সন্ত্রাস ও খুন খারাবিমুক্ত পরিচ্ছন্ন নগর চাই: নওফেল
দায়িত্ব নিয়ে বিভাগীয় প্রধানদের সাথে বৈঠক করলেন মেয়র
নিজস্ব প্রতিবেদক :
‘চট্টগ্রাম শুধু মেয়রের নয়, চট্টগ্রামবাসীর সবার। তাই সকলের সম্মিলিত উদ্যোগে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের মডেল শহরে রূপ নিবে চট্টগ্রাম।’ গতকাল সোমবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সুধী সমাবেশে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী একথা বলেন। এই সুধী সমাবেশ শেষেই তিনি টাইগারপাসে সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়ে গিয়ে মেয়রের চেয়ারে বসেন এবং দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু করেন।
মন্ত্রী, হুইপ, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন সেবা ও উন্নয়ন সংস্থার প্রধান এবং রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সুধী সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এই শহর আমার, আপনার সবার। কোনো ব্যক্তি এককভাবে কিছু করলে ভুল হতে পারে, তাই সবার পরামর্শ নিয়ে করলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তাই সবার সাথে পরামর্শ করে চট্টগ্রামকে চালাতে চাই। যে পরামর্শ চট্টগ্রামের জন্য মঙ্গলজনক হবে সেটাই গ্রহণ করা হবে। তাই ভালো-মন্দের অংশীদার সবাই।
রেজাউল করিম বলেন, আমি বিশেষ কেউ নই। আপনাদের প্রতিনিধিমাত্র। চট্টগ্রামকে এগিয়ে নিতে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যগণের সহযোগিতা প্রয়োজন। এই শহরের সব সেবা ও উন্নয়ন সংস্থার প্রধানদের সহযোগিতা প্রয়োজন এবং সর্বোপরি নাগরিকদের সহযোগিতা প্রয়োজন। সকলের সহযোগিতায় আমি চট্টগ্রামকে একটি পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
‘মশক নিধন, পরিচ্ছন্ন নগর নির্মাণ, বর্জ্য অব্যবস্থাপনাকে শৃঙ্খলায় আনা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে উন্নত সেবা দিতে দায়িত্ব গ্রহণ করলাম’ উল্লেখ করে রেজাউল করিম বলেন, আগামী ১০০ দিনের মধ্যে এই নগরের সব রাস্তাঘাট মেরামত হয়ে যাবে তা ভাবা যাবে না। তবে আমরা চেষ্টা করবো। উৎপাত বেড়ে যাওয়া মশা নিয়ন্ত্রণ করতে কাজ শুরু করা হবে।
জলাবদ্ধতামুক্ত চট্টগ্রাম গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছয় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প উপহার দিয়েছেন উল্লেখ করে রেজাউল করিম বলেন, এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমে যাবে।
চট্টগ্রামের নালা ও খাল থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হবে উল্লেখ করে রেজাউল করিম বলেন, যতো প্রভাবশালী হউক না কেন নালা ও খালের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। আমি কোনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবো না এবং বিত্ত বৈভবের কাছেও নয়। অর্থের প্রতি আমার বিন্দুমাত্র লোভ নেই।
আগামী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হবে উল্লেখ করে রেজাউল করিম বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, তাই আগামী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস উপস্থাপন করতে কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করবো।
সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহীবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে এপর্যন্ত দুই জন মুক্তিযোদ্ধা মেয়রের পদে আসীন হলেন। একজন আমার বাবা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং দ্বিতীয় জন আজ দায়িত্ব নিচ্ছেন রেজাউল করিম চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীতে এবং বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষে একজন মুক্তিযোদ্ধা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের চেয়ারে বসছেন এটি অবশ্যই গৌরবের।
নওফেল বলেন, রেজাউল করিম আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন সবার সাথে কথা বলে এবং পরামর্শ নিয়ে কাজ করতে চান। উনি উনার কথা রেখেছেন। আজ মেয়রের চেয়ারে বসার আগে সুধী সমাবেশের মাধ্যমে সকলের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন। এই সমাবেশের মাধ্যমে তিনি সৃষ্টিশীল রাজনীতির পরিচয় দিয়েছেন।
