নিজস্ব প্রতিবেদক »
সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে চলছে ‘কারসাজি’। এছাড়া গত এক মাস ধরে আমদানি ও উৎপাদন সংকটের দোহায় দিয়ে আদা, রসুন, ডিম ও মুরগির বাজারে চলছে অস্থিরতা। কিন্তু কি কারণে প্রতিনিয়ত নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলছে তার সঠিক তথ্য ব্যবসায়ীদের জানা নেই। ইতিমধ্যে বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার ও বিএসটিআই অভিযান চালালেও আরও তদারকির প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভায় এসব বিষয় উঠে আসে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এ সভার আয়োজন করে।
সভায় জেলা প্রশাসক বলেন, ‘রমজানে নিত্যপণ্য নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি করতে দেয়া হবে না। সেজন্য আমদানিকারক ও উৎপাদককে তাদের পণ্যের সরবরাহের দৈনিক তথ্য জেলা প্রশাসনকে প্রদান করতে হবে। এছাড়া ম্যাজিস্ট্রেটরা এগুলো মাঠ পর্যায়ে যাচাই করবে। ভ্রাম্যমাণ মোবাইল কোর্টের চলমান কার্যক্রম আরও জোরদার করে চট্টগ্রামে অনিরাপদ খাদ্যের বিপণন বন্ধ, স্বাস্থ্য সেবার ভোগান্তি ও নিত্যপণ্যের অতিরিক্ত মূল্য আদায়ের মতো ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে।’
পলিথিনের ব্যবহার বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পরিবেশ বিধ্বংসী পলিথিনের বিরুদ্ধেও সর্বাত্মক সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট জোরদার করা হয়েছে। নগরবাসীর যে কোন ভোগান্তি নিরসনে মোবাইল কোর্ট সার্বক্ষণিকভাবে সচল থাকছে। তাছাড়া ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘন বা যে কোন নাগরিক ভোগান্তি নিরসনে একটি হটলাইন চালু করা হবে।’
সভায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, ‘বাজারগুলো নিয়মিত তদারকি করছি। তাছাড়া বিভিন্ন বাজারের কমিটি ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা এবং ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে আমরা আরও কঠোর হবো। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিএসটিআইএর উপ পরিচালক (মেট্রোলজি উইং) মো. মাজহারুল হক বলেন, ‘রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও নকল বিএসটিআই ব্যবহৃত ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করতে জেলা প্রশাসনের সাথে আমরা আজকেও (মঙ্গলবার) আলোচনা করেছি। জেলা প্রশাসন যেসব অভিযান পরিচালনা করবেন তার সাথে আমরাও সহযোগী হিসেবে কাজ করছি।’
ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘আগে নিত্যপণ্যের দাম রমজানে বাড়লেও এখন প্রতিদিনই কোনো না কোন ইস্যু দাঁড় করিয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে। এবার রমজান আসার অনেক আগেই ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে অভিনব কৌশল নিয়েছেন। রমজানে যেন বাজার সহনীয় পর্যায়ে রাখা হয় তার জন্য আমরা জেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করেছি। এতে বাজার তদারকিতে ৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব প্রদান, একটি হটলাইন চালু, মোবাইল কোর্টে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সময়কাল বাড়ানো, অবৈধ পানি, ঘি, বেকারি, মুড়ির ফ্যাক্টরিগুলিতে অভিযান জোরদার করা, পাইকারি ও খুচরা বাজারে বিক্রি রশিদ প্রদান ও দর যাচাই করা, কাপড়ের দোকানে মূল্য তালিকা লাগানো, ওজনে কম দেয়া রোধে বিএসটিআইয়ের ভ্রাম্যমাণ স্কেল দিয়ে ওজন পরিমাপক ব্যবহার ও মোবাইল কোর্টে দোকানের কর্মচারীর পরিবর্তে মালিককে শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে।’
অন্যদিকে এবারের রমজানে চাকতাই-খাতুনগঞ্জের বাজারে তেমন পণ্যের দাম বাড়বে না বলে আশাব্যক্ত করেন ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা।
বাজারের নিত্যপণ্যের দামবৃদ্ধি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের আড়তদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম মহিউদ্দিন বলেন, ‘এবারে বেশকিছু এলসি হয়েছে। পর্যাপ্ত মালও আসবে। এবার নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে বলে মনে করছি না। তবে ডলারের সংকট যদি দেখা যায় তাহলে পরিস্থিতি একটু ব্যতিক্রম হতে পারে।’
চাকতাই ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফোরকান বলেন, ‘এবার বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজ আছে। অনান্যবারের মতো তেমন সংকট সৃষ্টি হবে না। দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই।’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নগরীতে জানুয়ারি মাসে খাদ্যে ভেজাল আইনে ৩৯টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৬৭টি মামলায় ১৫ লাখ ৮৭ হাজার টাকা, ওষুধ আইনে ৫টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ২৩টি মামলায় ২ লাখ ২৩ হাজার টাকা, হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট আইনে ৭টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১টি মামলায় ২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। আগামী মাসগুলোতে নিত্যপণ্য নিয়ে কারসাজি ও অনিরাপদ খাদ্যের বিপণন বন্ধ করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জমান।