দেশে পরিবেশবান্ধব কারখানা বাড়ছে, এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি ইতিবাচক এবং তা আন্তর্জাতিক সনদও লাভ করছে নিয়মিত। সারা বিশ্বের বেশকিছু প্রতিষ্ঠান পরিবেশÑবান্ধব কারখানাকে সনদ দিয়ে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) তারমধ্যে একটি, তারা লিড নামে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। লিড অর্থ লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন। তৈরি পোশাক শিল্পের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে, বাংলাদেশের ১৪৪টি স্থাপনা লিড সনদ পেয়েছে, এর মধ্যে পোশাক ও বস্ত্রখাতের কারখানা ১২৫টি, এর বাইরে আছে কয়েকটি শিপইয়ার্ড, জুতো ও ইলেক্ট্রিক্যাল পণ্য নির্মাণ কারখানা। সনদ পেতে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। পরিবেশবান্ধব কারখানার সংখ্যার নিরিখে অন্য প্রতিযোগী দেশগুলির চাইতে বাংলাদেশ এগিয়ে মর্মে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে। নির্মাণাধীন পরিবেশবান্ধব কারখানার সংখ্যা প্রায় ৫শত।
রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দেশের পোশাকশিল্প ও অন্যান্য কারখানার নিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশ ভাবমূর্তির সংকটে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ক্রেতা দেশগুলির দুটি জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স সরকার এবং বিজিএমইএ’র সহযোগিতায় দেশের পোশাক কারখানাগুলি নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব করতে কাজ শুরু করে। তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারাও পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনে আগ্রহী হয়ে ওঠে। প্রথমে স্থাপনা নির্মাণে খরচ তুলনামূলকভাবে কিছু বেশি পড়লেও, এ ধরনের কারখানায় ২৪-৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ, ৩৩-৩৯ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ ও ৪০ শতাংশ পানির ব্যবহার কম হয়, ফলে প্রাতিষ্ঠানিক খরচ কমে আসে। কর্মপরিবেশের উন্নতির কারণে উৎপাদনশীলতা বাড়ে। আমাদের দেশে কারখানায় প্রায়ই নানা দুর্ঘটনা ঘটে। বিপুলসংখ্যক কর্মজীবী মানুষের মৃত্যু হয়, অনেকে চিরজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যান। দুর্ঘটনার মধ্যে বিদ্যুৎ, গ্যাস, বয়লার বিস্ফোরণ, অগ্নিকা- অন্যতম। কর্মপরিবেশের উন্নতি না হলে উৎপাদন বাড়ে না, নানা ধরণের বিপত্তি, শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে কারখানা কর্তৃপক্ষ, সরকার, ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বিশেষ ভূমিকা নিতে হবে। কারখানা পরিদর্শন ও নজরদারি নিয়মিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। এ ক্ষেত্রে জেলা পর্যায়ে এর দফতর খোলা এবং জনবল বাড়ানো প্রয়োজন।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প করোনাকালীন সংকট ক্রমশ কাটিয়ে উঠছে। এক সময় ক্রয়াদেশ বাতিল হলেও এখন পুনরায় অর্ডার আসতে শুরু করেছে। রফতানিও বেড়েছে। চট্টগ্রামের পোশাক কারখানা দুর্দিন কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে মর্মে পত্রিকান্তরে জানা গেছে। চট্টগ্রামের পোশাক শিল্পের জন্য বিশেষ অঞ্চল তৈরি করা গেলে পরিবেশÑবান্ধব কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব হতে পারে।
দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ এবং নিরাপত্তা বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে, দুর্ঘটনা কমে এসেছে, তবে অন্যান্য খাতের কারখানায় কর্মপরিবেশ, নিরাপত্তা আশানুরূপ নয়। দেশে যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে সেখানে পরিবেশÑবান্ধব কারখানা গড়ে তুলতে উদ্যোক্তাদের উৎসাহী করে তুলতে হবে। দেশিÑবিদেশি বিনিয়োগ অনেকাংশে নির্ভর করবে অবকাঠামোগত সকল সুবিধা প্রাপ্তির ওপর। পরিবেশÑবান্ধব কারখানা স্থাপনে যে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলেছে তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা চাই।
মতামত সম্পাদকীয়