নিজস্ব প্রতিবেদক :
হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রজনী শবেকদর বুধবার দিবাগত রাতে। শবেকদর অর্থ সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ রাত। বছরের যে ক’টি দিন ও রাত বিশেষভাবে মহিমান্বিত, তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম ও ফজিলতপূর্ণ এ শবেকদর।
অসংখ্য হাদিসে শবেকদরের ফজিলত ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে। মূলত এ রাতে পবিত্র কুরআন মজিদ নাযিল হয়েছে বলেই এ রাতের এই মর্যাদা। আর এ রাতের কারণেই পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
পবিত্র এ রজনীর গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি এ কুরআনকে কদরের রাতে নাজিল করেছি। তুমি কি জানো কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাস থেকেও উত্তম ও কল্যাণময়’ (সূরা আল কদর : ১-৩)। এই রাত কোন মাসে ? এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘রমযান এমন মাস যাতে কুরআন নাজিল হয়েছে’ (সূরা বাকারা : ১৮৫)।
এই রাত রমজানের কোন তারিখে? রাসূলুল্লাহ (সা.) রহস্যময় কারণে তারিখটি সুনির্দিষ্ট করেননি। ইমাম বুখারি, ইমাম মুসলিম, ইমাম আহমদ ও ইমাম তিরমিজি কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে- হজরত আয়েশা রা: বর্ণনা করেছেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘কদরের রাতকে রমযানের শেষ দশ রাতের কোন বেজোড় রাতে খোঁজ করো।’
রাসূলুল্লাহ (সা.) পুরো রমজান, বিশেষত রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদরের অন্বেষায় ব্যাকুল হয়ে উঠতেন। পরিবার-পরিজন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও লাইলাতুল কদর তালাশ করতে বলতেন।
কোনো কোনো ইসলামী মনীষী গবেষণা, গাণিতিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে রমজানের ২৭ তারিখের রাতে (অর্থাৎ ২৬ রোজার দিবাগত রাতে) শবে কদর হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা জোর দিয়ে বলেছেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) এটাকে সুনির্দিষ্ট করেননি; বরং কষ্ট করে খুঁজে নিতে বলেছেন।
নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান সহকারে ও আল্লাহর কাছ থেকে বড় শুভ ফল লাভের আশায় ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে, তার পেছনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে’ (বুখারি ও মুসলিম)। এ রাতের কল্যাণ থেকে একমাত্র হতভাগ্য লোক ছাড়া আর কেউ বঞ্চিত হয় না (ইবনে মাজাহ ও মিশকাত)।
রাসূল (সা.) রমযানের শেষ দশ দিন মসজিদে ইতেকাফে থাকতেন এবং ইবাদতে গভীর মনোনিবেশ করতেন।
রাসূল (সা.) বলেন- ‘যে ব্যক্তি এ রাত থেকে বঞ্চিত হবে সে সমগ্র কল্যাণ ও বরকত থেকে বঞ্চিত হবে। এর কল্যাণ থেকে একমাত্র হতভাগ্য লোক ছাড়া আর কেউ বঞ্চিত হয় না’ (মিশকাত)।
তাৎপর্যপূর্ণ এই রাতে বিশেষ বরকত হাসিলের মানসে সমগ্র বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায় রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আসকার, মিলাদ-মাহফিল, কোরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ আদায় ও নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং প্রয়াত স্বজনদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও শেষ রাতে প্রিয়জনদের কবর জিয়ারত করেন।
এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে পবিত্র শবেকদর উপলক্ষে বুধবার চট্টগ্রামের জাতীয় মসজিদ জমিয়তুল ফালাহ ও আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদসহ নগরীর বিভিন্ন মসজিদে সংক্ষিপ্ত পরিসরে মিলাদ মাহফিল, জিকির-আসকার ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