সন্ত্রাস ও দুর্নীতি আমরা চাই না উল্লেখ করে নওফেল বলেন, আমরা শান্তিতে থাকতে চাই। সন্ত্রাস ও খুন খারাবিমুক্ত পরিচ্ছন্ন নগর চাই।
জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী রেজাউল করিম চৌধুরীকে বুদ্ধিমান ও কৌশলী উল্লেখ করে বলেন, তিনি সফল হবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা। একইসাথে উন্নয়নকাজে মহিলা কাউন্সিলরদেরও যুক্ত করা প্রয়োজন।
রেজাউল করিম চৌধুরীর সুধী সমাবেশকে স্বাগত জানিয়ে সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘অনেকে চেয়ারে বসে আমাদের ভুলে যায়। আমার মামা আবদুচ ছালাম সিডিএ চেয়ারম্যানের দায়িত্বে বসে কখনো আমাদের কাছ থেকে পরামর্শ নেননি। অপ্রয়োজনীয় ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছেন। বিপরীতে খোরশেদ আলম সুজন ৬ মাসের জন্য দায়িত্ব পেয়ে সকলের সাথে কথা বলে কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। রেজাউল করিমও যথাযথভাবে এই দায়িত্ব পালন করবেন।’
সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, নতুন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ত্যাগী রাজনীতিক। আমার প্রত্যাশা চট্টগ্রামের স্বার্থে ও উন্নয়নের তাগিদে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্যদের মাঝে মাঝে ডেকে আলাপ-পরামর্শ করবেন। তিনি বলেন, মহেশখাল ও চাক্তাই খাল খননের পর দুই খালে ওয়াটারবাস চালু করা যেতে পারে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে সদ্য বিদায়ী প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, নগরীর অধিবাসীদের মধ্যে মাত্র ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষ এই শহরের উপকারভোগী। বাকি ৮০ থেকে ৭০ শতাংশ সুবিধা নিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর, রেলওয়ে, কাস্টমস, ওয়াসাসহ অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক বীমা স্টিল রিরোলিং মিলসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রামের এসব সুবিধাভোগী সংস্থার কাছ থেকে সারচার্জ আদায় করতে হবে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম, চসিকের প্রধান নির্বাহী কাজী মুহাম্মদ মোজম্মেল হক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ারুল আজিম আরিফ, ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ ছালাম, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ডা. শেখ শফিউল আজম, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সভাপতি প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন, নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের মধ্যে সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের সভাপতি প্রকৌশলী মোহাম্মদ হারুন, চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রদীপ চক্রবর্ত্তী, চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এর উপাচার্য ড. রফিকুল আলম, জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দীন বাবুল, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, মুক্তিযোদ্ধা মহানগর কমান্ডার মোজাফফর আহাম্মেদ এবং ১৪ দল নেতা ইন্দু নন্দন দত্ত।
মেয়রের চেয়ারে বসলেন রেজাউল করিম
সুধী সমাবেশ শেষে বিকেল তিনটায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী টাইগারপাসে চসিকের অস্থায়ী অফিসে গিয়ে কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হকের কাছ থেকে কর্পোরেশনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দায়িত্বভার গ্রহণের পরই কনফারেন্স রুমে চসিকের বিভাগীয় প্রধানদের সাথে সভায় বসেন নতুন মেয়র। সভায় কর্পোরেশনের সকল বিভাগীয় প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন। এসময় মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীলতার সাথে তাদের দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার আহ্বান জানান. যাতে নাগরিকসেবা কার্যক্রম নগরবাসীর দোরগোড়ায় দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব হয়।