজ পাহাড়ে বনে ঘুরে বেড়াচ্ছে শতশত পাখি। পাখিদের কিচির মিছির শব্দে মুখরিত পুরো এলাকা।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক জয়া আহসান বলেন, নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরা প্রকৃতির কোলে নিজেকে কিছু সময়ের জন্য সঁপে দিতে চায়। এতে মনের একঘেঁেয়মি, না পাওয়ার বেদনা কিছুটা হালকা হয়। জুম রেস্তোরাঁ পাহাড় ও নদীর সমন্বয়ে গড়া এক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আধার। এর অপর পাড়েই রয়েছে সবুজের বিপুল সমাহার বিশাল এক চা বাগান। চা বাগানটি সারিবদ্ধভাবে সজ্জিত হয়ে ক্রমান্বয়ে উঠে গেছে দুরতিক্রম্য পর্বত সীতা পাহাড়ের গায়ে। সীতার পাহাড় প্রসারিত দিগন্তব্যাপী। এ পাহাড়টি মূলত অসংখ্য ছোট বড় পাহাড়ের সমাহার।
জুম রেস্তোরাঁর অবস্থানস্থল থেকে পাহাড়ি কর্ণফুলী নদী সামান্য বেঁকে চলে গেছে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র অভিমুখে। নৌকাযোগে কাপ্তাই যেতে যেতে প্রকৃতির অপরূপ যে দৃশ্য নজরে পড়বে তা ভাষায় বর্নণা করা কঠিন। নদীর দক্ষিণপাশ ঘেঁষে সবুজ বেষ্টনী সম্পন্ন সীতার পাহাড় দিগন্তরেখা পর্যন্ত ছড়িয়ে রেখেছে। মনভোলা প্রকৃতির উত্তরে রয়েছে ছায়াঘেরা পর্বত ”রামপাহাড়”। পাহাড় দুটি ছাড়াও উপভোগ করা যায় নয়নাভিরাম প্রকৃতির অনুপম সৌন্দর্য। এ সময় চা, হালকা নাস্তা ও ঠান্ডা পানীয় গ্রহণ করতে পারেন। আর এসব সরবরাহ করবে জুম রেস্তোরাঁর সেলসম্যান। এদের সকলেই পার্শ্ববর্তী ওয়া¹া বিজিবি হেডকোয়ার্টারের সদস্য অথবা তাদের নিয়োজিত বয়-বেয়ারার। বলাবাহুল্য, ওয়া¹া জোন বিজিবি হেড কোয়ার্টার কর্তৃপক্ষের তত্বাবধানে জুম রেস্তোঁরা পরিচালিত হয়।
কাপ্তাইয়ে বেড়াতে এসে জুম রেস্তোরাঁ ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি বিনোদন স্পটে ঘুরে যেতে পারেন। এগুলো হলো- কাপ্তাই হ্রদ, লেকভিউ পার্ক, শহীদ মোয়াজ্জেম নৌঘাঁটি, জীবতলী পর্যটন স্পট, বিএফআইডিসি পিকনিক স্পট, প্রশান্তি, পাহাড়িকা, বনশ্রী, কর্ণফুলী পেপার মিল, কেপিএম জামে মসজিদ ও চিৎমরম বৌদ্ধ মন্দির।