সুপ্রভাত ডেস্ক »
পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ২২ বছরের চুক্তি হয়েছে, যা সৌদি আরবের সঙ্গে টেকসই অংশীদারত্বের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টার্মিনালটি উদ্বোধনের তিন সপ্তাহ পর বুধবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালের মধ্যে চুক্তি সই হল। এটাই চট্টগ্রাম বন্দরের প্রথম টার্মিনাল, যেটি কোনো বিদেশি অপারেটর পরিচালনা করবে।
চুক্তির স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ প্রকল্পটি বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে একটি শক্তিশালী ও টেকসই অংশীদারত্বের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এই কনসেশন চুক্তি অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সমৃদ্ধির জন্য আমাদের দুই দেশের যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি এবং অটল অঙ্গীকারের উদাহরণ। এটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্র আরও জোরদার করবে।
‘পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল প্রকল্পটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের আশার বাতিঘর। স্বয়ংসম্পূর্ণ এই আধুনিক টার্মিনালটি আমাদের বন্দরের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করবে এবং নিরবচ্ছিন্ন বাণিজ্য সহজতর করার পাশাপাশি কর্মসংস্থান ও নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির পথও সুগম করবে। এটি বিশ্ব বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করবে এবং আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের নতুন সুযোগ উন্মুক্ত করবে।’
সৌদি সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারপ্রধান বলেন, ‘আরএসজিটিআই আগামী ২২ বছরের জন্য পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালটি পরিচালনা করবে। আরএসজিটিআই যে সুনামের সঙ্গে জেদ্দা পোর্ট টার্মিনালসহ অন্যান্য টার্মিনাল পরিচালনা করছে, সেই দক্ষতা ও প্রযুক্তিজ্ঞান কাজে লাগিয়ে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালটি পরিচালনা করবে বলে আমি আশা করি।
‘এতে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত হবে। ফলে দেশের আমদানি-রপ্তানি ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাসের মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতি লাভবান হবে।’
১৪ নভেম্বর এ টার্মিনাল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৭ সালে কাজ শুরু হওয়া এ কন্টেইনার টার্মিনালে চারটি জেটি রয়েছে। এর তিনটি কন্টেইনার জেটি এবং অপরটি ডলফিন জেটি। নতুন এ টার্মিনাল অপারেশনাল কার্যক্রমে এলে চট্টগ্রাম বন্দরে জেটির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ২১টিতে।
মোহনার অদূরে নগরীর ড্রাইডক ও চট্টগ্রাম বোট ক্লাবের মাঝামাঝি স্থানে কর্ণফুলী নদীর তীরে এক হাজার ২২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে টার্মিনালটি নির্মাণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর।
৫৮৪ মিটার লম্বা তিনটি জেটিতে একসঙ্গে তিনটি কন্টেইনার জাহাজ ভেড়ানো যাবে। এছাড়া অপর জেটিতে তেল খালাসের জন্য অপর একটি জাহাজ ভেড়ানো যাবে। জেটিটি পুরোপুরি চালু হলে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বাড়বে এবং কিছুটা বড় জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারবে। এ টার্মিনালে বছরে প্রায় পাঁচ লাখ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সম্ভব।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বয়ংসম্পূর্ণ এই টার্মিনাল আমাদের বন্দরের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করবে। সেই সঙ্গে বাণিজ্যের পথ সুগম হবে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য না, আশপাশের বিভিন্ন দেশ তাদেরও ব্যবসা-বাণিজ্যের একটা সুযোগ করে দেবে।
‘বিশ্ব বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করবে এবং আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন সুযোগ উন্মুক্ত করবে। সৌদি আরব বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নের অংশীদার। বাংলাদেশের জনগণের এ দেশটির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও আস্থা রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহায়েল এবং রেড সি গেট টার্মিনালের চেয়ারম্যান আলী রেজা চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো ওমর ফারুক জানান, চুক্তি সইয়ের পর সৌদি আরবের বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ আল ফালি ও তাদের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা এবং প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান টার্মিনাল পরিদর্শনে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হন।